নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্র্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাউজুল কবির খান বলেছেন, সব শিক্ষা শ্রেণিকক্ষ থেকে পাওয়া যায় না। কিছু শিক্ষা পরিবেশ-প্রকৃতি থেকেও অর্জন করতে হয়।
গতকাল শনিবার নগরীর পতেঙ্গায় চিটাগং বোট ক্লাবে চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) সমাবর্তন-২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবর্তনে বিভিন্ন অনুষদের ২ হাজার ১৮৯ জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ১ হাজার ৪৫২ জন ব্যবসা, প্রকৌশল, আইন, এবং লিবারেল আর্টস অনুষদ থেকে পাস করা স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। বাকি ৭৩৭ জন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। এছাড়া অনুষ্ঠানে ১৪ জন শিক্ষার্থীকে তাদের স্ব স্ব প্রোগ্রামে অসামান্য কৃত্বিত্বে ফলস্বরূপ ‘টপ অ্যাচিভার্স’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি, আপনাদের প্রতিষ্ঠান পড়ালেখার পাশাপাশি সততা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছে। যা আপনারা আপনাদের কর্মজীবনে কাজে লাগাবেন এবং তা প্রমাণ করতে হবে। অন্যের জন্য কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার কোন ব্যক্তির কাছে দায়বদ্ধ নয়। জুলাইয়ের শহীদ ছাত্র-জনতা ও আহতদের কাছেই শুধু আমাদের জবাবদিহিতা। বিগত সরকার সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। আমরা বর্তমানে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চেষ্টা করছি। আমদের সবাইকে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিল্পগ্রæপ ইয়ংওয়ান করপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী (সিইও) কিহাক সুং। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের রয়েছে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ। কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে আপনারা নিজেদের যোগ্য লিডার হিসেবে গড়ে তুলবেন। এটা আপনার বিশ্ব, এ বিশ্বকে শাসন করার যে সুযোগ আপনাদের রয়েছে, তা কাজে লাগাবেন।
তিনি আরও বলেন, কোরিয়ায় আমি বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত। আর চট্টগ্রামে চিটাগনিয়ান হিসেবে। চট্টগ্রামবাসীর কারণেই আমাদের সক্ষমতা হয়েছে। আমি নিজেকে চট্টগ্রামের মানুষ ভেবে গর্ববোধ করি। কোরিয়া-বাংলাদেশের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করছে এ অ্যাপারেলস সেক্টর।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ক্রমাগত সামাজিক বৈষম্য ও বাস্তুচ্যুতি আমাদের ব্যথিত করছে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে তোমরা আলো ছড়াবে। দক্ষ লিডারশিপের মাধ্যমে দেশকে নেতৃত্ব দিবে। পুরো বিশ্ব তোমাদের সামনে। নেতৃত্ব দিতে হবে তোমাদের। জুলাই আদর্শকে ধারণ করে দেশের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে।
সিআইইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীর মোহাম্মদ নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুন আখতার, সিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব, সিআইইউর প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট অ্যাডুকেশন, সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপম্যান্ট ট্রাস্টের (ইসটিসিডিটি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকারিয়া খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শেখ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির ও অনিক কর।
গতকাল সকালে হিম-শীতল বাতাস উপেক্ষা করে উপস্থিত হন শত শত শিক্ষার্থী। বেলা বাড়ার সাথে সাথে গায়ে কালো গাউন ও সমাবর্তনের টুপি মাথায় দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বৃদ্ধি পায়। তাদের চোখে আনন্দ, মনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন- এমন উৎসবের দেখা মিলেছে চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) সমাবর্তনে। কারও হাতে ছিল ক্যামেরা, কেউ বন্ধুদের জড়িয়ে ছবি তুলেছেন, কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে আবেগঘন মুহ‚র্ত কাটিয়েছেন। এ আয়োজন তাদের দীর্ঘ পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের উদযাপন।