সবার জন্য শিক্ষা এই স্লোগান স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে। দেশ স্বাধীন হবার পর দীর্ঘ ৫৩ বছর পার হলেও দেশে সর্বস্তরের মানব সন্তানদের জন্য সমতার ভিত্তিতে শিক্ষাকে সার্বজনীন করা হয়নি। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ করা হলেও শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশে হাজার হাজার এবতেদায়ী মাদরাসা এমপিওভূক্ত করা হয়নি। দেশের প্রায় অর্ধেক শিশু এবতেদায়ী মাদরাসাগুলোতে শিক্ষা গ্রহণ করে। বর্তমান সরকার ১৫১৯টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসাকে এমপিও ভুক্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এবতেদায়ী মাদরাসাগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষাও অর্জন করে থাকে শিক্ষার্থীরা। যার ফলে কোমলমতি শিশুরা এবতেদায়ি মাদ্রাসা সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার সাথে যুক্ত হতে পারবে। ফলে আগামি প্রজন্ম নৈতিক শিক্ষার পাঠ নিতে পারবে। সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় এতদিন এবতেদায়ী শিক্ষা খুটিয়ে খুটিয়ে চলেছে। সরকারি ভাবে এমপিওভূক্ত হয়ে এবতেদায়ী শিক্ষা দেশের বুনিয়াদি শিক্ষার ভিতকে মজবুত করবে। ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার একটি প্রস্তাব চ‚ড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যার সুফল পাবেন সাড়ে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষক। ইতোমধ্যে এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে।
বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পেলে দ্রæততম সময়ে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (ইআইআইএন) ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। বিভাগের মাদ্রাসা অনুবিভাগের যুগ্মসচিব এস এম মাসুদুল হক গত বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, ‘বুধবার বিদায়ী দিনে এ সংক্রান্ত ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়। এখন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের অনুমোদন পেলে মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির কাজ আমরা শুরু করব’। মাদ্রাসা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দ্রæততম সময়ে মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করার চেষ্টা করছি’। মাদ্রাসাগুলোর এমপিওভুক্তিতে নতুন নীতিমালা ও জনবল কাঠামো করার পরিকল্পনা করেছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাদ্রাসাগুলোতে ছয়টি শিক্ষক পদসহ মোট সাতটি পদ থাকবে। এবতেদায়ী প্রধান পদের বেতন নির্ধারণ করা হবে ১১তম গ্রেডে (১২৫০০-৩২২৪০ টাকা)। ক্বারী শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক পর্যায়ের পাঁচটি পদ থাকবে, যে পদগুলোর বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে (১১০০০-২৬৫৯০)। আর মাদ্রাসাগুলোর প্রতিটিতে অফিস সহায়ক বা এমএলএসএস পদ সৃষ্টি করা হবে। এ মাদ্রাসাগুলোতে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় চালুরও পরিকল্পনা করেছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, যাকে নূরানী পর্যায় বলা হবে। বর্তমানে এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধানরা মাসে ৩ হাজার ৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষকরা ৩ হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোর জনবল কাঠামো ও বেতনভাতার নীতিমালা করেছিল কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। যদিও সে নীতিমালা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা শিক্ষকরা পাননি।
যুগ্মসচিব এসএম মাসুদুল হক বলেন, ‘২০১৮ সালের নীতিমালা নয়, আমরা মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তিতে নতুন নীতিমালা ও জনবল কাঠামো করার পরিকল্পনা করেছি। আর মাদ্রাসাগুলোর প্রাক-প্রাথমিক বা নূরানী পর্যায় চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে’। শিক্ষকরা চান জাতীয়করণ শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে গত ২৮ জানুয়ারি এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাদ্রাসাগুলোকে এমপিওভুক্তির উদ্যোগ শিক্ষকরা সাধুবাদ জানালেও তারা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন।
স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। মন্ত্রণালয়ও বলেছিল, মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে তারা মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেজন্য সাধুবাদ জানাই। তবে আমাদের দাবি জাতীয়করণই থাকবে। সরকার যেন পর্যায়ক্রমে মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণের উদ্যোগ নেয় সে দাবি জানাচ্ছি’। পর্যাজয়ক্রমে এবতেদায়ি মাদরাসাকে জাতীয় করণ করে সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করবেন এমন আশা দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগোষ্ঠীর।