সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্বেগ

1

রাঙ্গুনিয়ায় চাঁদা না দেওয়ায় ফুটবল টুর্নামেন্টের স্টেজ থেকে বিকাল ৪টায় তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় বিএনপি নেতা ও খেলার আয়োজক প্রকৌশলী ওসমান গনিকে। তুলে নেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম শাখার আহব্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, সাধারণ সম্পাদক ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, এ্যাবের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্য সচিব অধ্যাপক নসরুল কাদির চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহ নওয়াজ, ড্যাব মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ডা. জসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এই ঘটনায় এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই ঘটনার দায়ে সন্ত্রাসী ইসমাইলের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইসমাইল বাহিনীর তান্ডবে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ ঘুমাতে পারেনি। তাদের জুলুম-নির্যাতনে সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ। অস্ত্রধারী-সন্ত্রাসী ইসমাইলের ভয়ে এলাকার মানুষ বাড়ি থেকে বের হতেও ভয় পায়। সে এখন দেশে এসে বিভিন্ন পেশার মানুষকে চাঁদার জন্য হুমকি-ধমকী দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রেখেছে। অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার দাবী জানান তারা।
উল্লেখ্য, রাঙ্গুনিয়ায় চাঁদা না দেওয়ায় ফুটবল টুর্নামেন্টের স্টেজ থেকে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় বিএনপি নেতা ও খেলার আয়োজক প্রকৌশলী ওসমান গনিকে। ওই সময় সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার ওপর নির্যাতন চালায়। গত সোমবার একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভিকটিম ওসমান। তিনি বিএনপির সরফভাটা ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় আঘাতের একপর্যায়ে অজ্ঞান হন ভিকটিম ওসমান। পরে ওই অবস্থায় ভিকটিমকে রেখে পালিয়ে যান সন্ত্রাসীরা।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ঘটনার মূল হোতা সন্ত্রাসী ইসমাইলকে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। অন্যথায় পেশাজীবী পরিষদ বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
নেতৃবৃন্দ আরও জানান, ১৭ বছর আগে ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ছিলেন এই ইসমাইল। সেসময় নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হত্যা-মামলাসহ চাঁজাবাজি, ভূমি দখল, চুরি-ডাকাতির নানা অভিযোগে অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে একবার গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন তিনি। জামিনে মুক্তি পেয়ে ১/১১ সরকারের আমলে আবুধাবিতে চলে যান ইসমাইল। সেখানে গিয়ে ফেনীর শীর্ষ সন্ত্রাসী নিজাম হাজারীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন ইসমাইল। তার কাছ থেকে নেন প্রশিক্ষণ। দেশে এসে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন, নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইসমাইল বাহিনী’।
গত ১৬ আগস্টের পর দেশে এসেই আবারও চাঁদাবাজি, অপহরণ, ভূমিদস্যুতার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করলেও স্থানীয় বিএনপি ও প্রশাসন নীরব ভূমিকায় রয়েছে। থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগে ইসমাইল হোসেনসহ (৫০) মোট সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। ইসমাইল হোসেন রাঙ্গুনিয়ার পশ্চিম সরফভাটা ইউনিয়নের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। ইসমাইল হোসেন আবুধাবিতে বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগপত্রে বিবরণে বলা হয়, ১৮ জানুয়ারি সরফভাটা ইউনিয়নের ভূমিরখীল খেলার মাঠে কর্ণফুলী ফুটবল একাদশ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন মো. ওসমান গনি। ওইদিন বিকেলে চারটায় প্রায় ২০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে ওসমানকে একটি নির্জন বাগানে নিয়ে যান। ওইসময় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফেরার দুইঘণ্টা পর আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে বাসায় চলে আসেন তিনি। ওইদিন রাত ১০ টার দিকে বিএনপির নেতা আবছারের সহযোগিতায় চিকিৎসা নেন ভিকটিম ওসমান। এদিকে ওইদিন ফুটবল ফাইনাল খেলার স্টেজ থেকে তুলে নেওয়ার সময় রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা বিএনপি আহব্বায়ক অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার, সদস্য সচিব আবু আহমেদ হাসনাত, সরফভাটা ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, ২০০২ সালে বিএনপিকর্মী ভোলাসহ দুই খুনের মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন ইসমাইল। ২০০৪ সালে তিনি অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। বিজ্ঞপ্তি