সমাবর্তন মানে, কালো গাউন আর কালো গাউন মানে, প্রাণের উচ্ছ্বাস

1

মুহাম্মদ আবদুর রসুল

প্রায় ৬০ বছরে হলো ৫ম বারের মত সমাবর্তন। হিসেব কষলে দেখা যায় প্রতি ১০/১২ বছর অন্তর অন্তর ১ বার করে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সমাবর্তনকে গিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দালান কোটাকে নতুন সাজে সাজিয়েছেন শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থান ও স্থাপনা সমুহকে করা হয়েছে আলোসজ্জা। দীর্ঘ দিন পরপর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কনভোকীদের আনন্দের সীমা নেই কখন কি করবে কোথায় কোথায় ছবি ধারণ করবে কিভাবে করবে এই নিয়ে তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে হাতে মাত্র কয়েকঘণ্টা এমন দিন আর আসবে না। ছবি ফ্রেমে বাধঁতে একনো অনেক কিছু বাকি। তাই তারা অস্থির, স্থির নেই। চষে বেড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাস আর রঙ্গিন ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করছে প্রিয় মুহূর্তগুলো। নিজ নিজ হলে, বিভাগে, ঝুপড়িতে, শহীদ মিনার, মুক্ত মঞ্চ, কাটা পাহাড়, হতাশার মোড়, দোলা
স্মরণি, জুলন্ত সেঁতু, চালন্দ গিরিপথ, চরি শাটল ইত্যাদি সৌন্দর্য লীলাভ‚মির পেছনে শুধু কনভোকী নয় কনভোকীদের সাথে আসা তাদের অভিভাকবৃন্দ ছবির ফ্রেমে বন্দি হতে তারা ও ছেলে মেয়ের সাথে দিক ভেদিক দোড়া-দোড়িতে অস্থির।
এই যেন অন্য রখম একটি দৃশ্য। আবেগ আর ভালোবাসার মিশ্রণে ফুটে উঠছে প্রাণে উচ্ছ্বাস। ভালো লাগার এমন দৃশ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের ক্যাম্পাসজুড়ে। ৫ম সমাবর্তনকে সামনে রেখে বিগত ৮/১০ বছরের সিনিয়র ও নতুন গ্রাজুয়েটদের ব্যস্ততা। অনুষ্ঠিত হলো ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠান যা বিশ্বে সব চেয়ে বড় সমাবর্তন। গত ১২ তারিখ গাউন, টুপি ও চেলশ/হুড পাওয়ার পর থেকে শুরু হয় এই আনন্দ। আবার কোন কোন বিভাগের কনভোকীরা একই কালারের জামা পরিধান করতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ আগের মত খুনসুঁটি, মান অভিমান ফিরিস্তিও করছে। এর পরে তাদের মধ্যে মিশে আছে দিনরাতের কত সুখ-দুঃখের স্মৃতি। তাইতো দলবদ্ধ ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনায় ও গত ৫ বছর যাদের শাসনে নিজেকে কিছুটা ঘুছিয়ে নেয়া গেছে সেই প্রিয় শিক্ষদের কাছে।
নিজেদের পাশাপাশি সমাবর্তনের হাওয়া লেগেছে কারো কারো গর্বিত বাবা মায়ের গায়েও। ছেলে মেয়ে গ্রাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি পাবে বলে গ্রাম শহর ও বিভিন্ন জেলা থেকেও ক্যাম্পাসে ছুটে এসেছে। সন্তানরাও দিয়েছে যোগ্য সম্মান। কেউ পরিয়ে দিচ্ছে টুপি, কেউ দিচ্ছে গাউন কেউ কেউ মাকে টুপি দিলে বাবাকে গাউন দিচ্ছে আবার তাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনায় বিভিন্ন ভাবে ছবির ফ্রেমে বন্দি হচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রিয় মানুষটিকে নিয়েও আসছে। আবার অনেকে ছাত্র জীবনে সিনিয়র জুনিয়র, ক্লাসমীট পছন্দ করে বিয়ে দুই জনে একসাথে আসছে দুইজনের বাচ্চাদেরকে সাথে করে নিয়ে আসছে তারাও তাদের বাচ্চার জন্য কালো গাউন ও টুপি নিজেরাই সেলাই করে মা বাবার সাথে ফ্রেমবন্দী করছে। কেউ কেউ দেখা গেছে ছোট বাচ্চা তার মা-বাবাকে টুপি পরিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকে আসছে একই অফিসের সিনিয়র বস ও জুনিয়র কর্মকর্তা।
