সরকারি প্রতিষ্ঠানেই বিল বকেয়া ১৮৩ কোটি টাকা

17

মনিরুল ইসলাম মুন্না

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ বিল বাবদ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) দক্ষিণাঞ্চলের বকেয়া পড়ে আছে প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি বিপিডিবি জানিয়েছে, বকেয়া বিল আদায়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার চিঠি দেওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানগুলো তা পরিশোধ করছে না। বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিপিডিবি পাবে ১৮২ কোটি ৮৯ লক্ষ ৯৬ হাজার ৮১০ টাকা ৭১ পয়সা।
এদিকে বকেয়া বিল অনাদায়ে জ্বালানি কেনার আর্থিক সংকটে পড়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে কোনো কোনো সংস্থা। এ নিয়ে বিল বকেয়া রাখা সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের। তাদের মতে, আমরা সকল প্রতিষ্ঠানে নোটিশ দিয়ে যোগাযোগ করেছি। সবাই বাজেট আসলে পরিশোধ করবে বলেছেন। আমরা সে অপেক্ষায় আছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া হয়ে পড়ায় বিতরণ পিডিবি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নিজ অর্থায়নে বিদ্যুৎ অবকাঠামো নির্মাণ ও সেবার মান বাড়ানো পিডিবির জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, দেশে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত কোম্পানি ছয়টি। সেগুলো হল- বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উনয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। যার চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা দক্ষিণাঞ্চল নামে পরিচিত।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ১৫টি সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে কোম্পানিগুলোর পাওনা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ১৮২ কোটি ৮৯ লক্ষ ৯৬ হাজার ৮১০ টাকা ৭১ পয়সা। এ পাওনা পরিশোধের জন্য সংস্থাটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নানা সময়ে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও তা পরিশোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।
বিদ্যুৎ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাওনা বিল আটকে রয়েছে কয়েক বছর ধরে। বিদ্যুৎ বিভাগ এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো বিল পরিশোধ করছে না। সবাই বাজেট সংকটের দোহাই দিচ্ছে।
চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ বকেয়া স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে ৬১ কোটি ৬৮ লক্ষ ৬১ হাজার ৬৬৭ টাকা ৬ পয়সা পাবে বিপিডিবি। স্বায়ত্ত¡শাসিত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ওয়াসার কাছ থেকে পাওনা রয়েছে ২২ লক্ষ ৯৮ হাজার ৪৩১ টাকা ৩১ পয়সা।
এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া তুলে ধরা হল- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ১১ কোটি ৪০ লক্ষ ৯ হাজার ৫৮৭ টাকা ৩ পয়সা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ১৯ কোটি ১৫ লক্ষ ১ হাজার ৭৫৯ টাকা ৭ পয়সা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৪ কোটি ৯১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৩৮৭ টাকা ৭৪ পয়সা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৭ কোটি ৫৫ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪৪৮ টাকা ৯৪ পয়সা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৮৭ লক্ষ ৮৭ হাজার ৬১ টাকা ৩০ পয়সা। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৪৬ লক্ষ ২৯ হাজার ৩২৪ টাকা ৮৫ পয়সা। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৫৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ১১৯ টাকা ৯৬ পয়সা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৪৮ লক্ষ ৭ হাজার ৯৮১ টাকা ৫৩ পয়সা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৪৫ লক্ষ ২০ হাজার ৭০ টাকা ৫১ পয়সা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৭৬৪ টাকা ১৫ পয়সা। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৩ কোটি ১৭ লক্ষ ৯৫ হাজার ২০৯ টাকা ৯৮ পয়সা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ২৮ লক্ষ ৯৯ হাজার ৫৬৬ টাকা ৫৯ পয়সা এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বকেয়া ৭০ কোটি ৩৪ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪২৯ টাকা ২ পয়সা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ নিয়ে আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বহুবার বলেছি, চিঠিও দিয়েছি। এখনও যোগাযোগ করছি। ইতোমধ্যে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বকেয়া বিল দিয়ে দিচ্ছে। সরকারি সংস্থায় হুট করে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা যায় না। কিন্তু তারা আন্তরিক, বাজেট পেলে হয়তো আমাদের টাকাটা দিয়ে দেবে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার বছরের পর বছর ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। তার ওপর বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়লে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। মূলত বিদ্যুতের অবকাঠামো, সেবার মানসহ সব বিষয় নির্ভর করে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর। আগে বকেয়া বিলের পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এখন ধীরে ধীরে সেটি কমে আসছে। বিল আদায়ে বিদ্যুৎ বিভাগ তৎপরতা বাড়াচ্ছে। সেটি সফল হলে বকেয়ার পরিমাণ আরো কমে আসবে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদরন কেন্দ্রে গড়ে প্রতিদিন ২ হাজার ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১ হাজার ৪০৭ মেগাওয়াট।