সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চলবে

17

বান্দরবান প্রতিনিধি

তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান এক সময় ‘খুব শান্তিপ্রিয়’ ছিল দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বেেছলন, সম্প্রতি সশস্ত্র ব্যক্তিরা ব্যাংক ডাকাতির মত বড় ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে। এর আগেও গোষ্ঠীটি বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে। এসব কার্যক্রম আমরা আর বিনাচ্যালেঞ্জ হিসেবে নেব না। এদের পেছনে কোনো ইন্ধন আছে কি-না তাও বের করা হবে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
গতকাল শনিবার সকালে বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংক ও রুমা উপজেলা কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে বান্দরবান সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে বান্দরবানে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলা পরিষদ এলাকায় সোনালী ব্যাংকে গ্রিল ভেঙে হামলা চালিয়ে ডাকাতি ও পরে ব্যাংকের ভল্ট খুলতে চেষ্টা করে একদল সশস্ত্র লোক।
এ ছাড়া নিরাপত্তারক্ষীদের ১৪টি অস্ত্র ও গুলি লুট এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণের ঘটনা ঘটে। রুমায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বেধড়ক মারধরের শিকার হন নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্য। ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে বুধবার দুপুরে থানচি উপজেলার সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে সশস্ত্র হামলা করে টাকা লুট করা হয়।
দুটি ঘটনাতেই পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের নাম আসে; যারা পাহাড়ে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত।
বৃহস্পতিবার রাতে অপহৃত ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করে র‌্যাব। এর কিছু পরেই থানচিতে ব্যাপক গোলাগুলি ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনায় রুমা ও থানচি উপজেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে, ব্যাংক ডাকাতি, ব্যবস্থাপককে অপহরণ, অস্ত্র লুটের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রুমা থানায় চারটি ও থানচি থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বান্দরবানের রুমায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বেলা পৌনে ১১টায় রুমায় পৌঁছানোর পর প্রথমে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, আনসার ব্যারাক, সোনালী ব্যাংক ও মসজিদ পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
রুমা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষের তিনি দুপুর ১২টায় বান্দরবান সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক মিলিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রুম ও থানচিতে ব্যাংকে হামলাকারীরা কেএনএফের সদস্য। পার্শ্ববর্তী দেশের সন্ত্রাসীদের থেকে তাদের হাতে অস্ত্র এসেছে। এসব সন্ত্রাসীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। কোনো অবস্থায় পার্বত্য এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হতে দেওয়া যাবে না। যেকোনো মূল্যে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। আমরা এখানে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, বিজিবির সংখ্যা বৃদ্ধি করবো, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় সবই করবো। প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনীকে একটা নির্দেশনা দিয়েছেন সবাই মিলে একটা যৌথ অভিযান চালানো হবে।
এ সময় তিনি বলেন, একটি সশস্ত্র সংগঠন তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা মনে করি, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে অপরাধ করেছে। কাজেই রাষ্ট্র চুপ থাকতে পারে না, আমরা এ জন্য যা যা করণীয় তা করবো। আইনশৃঙ্খলার জন্য আমরা পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি করব, সীমান্তে বিজিবি বৃদ্ধি করব।
মন্ত্রী বলেন, তার আগে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তাই করব। এ সময় মন্ত্রী ‘কোনো ধরনের অস্ত্রধারীকে’ বাংলাদেশের ভূখন্ডে থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, আমরা অনেক ধৈর্য নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি; বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাদের সঙ্গে দুবার আলোচনায় বসেছেন। কিন্তু আলোচনায় না গিয়ে তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য তারা এই ধরনের কর্মকান্ড করেছে।
তিনি আরো বলেন, যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা যদি বিদেশেও আশ্রয় নেয়, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত এনে বিচারের ব্যবস্থা করব।
আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার, জনগণ চাইলে কেএনএফের সঙ্গে আবারো শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সংলাপ হতে পারে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক ডাকাতির মত ঘটনায় কোনো সংস্থার দায়িত্ব পালনে কোনো ঘাটতি বা গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন-চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মাহাবুবুর রহমান, আনসার ভিডিপি প্রধান মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, বান্দরবান সেনা রিজিয়ন কমান্ডার মেহেদী হাসান, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।