সবজিতে স্বস্তি, পেঁয়াজ মুরগি ও চালের দামে ফের উত্তাপ

2

মনিরুল ইসলাম মুন্না

শীতের সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় দামে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। তবে মাছের সরবরাহ পর্যাপ্ত হলেও দাম অনেকটা বেশি। তবে চাল, মুরগির ও পেঁয়াজের দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তাছাড়া সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় বাজার ঘুরে সয়াবিন তেল কিনতেও বেগ পেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। গতকাল শুক্রবার রিয়াজউদ্দিন বাজার ও বহদ্দারহাট বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে কোন কোন শাক-সবজির দাম। মানভেদে প্রতিকেজি বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, ডাটা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা ও পটল ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি আঁটি লাল শাক পাওয়া যাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। লাউ শাক ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা ও পালং শাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। শিম ৩০ টাকা, ফুলকপি আকৃতিভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, প্রতিকেজি পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লেবুর হালি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসার পর দাম কিছুটা কমে এসেছিল। কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহেও দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা ছিল।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের দোকানি মো. মামুন বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। কারণ আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ছে, আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি পড়ে।’
মাছের বাজার এখনও চড়া। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে ইলিশের দাম। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩২০০ টাকা, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা পড়ছে। গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়ার দামও ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। এছাড়া কই ৮০০ টাকা, টেংরা ৭০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। রুই মাছ আকৃতি ভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০, কাতলা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি যেখানে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায় কেনা যাচ্ছিল, শুক্রবার তা ২০৫ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর সোনালি মুরগির দাম কয়েক সপ্তাহ ধরেই চড়া। গতকাল শুক্রবার দেখা গেল দোকানিরা দাম হাঁকছেন ৩৫০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হচ্ছিল ৩৩০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
অপরদিকে চালের দামও বাড়তি। আগের সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেশি রাখছেন বিক্রেতারা। বহদ্দারহাট বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায়। আগের সপ্তাহে দাম ছিল ৭০ থেকে ৭২ টাকা। তার আগের সপ্তাহে ছিল ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা। একইভাবে কেজিতে ৫ টাকার মত বেড়ে মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা, আটাইশ বেতি ৬০ থেকে ৬২ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বহদ্দারহাটের চাল দোকানি বক্কর হোসেন বলেন, ‘আমনের এ সময়ে এক বস্তা (৫০ কেজি) আটাশ চালের দাম আড়াই হাজার টাকা থাকার কথা। মাঝখানে দাম কমছিল, ২৬০০ টাকাতেও বিক্রি করছি। পরে ২৭০০ হল, এখন ২৮৫০ টাকায় বিক্রি করছি।’
গত মাসে হঠাৎ বাজার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল সয়াবিন তেল। সরকারের উদ্যোগে তখন দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি এখানও। ক্রেতারা কিনতে এলে বিক্রেতারা বলছেন নেই। তবে ক্রেতারা চলে যাওয়ার সময় বিক্রেতারা আবার জিজ্ঞাস করছেন কত লিটার লাগবে?
সরকার বোতলের সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে। আর খোলা তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৭ টাকা। তবে খোলা তেল বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
বাজার করতে আসা ফেরদৌসী আক্তার ও মামুন হোসেন বলেন, ‘বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না।’
খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সাধারণ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘এস আলম গ্রæপ আমাদের ভোজ্যতেল সরবরহ দিতো। সেই গ্রুপ এখন নেই। তাই সরবরাহ আগের মতো হচ্ছে না।’