আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত ও ছাত্র সংগঠনটি। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় এ অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালন হলেও চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর, বিবির হাট, বহদ্দারহাট ও চান্দগাঁও থানা এলাকায় এবং জেলার বাঁশখালী ও চন্দনাইশ উপজেলায় ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামে মুরাদপুর ২নং গেইট ও বিবিরহাট অনেকটা রণাঙ্গনে পরিণত হয়। এসময় আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাউন্ডগেনেড, টিয়ারশেল ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করতে দেখা যায় । এসময় অন্তত চল্লিশ জন আহত হন এবং নগরীর বিভিন্ন অবরোধ স্থান থেকে ২৫ জনসহ সারা দেশ থেকে ৩৪ জনের গ্রেফতারের কথা বলেছেন অবরোধের ডাক দেয়া ছাত্র সেনার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাহেদুল আলম। বিভিন্ন অনলাইন ও বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ সূত্রে জানা যায়, অবরোধের কর্মসূচি শুরু হয় সকাল ৯টায়। পৌনে ১০টার দিকে মুরাদপুরে জড়ো হতে থাকেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার নেতা-কর্মীরা। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। ১১টার কিছু সময় পর সাউন্ডগেনেড, টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে জিইসির মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। এতে রাস্তার উভয় পাশে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। উল্লেখ্য যে, পুলিশের সাথে এ এসময় সাদা পোশাকে লাঠিশোটা নিয়ে বেশকিছু লোককে আন্দোলনকারীদের মারধর ও চেকআপের নামে অপদস্থ করতে দেখা যায়। এনিয়ে আহলে সুন্নাত ও ইসলামি ছাত্রসেনার পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সাধারণ জনগণের প্রশ্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনী অবরোধ সরাতে বা আন্দোলনকারীদের নিবৃত করতে বিভিন্ন কৌশলে কাজ করতে পারেন। প্রয়োজনে জোরও কাটাতে পারেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্য নয়, এমন সাদা পোশাকধারীরা কি পুলিশের সামনেই আইন হাতে তুলে নিতে পারেন? অতীতে ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলেও আমরা পুলিশকে দেখেছি, সরকারের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিপক্ষকে দমাতে। যার চরম প্রায়শ্চিত্য পুলিশ এখনও করে যাচ্ছেন। ৫ আগস্টের পর দেশের মানুষ পরিবর্তন চেয়েছে। রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে সব রকম বৈষম্য দূরীভূত করার অঙ্গীকার করে দায়িত্ব নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু আসলে কী বৈষম্য দূর হয়েছে? পুলিশ কি তাদের আগের অবস্থানের কোন পরিবর্তন করেছেন? অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনকারীদের ভিতরে ফ্যাসিস্ট সরকারের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢুকে পড়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। তাদের দাবি ৩৬ জুলাইএ তারাও সাধারণ ছাত্রদের সাথে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের সাথে ছাত্রলীগের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। আন্দোলনে ঢুকার প্রশ্নই আসে না। আন্দোলনকারীরা গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৭ এপ্রিল সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দারাবাদ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করার পর সকাল ১০টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। মারধরে মারাত্মক জখম হওয়া মাওলানা রইস উদ্দিনের উপযুক্ত চিকিৎসা না করে পুলিশ তাঁকে প্রথমে থানা হাজতে আটকে রাখেন পরে জেলে চালান দিলে পরদিন ভোরে তিনি কারাগারে মারা যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল (৫ মে) কর্মসূচি ছিল তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ। অবরোধে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় পুরো নগরবাসী আতক্সিক্ষত হয়ে পড়ে। সড়ক অবরোধের কারণে যানজটের পড়তে হয় অফিসগামী যাত্রী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে অনেককে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মিডিয়া সেলের প্রধান ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে লাঠিয়াল বাহিনী অতি উৎসাহী হয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে’। অপরদিকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি সাংবাদিক সম্মেলন করে অবরোদকারীদের উপর পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে আজ মঙ্গলবার ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা দেন। তারা দাবি করেন, মাওলানা রইস উদ্দিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমরা লক্ষ্য করছি, মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার আটদিন অতিবাহিত হলেও মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসি, আসামিদের গ্রেফতার না করা ও বিচারের মুখোমুখি করাতে কালক্ষেপন করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। মাওলানার নির্মম হত্যাকান্ডের পর থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত ও ইসলামী ছাত্রসেনার নেতা-কর্মীরা দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশসহ মাস টু গাজিপুর কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের প্রতিটি কর্মসূচিতে মানুষের সমাগম ছিল দেখার মত। বুঝতে হবে দেশের সাধারণ মানুষ এ অন্যায় হত্যার বিচার চায়। সরকার এক্ষেত্রে তাদেও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।