অবশেষে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও সংশয় দূর করে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩জন নাবিক মুক্তি পেয়েছেন। পবিত্র ঈদ উল ফিতরের তিনদিনের মাথায় বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ বাংলার ১লা বৈশাখ জাহাজ ও নাবিকদের মুক্তি নাবিকের পরিবার, সরকার ও দেশবাসীর স্বস্তি মিলেছে। নাবিকদের পরিবারে দুদিন আগেও আমেজ ও আনন্দহীন ঈদের দিনটি অতিক্রম করেছিল। ১লা বৈশাখ তাদের জন্য ছিল সব আনন্দের সন্মিলন। মুক্তি পাওয়া নাবিক ও তাদের পরিবার এ জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে অজস্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি জাহাজের মালিক ও সরকারের কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সরকার, পরিবার ও দেশের মানুষের বড় স্বস্তির জায়গাটি ছিল, ৩১ দিন পর জিম্মি থেকে অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশি ২৩ নাবিক এবং জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জানা যায়, সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জাহাজ ও নাবিকরা জিম্মির পর থেকে সরকার, জাহাজ কর্তৃপক্ষ সোমালিয়ার আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী সর্বোপরি আন্তর্জাতিকভাবে মেরিনার্স রুট নিয়ন্ত্রণকারী দেশ ও সংস্থাগুলোর সাথে জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগ করে জাহাজ ও নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় মুক্তির প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় একটি বিশেষ মিডিয়ার সাথে চুক্তি এবং বিকাল মুক্তিপণের দাবিকৃত টাকা জলদস্যুদের হাতে পৌঁছালে নাবিকসহ জাহাজটিকে মুক্তি দিয়ে জলদস্যুরা ছিটকে পড়ে। এটি আমাদের জন্য আনন্দের,খুশির ও স্বস্তির খবর, সন্দেহ নেই।
কারণ, সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি অবস্থায় এত দ্রুত উদ্ধার হওয়ার নজির খুব বেশি নেই। এমভি আবদুল্লাহ জলদস্যুদের কবলে পড়ার আগে বেশ কয়েকটি দেশের জাহাজ লুন্টন হয়েছিল, কিন্তু নাবিক ও জাহাজকে উদ্ধার করতে ৩ মাস থেকে একবছর সময় লেগেছে। এক্ষেত্রে এমভি আবদুল্লাহকে মাত্র একমাসের মাথায় মুক্ত করে আনা এটি বড় কৌশলি বা কূটনৈতিক তৎপরতা না হলে সম্ভব হতো না। মুক্তি পাওয়া জাহাজ ও নাবিক এখন দুবাই এর পথে। আশা করা যায়, অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাদের সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। জাহাজসহ ২৩ নাবিককে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, এটিই বড় কথা। এমনিতেও নাবিকরা সাগরে দায়িত্ব পালনকালে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের সুযোগ পান না। এরপরও আমরা আশা করব, ভবিষ্যতে স্বজনরা নাবিকদের কাছে না পেলেও অন্তত উৎকণ্ঠায় নয়, স্বস্তিতে থাকবেন। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সমুদ্র নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে নাবিকসহ চালকদের আরো সচেতন ও দায়িত্বশীর হতে হবে। সোমালিয়াসহ আফ্রিকার সীমান্তবর্তী অনেক দেশের সমুদ্র সীমায় দস্যুবৃত্ব চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এদের থামানো না গেলে সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাবে। এছাড়া জাহাজ কর্তৃপক্ষেরও উচিৎ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ সোমালি জলদস্যুরা ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি কয়লাবাহী জাহাজটিকে (বাল্কশিপ) অপহরণ করে। জিম্মি করে জাহাজটির ক্যাপ্টেনসহ ২৩ নাবিককে। মোজাম্বিকের মাফুতো বন্দর থেকে জাহাজটি ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আমিরাতের শারজাহ বন্দরে যাচ্ছিল। এর আগে ২০১১ সালে একই মালিকের ‘এমভি জাহান মনি’ নামের আরেকটি জাহাজ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেবারও জিম্মি করা হয় জাহাজটির সব নাবিক ও ক্রুকে। সরকার ও জাহাজটির কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় তাদেরও মুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। তবে এবার উদ্ধারকার্য সম্পন্ন হয়েছে স্বল্পতম সময়ে। নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় মুক্তিলাভে সহায়তার জন্য সরকার তো বটেই, পণ্যবাহী জাহাজটির মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানাতেই হয়।
আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সাগরের যে স্থান থেকে এমভি আবদুল্লাহসহ এর নাবিকরা জিম্মি হয়েছিলেন, সেখানে সোমালিয় জলদস্যুদের তৎপরতা রয়েছে। কাজেই সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এ পথসহ সাগরে জাহাজ চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। সাগরে চলাচলরত সব জাহাজ ও নাবিকদের সুরক্ষায় সরকার ও ভ্যাসেল কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।