সব বন্ধুই কি প্রকৃত বন্ধু!

2

লায়ন মো. আবু ছালেহ্

ইরানের বিখ্যাত মনীষী শেখ সাদী (রহ.) বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’। এ উক্তির মূলকথা হচ্ছে, একজন উত্তম বন্ধু যেমন জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে পারে। জ্ঞানী, সৎ, ন্যায়পরায়ণ, ত্যাগী, নিঃস্বার্থ, চরিত্রবান, সহজ-সরল ইত্যাদি গুণাবলি দেখে বন্ধু নির্বাচন করলে আশা করা যায় সে উত্তম বন্ধু হতে পারে। ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) পাঁচ শ্রেণীর মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই পাঁচ শ্রেণীর মানুষ হলো- মিথ্যাবাদী, ইতর, কৃপণ, অভদ্র ও নির্দয়। অন্যদিকে ইমাম জাফর সাদেক (আ.) তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। ওই তিন শ্রেণী হলো- বিশ্বাসঘাতক, নির্মম ও মিথ্যাবাদী। রাসূল (সা.) বলেছেন, শেষ বিচারের দিন সকল বন্ধুই শত্রুতে পরিণত হবে তবে একমাত্র সৎ বন্ধুই সেদিন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেবে। অপরিচিতজনকে বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের আপনজন ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের অনিষ্ট সাধনে কোনো ত্রুটি করবে না। যা তোমাদের ক্ষতি করে তাই তাই তারা কামনা করে।
প্রিয় নবি (সা.) বলেছেন, ‘অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকিত্ব ভালো। আর একাকিত্বের চেয়ে সৎ সঙ্গী ভালো।’ (সহিহ বুখারি : ২৪৩৯)। রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম (স্বভাব-চরিত্র) দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে তা যেন অবশ্যই যাচাই করে নেয়।’ (জামে তিরমিজি : ২৩৪৭)। হজরত আলী (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি চিন্তাভাবনা করে যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।
ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, তিনটি গুণ যার আছে তাকে বন্ধু বানাতে হবে। এক. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী, বিচক্ষণ। দুই. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়। তিন. বন্ধুকে হতে হবে নেককার, পুণ্যবান। একদা এক বেদুইন নবি (সা.)কে জিজ্ঞেস করেন, কিয়ামত কবে হবে? নবি (সা.) উত্তরে বলেন, তার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ? লোকটি বলে, (নফল) নামাজ, রোজা, সদকা হিসাবে বেশি কিছু আমার নেই কিন্তু আমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে ভালোবাসি। নবি (সা.) বলেন, তাহলে তুমি তার সঙ্গে হবে যাকে তুমি ভালোবাসো।’ (সহিহ মুসলিম, ২৬৩৯)।
হজরত আলকামাহ (রহ.) বলেন, ‘বন্ধুত্ব করো তার সঙ্গে, যার সাহচর্য তোমাকে সুন্দর করে, তুমি অভাবগ্রস্ত হলে তোমাকে সাহায্য করে, ভুল বললে তোমার ভুল সংশোধন করে, যদি তোমার মধ্যে কোনো মঙ্গল দেখে, তো গুনে গুনে রাখে, যদি তোমার মধ্যে কোনো ত্রুটি দেখে তো শুধরে দেয়, কঠিন সময়ে তোমাকে সান্ত¡না দেয়।’ খোদাভীরু, অভিজ্ঞদের সোহবত ও পরামর্শ গ্রহণ যেমন ইহকালীন বিষয়ে জরুরি ও সহযোগী, অনুরূপ পরকালীন বিষয়েও দরকারি ও কল্যাণময়। অর্থাৎ নিজের ইমান, আমল, আখলাক পরিপক্ব ও সমৃদ্ধ করে আখেরাতের অনন্ত অসীম জীবনে সফলতা পেতে দ্বীনদার, পরহেজগার, বুজুর্গ ও আদর্শ ব্যক্তিদের সান্নিধ্য অতীব জরুরি বিষয়। কেননা, কথায় আছে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আবার কেউ কেউ বলেন, সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। বাস্তবেও দেখা যায়, অনেক আল্লাহওয়ালা বুজুর্গ ও শুদ্ধ পুরুষের সান্নিধ্য অবলম্বন করে অপরাধ জগতের বড় বড় অপরাধীরা যেমন-চোর, ডাকাত, মাদকসেবী, ব্যভিচারী, দুর্নীতিবাজ ও বেয়াদব শ্রেণির লোক হেদায়েতের পথ পেয়েছে। শুদ্ধ-সুন্দর, সফল জীবন লাভ করেছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘উম্মতের আলেমরা আমার উত্তরাধিকারী’ (জামে তিরমিজি : ২৬৮২)। তাই বর্তমানে দ্বীনি বিষয়ে আলেমদের দিকনির্দেশনা ও সোহবত গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। তা হলে আমাদের যাপিত জীবন সুন্দর, সুখী, সমৃদ্ধ হবে এবং পরকালীন জীবনে চূড়ান্ত সফলতা আসবে, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সৎ সঙ্গী নির্বাচনের তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক