সম্ভাবনার রাবার শিল্প ধুঁকছে

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রাবার শিল্পের এখন দুঃসময়। একটা সময় বিপুল পরিমাণে রাবার উৎপাদন হলেও জীবনচক্র হারানো গাছের সংখ্যা বাড়ায় এখন উৎপাদন কমেছে। নতুন জাত উদ্ভাবন না হওয়া, রাবার আমদানিতে ৫শতাংশ ট্যাক্স কমানো, সরকারি বিনিয়োগ ও ব্যাংক ঋণ বন্ধ থাকার কারণে রাবার শিল্প দিনদিন পিছিয়ে পড়ছে। রাবার শিল্পের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে আশ^াস দেয়া হলেও তা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। আয়ের চেয়ে বাগান রক্ষণাবেক্ষনে ব্যয় বাড়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন রাবার বাগানগুলোও লোকসানে ধুঁকছে।
রাবার চাষীরা বলেন, নতুন ক্লোন না পাওয়ায় দিনদিন উৎপাদন কমছে। পুরানো জাত দিয়ে এখনো রাবার শিল্প চলছে। নতুন ক্লোন না পেলে রাবার শিল্পের আরও ভরাডুবি হবে। রাবার চাষে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কমে গেছে। আমদানি ট্যাক্স কমানো, সরকারি ফান্ডিং বন্ধ, ব্যাংক ঋণ বন্ধ থাকার কারণে রাবার শিল্প পিছিয়ে পড়ছে। ১৯৯৭ সালের পর রাবার শিল্পে কোন বিনিয়োগ নাই। সরকার কোন আর্থিক সহযোগিতা করছে না। একটা সময় এডিবি ১০শতাংশ সুদে রাবার ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদান করতো। দুই যুগ ধরে কোন ঋণও মিলছে না। একসময় ট্যাক্স ছিল ১০ শতাংশ। এখন সরকার আমদানিতে ৫শতাংশ ট্যাক্স ধরায় বড় কোম্পানিগুলো সুবিধা পাচ্ছে। সরকার ট্যাক্স বাড়ালেই দেশের রাবার শিল্প গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘রাবার আমদানিতে ট্যাক্স বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলাম। একসময় ট্যাক্স ছিল ১০ শতাংশ। আমরা সেটি বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ ট্যাক্স দেয়ার দাবি জানিয়েছি। এরমধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে যতটুকু করা যায় সে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সরকার রাবার আমদানিতে ট্যাক্স কমিয়ে ৫ শতাংশ করে দিয়েছে। রাবার মার্কেটে একটি সিন্ডিকেট দাঁড়িয়ে গেছে। দেশের একটি বড় শিল্পগ্রুপ রাবার শিল্পের এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। এদেরকে সুবিধা দিতেই সরকার রাবার আমদানিতে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছে।’
রাবার উৎপাদনশীল দেশের সাথে সহযোগিতা জোরদার ও টেকসই প্রাকৃতিক রাবার শিল্পে অবদান রাখতে ২০১৭ সালে এসোসিয়েশন অব ন্যাচারাল রাবার প্রোডিউসিং কান্ট্রিস (এএনআরপিসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল রাবার রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (আইআরআরডিবি) সদস্যপদ লাভ করে বাংলাদেশ। কিন্তু সদস্যপদ লাভের সাত বছরেও রাবার শিল্প রক্ষায় সরকারের বড় ধরনের উদ্যোগ নেই। এর আগে ২০১৩ সালের ৫মে বাংলাদেশ রাবার বোর্ড আইন ২০১৩ (২০১৩ সালের ১৯ নম্বর আইন) এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রাবার বোর্ড প্রতিষ্ঠা হয়। শুরু থেকে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সাথে রাবার বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। ৩০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ হতে বাংলাদেশ রাবার বোর্ড স্বতন্ত্রভাবে কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বাণিজ্যিকভাবে ১৯৬১ সালে রাবার চাষ শুরু হয়।
বাংলাদেশ রাবার বোর্ড সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দুই হাজার ৭০৭টি বাগান রয়েছে। এসব বাগানের এক লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৮০ একর জমিতে রাবার চাষ হয়। বাগানে রাবার গাছের সংখ্যা এক কোটি ৬লাখ ৫১ হাজার ৯২টি। এরমধ্যে ২৮ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬৯৯ গাছ থেকে নিয়মিত কষ আহরণ হয়। গত অর্থ বছরে ৭০ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন রাবার উৎপাদন হয়েছে। ১৯৬১ সালে বাণিজ্যিক রাবার চাষ শুরুর পর থেকেই বাগানে মালয়েশিয়া জাতের আরআরআইএম-৬০০ ও পিবি-২৩৫ জাতের গাছ লাগানো হয়। সাধারণত গাছ লাগানোর সাত বছর পর গাছগুলো কষ দেয়। ৭-৩২ বছর পর্যন্ত গাছগুলোর জীবন চক্র থাকে।
বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ক্লোন ডেভেলপমেন্ট এবং ক্রপ ইমপ্রুভমেন্ট) আবু তালেব সুরাগ পূর্বদেশকে বলেন, ‘রাবার বাগানগুলো ৪০ বছরের জন্য লীজ দেয়া হয়। পরে নতুন করে নবায়ন করা হয়। এখন অনেক বাগান নতুন করে নবায়ন হচ্ছে। অবকাঠামো ও সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। ধীরে ধীরে সংকটগুলো কেটে যাচ্ছে। আমরা রাবার শিল্পে ভালোর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভারতের দুটি নতুন জাত নিয়ে কিভাবে বনায়ন করা যায় সেই পরিকল্পনা চলছে।