নিজস্ব প্রতিবেদক
শীর্ষ ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ গ্রেপ্তারের পর দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়েছে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানেও। তবে পুলিশ একটি অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ জানায়, আসামি ধরা পড়ার পর তার সাথীরা অস্ত্র হাতবদল করে। তখন জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যে অভিযান চালিয়েও অস্ত্রের সন্ধান মেলেনি।
গতকাল রবিবার বিকেল ৩টায় নগরীর দামপাড়ায় পুলিশ লাইন্সের মিডিয়া সেন্টারে বাকলিয়ার জোড়া খুন মামলার অগ্রগতি ও আসামি গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন নগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন।
নগরের বাকলিয়ায় ঘটা জোড়া খুনের মামলার তদন্তে ‘যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে’ দাবি করে তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িত ৬ আসামি এবং ব্যবহৃত অস্ত্র-গাড়ি উদ্ধার হওয়ায় খুব দ্রæতই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে এর আগে পলাতক ৪ আসামিকে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে তাদের।
তিনি আরও বলেন, ‘ছোট সাজ্জাদকে ধরার প্রেক্ষিতেই বাকলিয়ার জোড়া খুন হয়েছে। ওই মামলার যে প্রধান আসামি তাকে (হাসান) আমরা গতকাল বিদেশি পিস্তলসহ ধরেছি। এটা ৭.৬৫ এমএম ইউএসএ’র তৈরি। আমরা ধারণা করছি এই অস্ত্রটাই খুনে ব্যবহৃত হয়েছে। আমরা আরও কনফার্ম হতে পারবো রিপোর্টের পরে। রিপোর্টটি পেলেই আমরা কনফার্ম হবো উদ্ধারকৃত গুলির খোসাগুলো ওই পিস্তল থেকে বের হয়েছে কি না।’
জোড়া খুনের মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িত এর আগেও অনেক আসামিকে আমরা ধরেছি। এ পর্যন্ত মোট ৬ জন আসামিকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এদের মধ্যে একজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন এবং এই মামলায় কে কে কিভাবে জড়িত— সেই পূর্ণাঙ্গ বিবরণ আদালতকে জানিয়েছেন। ফলে সামগ্রিকভাবে আমরা মনে করছি, এই মামলার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং প্রায়ই ম্যাক্সিমাম আসামিসহ ব্যবহৃত গাড়ি, মোটরসাইকেল-এগুলো আমাদের হেফাজতে আছে। আরও চারজন আসামি পলাতক আছে। এরা মধ্যম সারির। এদেরকেও শিগগিরই গ্রেপ্তার করে ফেলবো। আমরা আশা করছি এভাবে আমরা যদি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান করতে পারি, সিএমপি তথা চট্টগ্রাম মহানগরী নিরাপদ থাকবে।’
বাকি আসামিদের ধরে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান আসামিগুলো এরইমধ্যে আমরা ধরে ফেলেছি। অস্ত্র উদ্ধারও হয়ে গেছে। ব্যবহৃত গাড়িও উদ্ধার হয়েছে এবং জবানবন্দিও হয়ে গেছে। ফলে এই মামলায় যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, আমরা চাইলেই চার্জশিট (অভিযোগপত্র) পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারি। তবে আমরা বাকি ৪ আসামিকে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করবো।’
ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী খানের সম্পর্ক রয়েছে কিনা-প্রশ্নের জবাবে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ছোট সাজ্জাদকে যখন রিমান্ডে আনা হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারেছি তার সঙ্গে বড় সাজ্জাদের একটা সম্পর্ক আছে। সম্পর্কটা এমন যে বড় সাজ্জাদ ছোট সাজ্জাদকে অস্ত্র পর্যন্ত উপহার দিয়েছে। এমন তথ্যও আমাদের কাছে আছে। কিন্তু সরাসরি জোড়া খুনের মামলায় যোগসূত্র আছে এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ আমরা পাইনি। তাই আমরা বলছি না বড় সাজ্জাদ জড়িত। তবে তদন্তের পর যদি ন্য‚নতম সম্পৃক্ততা থাকে, তবে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তাছাড়া আরও বড় কেউ আছে কিনা সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি। কিছু নাম আমরা পেয়েছি। সেগুলো এখনই আমরা বলছি না তদন্তের স্বার্থে।’
