সফল হোক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন

1

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন আজ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দেশের প্রধান উপদেষ্টা, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক, চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ছয় দশকের ইতিহাসে এটি ৫ম সমাবর্তন। এবারের সমাবর্তনে তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রথমত, এবারের সমাবর্তন দেশের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। দ্বিতীয়ত, এ সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করার জন্য নিবন্ধিত গ্র্যাজুয়েটের সংখ্যা ২২ হাজার ৫৮৬ জন। জানা যায়, বিশ্বের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে এত গ্র্যাজুয়েট নিয়ে সমাবর্তন হয়নি। তৃতীয়ত, এই প্রথম দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নিজের জন্মভূম, কর্মস্থল এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের শুভ সুচনা হয়। সঙ্গতকারণে আজকের সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয় শুধু, পুরো চট্টগ্রামে উচ্ছ¡াস ও আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়র সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে একদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যাপক প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে, অপরদিকে চট্টগ্রামবাসী প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বরণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনে দাবি কর্ণফুলী নদীর উপর তৃতীয় সেতু স্থাপন তথা আরেকটি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ। চট্টগ্রামের সন্তান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেয়ার পর সেই কাঙ্খিত সেতু বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেন। একনেকে প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন করেন। আজ সেই সেতুর নির্মাণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এ সংবাদ বোয়লাখালীর অধিবাসীসহ পুরো চট্টগ্রামবাসীকে আন্দোলিত করছে। আনন্দিত করছে। আমরা আশা করি উদ্বোধনের পর এ সেতুর কাজ সত্যিকার অর্থে শুরু হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের সমাবর্তন চবিয়ান পরিবারের জন্য এবকটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ৫ আগস্টের পর নতুন উদ্দীপনায় এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের তারুণ্যের কাছে এ সমাবর্তন হবে প্রেরণার। গত সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, সমাবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অতিথিসহ প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসার জন্য প্যান্ডেল তৈরি হচ্ছে। সমাবর্তনে ৪২ জনকে পিএইচডি, ৩৩ জনকে এমফিলসহ মোট ২২ হাজার ৫৮৬ শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি দেওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টা গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। অধ্যাপক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, সমাবর্তনের বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অংশগ্রহণকারীদের থেকে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে এই ছয় কোটির মধ্যে দুই কোটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হবে। সেই হিসাবে প্রায় ১০ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি থাকছে। অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে প্যান্ডেল, সাজসজ্জা ও আসন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে। এসময় উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের সমাবর্তন পাওয়ার যে অধিকার, সেটা থেকে তাঁরা সাড়ে ১৪ বছর বঞ্চিত ছিলেন। এ কারণেই সমাবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপাচার্য আরও বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ডিগ্রির অভাব নেই। এরপরও তাঁকে আমরা সম্মানিত করতে চেয়েছি। তাঁকে সম্মানিত করতে পারলে বিশ্বব্যাপী আমরাও সম্মানিত হব।’
আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ড. ইউনূসের প্রথম চট্টগ্রাম সফর। এ সফর এবং সমাবর্তন ঘিরে পুরো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছে নতুন রূপে। পুরো চট্টগ্রাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ সম্পাদকীয় স্তবক যখন লেখা হচ্ছে, তখনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে দেশ বিদেশ থেকে কনভোকিদের আগমন ও আনন্দ উচ্ছ্বাসের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে আসছে। গত সোমবার থেকে কনভোকিদের অগ্রিম গাউন, হুড ও টুপি দেওয়া শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে ওঠতে শুরু হয়েছে গ্রাজুয়েটদের পদচারণায়। মাথায় কালো টুপি, গায়ে গাউন আর হুড। দলবেঁধে ছোটাছুটি করছেন প্রিয় আঙ্গিনাজুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ক্যাম্পাসের আকর্ষণীয় স্থানগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন গ্রাজুয়েটরা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করে কেউ চাকরিতে প্রবেশ করেছেন আবার কেউবা এখনও বেকারত্ব ঘুচানোর চেষ্টায় আছেন। তবে সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে চাকরি বা বেকারত্ব কোন কিছুরই যেন ছাপ নেই। সবাই মেতেছেন আনন্দ উল্লাসে। আমরা সবুজে ঘেরা মনোমুগ্ধকর ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনের সফলতা কামনা করছি। সেই সাথে প্রধান উপদেষ্টার আগমনকে স্বাগত জানাচ্ছি।