কিছু কিছু গ্রাজুয়েটদের দেখাগেল গাউন, টুপি, কার্ড গলায় দিয়ে মজা করে তরিতরকারী বিক্রি করছে কেউ কেউ ভিক্ষা করছে, কেউ বোটানীক্যাল গার্ডেনে গ্রাজুয়েট ভূত সেজে বসে আছে, আবার কেউ কেউ লুঙ্গি পরে উপরে গাউন পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আবার কেউ কেউ সুপারম্যান সাজতেও দেখা গেছে। আবার কিছু কিছু গ্রাজুয়েট কাপলরা টুপির আড়ালে মুখ লুকিয়ে কী যেন করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে ফ্রেম বন্দি হতে দেখা এক পরিবারের সাথে কথা হয় দুইজনেই এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করা গ্রাজুয়েট, আপু শারমিন আক্তার তন্নি ও বড় ভাই তাদের অনুভূতি জিজ্ঞেস করছি তারা বলল সমাবর্তন হচ্ছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে পারা নিশ্চয় ভালো লাগার এ অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা মতো নয় তাই আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে ও সাথে করে নিয়ে আসছি যেন সারা জীবন এই দিনগুলো স্মৃতি হিসেবে থাকে এবং আমাদের সন্তানরাও বড় হয়ে জানতে পারে তাদের মা বাবা কোথায় পড়ছে এবং তাদের মধ্যে যেন আমাদের চেয়ে আরো বড় স্বপ্ন দেখে। প্রীতি লতা হলের সামনে আরো এক কাপলের আনন্দ উল্লাস দেখে তাদের অনুভূতি জিজ্ঞেস করলাম তারা বলল ভাই ৪র্থ বর্ষ ও আপু ১ম বর্ষ থাকতে একে অপরকে পচন্দ করে, আপু ৩য় বর্ষে থাকতে ভাইয়ে ব্যাংকে চাকুরি হয় ৪র্থ বর্ষে থাকতে ২০২১ সালে ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয়ে দুইজনে বর্তমানে গ্রাজুয়েট। তারা বলল বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তাদের প্রতিদিন ছোট বড় অনেক আনন্দ ও দুঃখের স্মৃতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িত। যা তারা মুখের ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতে পারবেনা ও প্রকাশ করার নয়। এই রকম আরো অনেক জনের সাথ কথা বলে যেটা শুনলাম সবারই একই কথা-
কেন জানি আজকে আনন্দের মধ্যে একটা খারাপ লাগাও কাজ করছে। বিদায় জানাতে হবে স্বপ্নের বিদ্যাপীঠকে। কত সুখ-দুঃখের উত্থান-পতনের স্মৃতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ধুলিকনার সঙ্গে। তারা আরো বলেন এ স্বীকৃতি শুধু স্বীকৃতি নয় এর মধ্যে দিয়ে আমাদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করবেন রাষ্ট্র প্রধান। দেশ মাতৃকার জন্য কাজ করার যে দায়িত্ব তিনি তুলে দিবেন, চেষ্টা করব নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য অজীবন কাজ করে যাওয়ার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এতবড় সমাবর্তন আর হয়েছে কিনা আমাদের জানা নাই, যেখানে প্রায় ২৩ হাজার কনভোকীর অংশ গ্রহণ ও রেজিস্ট্রেশন করছে অনুষ্ঠানে কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মানানা ডিগ্রি প্রদান করবেন প্রদান উপদেষ্টা ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার ও সাথে থাকবেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শিক্ষা উপদেষ্টা ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। পরিশেষে আমার এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাক সবাই ভালো থাকুক এই প্রার্থনা। ধন্যবাদ সব কনভোকী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে যাদের অবদানে এত সুন্দর একটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো।
লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন
সমাবর্তন মানে, কালো গাউন আর
কালো গাউন মানে, প্রাণের উচ্ছ্বাস