সাজ্জাদকে রিমান্ডে নেওয়ার পর অস্ত্র উদ্ধার গেল না কেন-সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা এটা জানেন যে, যখন আসামি ধরা পড়ে যায় তখন তার সাথে যে লিংকগুলো থাকে, তারা কিন্তু তার জানামতে অস্ত্রগুলো সেই জায়গায় রাখে না। কারণ তারা জানে যে, রিমান্ডে হয়তো অস্ত্রগুলো কোথায় আছে সেটি বলে দিতে পারে। সেজন্য সাজ্জাদ ওইসময় অস্ত্রগুলোর কথা আমাদের কাছে বললেও পরবর্তীতে অস্ত্রগুলো ওই জায়গা থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধরা পড়লেই সবাই কিন্তু জেনে যায় সে ধরা পড়ছে। তখন ওরা এগুলো ভিন্ন জায়গায় রাখে। সেজন্য যখন সে ধরা পড়েছে অস্ত্রগুলো সরানো হয়েছে। বিভিন্ন হাতবদল হয়েছে।
জোড়া খুনের মামলায় গত শনিবার গ্রেপ্তার প্রধান আসামি হাসানের হত্যাকান্ডে ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে সিসিটিভি ফুটেজ আমরা জব্দ করেছি। সেখানেই হাসানের হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, উপস্থিতি প্রমাণিত। সেখানে সন্দেহের কিছু নাই। আমরা এটাও বলেছি যে অস্ত্রটা হাসানের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সেটিও খুনের সময় ব্যবহার করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ ধরে ধরেই এই আসামিদের গ্রেপ্তার করছি।’
ঘটনার নেপথ্যের কারণ ‘ঝুট ব্যবসার (পরিত্যক্ত কাপড়) নিয়ন্ত্রণ’ উল্লেখ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বায়েজিদ বোস্তামি এলাকায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঝুট ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে একটা রেশারেশি ছিল। ঘটনার সূত্রপাত কিন্তু বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায়। ঘটনার ফলাফল কনসিকুয়েন্সে (পরিণতি) এসে বাকলিয়ায় হয়েছে। এরা সবাই কিন্তু বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার এবং ওখানকার ব্যবসাকেন্দ্রিক একটা রেশারেশি ছিল। তারা টার্গেটকে বাকলিয়া এলাকায় পেয়েছে তাই সেখানে হত্যাকান্ডটি বাকলিয়া এলাকায় হয়েছে। এছাড়া বায়েজিদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে বড় সাজ্জাদের অনুসারী হয়ে ছোট সাজ্জাদের গ্রুপের শক্তি প্রদর্শন, এটাও একটি রেশারেশির বিষয় ছিল। একই এলাকায় সাজ্জাদের নেতৃত্বে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করাও একটা বিষয় ছিল। আর ছোট সাজ্জাদকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা যারা করছে বলে তারা মনে করছে সেই কনসিকুয়েন্সটাও এখানে ছিল। যে তোমরা জানাইছো বা ওই লোক জানাইছে। এটা থেকেও এ হত্যাকান্ডের যোগসূত্র আছে বলে আমরা মনে করছি।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন এলাকায় ছোট সাজ্জাদকে ধরতে অভিযানে যায় বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ। ওই সময় গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে যান তিনি। এতে পুলিশসহ ৫ জন আহত হন। পরে একই থানার ওসিকে ফেসবুক লাইভে এসে পেটানোর হুমকি দেন তিনি। এরপর চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন নগর পুলিশ কমিশনার।