সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন একদিন স্থগিত

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

কয়েকজন সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর আশ্বাস পেয়ে আজকের জন্য আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। গতকাল মঙ্গলবার ভূমি মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা নুরুল ইসলাম এই সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনের কোনো সংশোধন চাই না। পুরোপুরি বাতিল চাই। আজকের বৈঠকের মাধ্যমে সরকারকে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য আগামিকালের (বুধবার) কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে’।
কর্মচারীদের আরেক নেতা বাদিউল কবীর বলেন, ‘আগামীকাল আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত থাকবে।’
বৈঠক শেষে ভূমি সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেন, ‘সচিবালয়ের কর্মচারীরা সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ সম্পূর্ণভাবে বাতিল চেয়েছেন। এই তথ্য আগামিকাল কেবিনেট সচিবকে জানানো হবে। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। এজন্য আগামিকাল (আজ) সচিবালয়ের কর্মচারীরা আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন’।
সরকার সিদ্ধান্ত জানানোর পর আন্দোলন বিষয়ে পরবর্তী ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান বাদিউল কবীর। খবর বিডিনিউজের
সচিবালয়ে কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। ওই সভায় অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে দুপুর ২ টায় ভূমি সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, পরিসংখ্যান সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর ভ‚মি সচিব বলেন, ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে। তার পরিপেক্ষিতে আজ সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো কয়েকজন সচিবকে নিয়ে একটি মিটিং করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত দেয়। বৈঠকের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা কী চান সেই বিষয়টি আমরা তাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছি। আন্দোলনকারীরা পুরো আইনটি বাতিল চেয়েছে। তারা মনে করে এটি মিসইউজ হতে পারে’।
সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আগামিকাল সকাল ১০ টায় আজকের বৈঠকে অংশ নেওয়া সকল সচিব মিলে মন্ত্রী পরিষদ সচিবকে বিষয়টি অবহিত করা হবে। এরপর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেটি জানানো হবে। ততক্ষণ আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে’।
গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাবে সায় দেয়। এর প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আপত্তির মধ্যেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রবিবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এতে পুরোনো আইনের সঙ্গে ’৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়।
নতুন ধারায় একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দন্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে-
>> কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের সামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
>> এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে;
>> কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দÐনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দন্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সরকার প্রয়োজন মনে করছে বলেই এ আইন করছে।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা এই অধ্যাদেশকে বলছেন ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মঙ্গলবারও তারা সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
এদিন সচিবালয়ে দর্শণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। ফলে দুপুর পর্যন্ত সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরাও প্রবেশ করতে পারেননি।
এদিকে বেলা ১১ টার কিছু পরে বিএনপি সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তার গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে ঘুরিয়ে দেন।
এদিকে ‘সচিবালয় ও এনবিআরসহ প্রশাসনের সব স্তর থেকে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের আমলাদের উৎখাতে ফ্যাসিবাদ উৎখাতযাত্রা’ নামের একটি কর্মসূচি নিয়ে সোমবার মধ্য রাত থেকে সচিবালয়ের উল্টো দিকে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তন সংলগ্ন ফুটপাথে অবস্থান নিয়েছে জুলাই মঞ্চ নামের একটি সংগঠন। তারা আওয়ামী লীগের চরম দোসর হিসাবে ৪৪ জন আমলার নামের তালিকা ছবিসহ প্রকাশ করে সেখানে প্রদর্শন করছে এবং তাদেরকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে।