সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী
সত্যবাদিতা মুমিনের উন্নত চরিত্রের বৈশিষ্ট্য, মানবীয় সৎ গুণাবলীর অন্যতম এবং সৌন্দর্যময় জীবনের প্রশংসনীয় অর্জন। সত্যবাদিতা এমন এক গুণ, যা মানুষকে মানবীয় সবধরনের গুণাবলি অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করে। এটি কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়-নিষ্ঠা, আমানতদারীতা, সাহসিকতা, একনিষ্ঠতা, দয়াশীলতা, স্নেহপরায়ণতা, সত্য প্রকাশে নির্ভীকতা, ন্যায়ের ওপর অবিচলতা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা ইত্যাদি গুণাবলি অর্জনে অত্যন্ত সহায়ক। সত্যবাদিতার মহৎ এ গুণ মানব চরিত্রকে যেমন সৌকর্যময়, শুভমন্ডিত ও ঈর্ষণীয় করে তোলে, তেমনি তনুমনকে করে উদ্বেলিত, স্পন্দিত, সুরভিত ও প্রফুল্লিত। যেই গুণটি মানুষকে দুনিয়াতেও সম্মানিত করে এবং পরকালেও মান সম্মান বৃদ্ধি করে দেয়। সত্যবাদী ব্যক্তি মানুষের কাছে যেমনিভাবে প্রিয় ও নির্ভরযোগ্য; অনুরূপভাবে আল্লাহতালার কাছেও অতি প্রিয় ও পছন্দনীয়। তাই সত্যবাদী সবখানেই নন্দিত ও সবার জন্য অনুপম আদর্শ। সত্যের মহিমা, কর্মের দীপ্তি ও সফলতায় উদ্ভাসিত স্নিগ্ধ আলো। সৎ ব্যক্তির জীবন হয় ঈমানি আবেশে প্রাণময়, নৈতিক ভাবাবেগে মধুময়। সে সবার কাছে যেমন গ্রহণযোগ্য, মাননীয় এবং শ্রদ্ধেয় হয়, তেমনি হয় সবখানে বরিত, প্রশংসিত এবং সমাদৃত।
সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায় : সত্যবাদিতা মানুষকে পূণ্যের দিকে নিয়ে যায় এবং মিথ্যা মানুষকে অশ্লীলতার দিকে ঠেলে দেয়। তাইতো প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের জন্য সত্যবাদিতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা সত্য পুণ্যের দিকে নিয়ে যায়। আর পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলতে চেষ্টা করে, আল্লাহর নিকট তাকে ‘সিদ্দীক্ব’ (পরম সত্যবাদী) বলে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। মিথ্যা পাপাচারের দিকে নিয়ে যায় এবং পাপাচার জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যা বলতে চেষ্টা করে, আল্লাহর নিকট তাকে ‘কায্যাব’ (মহা মিথ্যাবাদী) বলে লিপিবদ্ধ করা হয়’।[ বুখারী হা/৬০৯৪; মুসলিম হা/২৬০৭]
সত্য সর্বদা মানুষকে সুপথে পরিচালিত করে, কল্যাণের পথ দেখায়, নাজাতের সন্ধান দেয়। সত্যবাদিতা শুধু দুনিয়াতে নয়, আখেরাতেও মহাপুরস্কার এনে দেবে। জাহান্নামের লেলিহান শিখা থেকে পরিত্রাণ দেবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা তারা সত্যে পরিণত করত, তবে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হতো।’ (সুরা মুহাম্মদ : ২১)।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘সত্যবাদিতা পুণ্যময় কাজ। আর পুণ্য জান্নাতের পথে নিয়ে যায়। অপরপক্ষে মিথ্যা হচ্ছে মহাপাপ। আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়’।[ মুসলিম হা/২৬০৭]
সত্যবাদিতা একদিকে যেমন মানুষের ইহকালীন জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও সফলতা বয়ে আনে, তেমনি পরকালে অনিন্দ্য সুন্দর জান্নাতেরও নিশ্চয়তা দান করে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘এ হচ্ছে সেই দিন, যেদিন সত্যবাদীরা তাদের সত্যবাদিতার জন্য কল্যাণ লাভ করবে। তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত, যার তলদেশ থেকে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই মহাসাফল্য।’ (সুরা মায়িদা : ১১৯)।
সত্য মানুষের আত্মাকে প্রশান্তময় করে। সত্য হৃদয়ের শান্তি ও স্বস্তি এনে দেয়। দূর করে দেয় দ্বিধা-সংশয় ও অস্বস্তি। আর মিথ্যা মানুষকে লিপ্ত করে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা পরিত্যাগ করে যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই তা গ্রহণ কর। কেননা সত্য হচ্ছে প্রশান্তি আর মিথ্যা হচ্ছে সন্দেহ’।[ তিরমিজি : ২৫১৮]
তাইতো সততা ও সত্যবাদিতার মাহাত্ম্য বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নিকট তার চোয়ালদ্বয়ের মধ্যস্থিত বস্তু জিহবা ও পদদ্বয়ের মধ্যস্থিত বস্তু লজ্জাস্থানের যামিন হ’তে পারবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হবে’।[ বুখারী হা/৬৪৭৪]
সত্যের বিপরীত হলো মিথ্যা। সত্য ও মিথ্যা বিপরীতমুখী দুই বৈশিষ্ট্য। সত্য ও মিথ্যা কখনো এক হতে পারে না। সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী-পরস্পরবিরোধী দুটি স্বভাববৈশিষ্ট্য কোনো মুমিন একইসঙ্গে ধারণ করতে পারে না, যেমন আলো ও অন্ধকার একইসঙ্গে থাকতে পারে না। মিথ্যাই হলো সব অনর্থের মূল। ঝগড়া-বিবাদ, হানাহানি, খুনোখুনি সব মিথ্যা থেকেই জন্ম হয়। মিথ্যাকে মূলোৎপাটন করতে না পারলে আদর্শ ও সভ্য সমাজ গঠন করা যাবে না। মিথ্যা সব জায়গায় নিন্দিত, ঘৃণিত এবং প্রত্যাখ্যাত হয়। যার রক্ত-মাংসে মিথ্যা মিশে যায়, সে নীচতা, হীনতা ও ইতরতার চরমে পৌঁছে যায়। ফলে মিথ্যার অসহনীয় দুর্গন্ধে তার জীবন যেমন বিষিয়ে ওঠে, তেমনি সে তলিয়ে যায় অপমান, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার চোরাবালিতে। তাই ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য হলো সত্যকে গ্রহণ করা আর মিথ্যাকে বর্জন করা।
মিথ্যা শুধু মহাপাপ নয় বরং তা মিথ্যাবাদীকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে অবহিত করব না, সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? আমরা বললাম জ্বী, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সাথে শরীক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া’। তিনি একথাগুলি হেলান দেওয়া অবস্থায় বলেছিলেন। অতঃপর তিনি সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘মিথ্যা কথা থেকে সাবধান!’ তিনি এ কথাটি বারংবার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা মনে মনে বলতে লাগলাম আহ্! তিনি যদি আর উক্ত কথাগুলি না বলতেন’।[ বুখারী হা/২৬৫৪; মুসলিম হা/৮৭]
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মিথ্যাবাদী কাফিরকে সরল পথে পরিচালিত করেন না’ (যুমার ৩৯/৩)।
হৃদয়ের পবিত্রতা ও কর্মের স্বচ্ছতাও সত্যবাদিতার অন্তর্ভুক্ত : সত্যবাদিতা ও সততা শুধু মুখের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়; এর পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক, সুদূরপ্রসারী। হৃদয়ের পবিত্রতা ও কর্মের স্বচ্ছতাও এর অন্তর্ভুক্ত। অন্তরের সততা হলো, একে কপটতা, ছলনা, প্রতারণা, ধোঁকা ও দ্বিমুখী মানসিকতা থেকে পবিত্র রাখা। আর কর্মের সত্যতা হলো, কথা ও কাজে মিল থাকা; নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা; হালাল পন্থায় উপার্জন এবং সৎকাজে ব্যয় করা। এ কাক্সিক্ষত গুণ যাদের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে পাওয়া যায়, কোরআন মাজিদের পরিভাষায় তাদের প্রকৃত সত্যবাদী বলা হয়। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘পুণ্য তো শুধু এটাই নয় যে, তোমরা নিজেদের চেহারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাবে; বরং পুণ্য হলো (সেই ব্যক্তির), যে ঈমান রাখে আল্লাহর, শেষ দিনের ও ফেরেশতাদের প্রতি এবং (আল্লাহর) কিতাব ও নবীদের প্রতি। আর আল্লাহর ভালোবাসায় নিজ সম্পদ দান করে আত্মীয়-স্বজন, এতিমন্ডমিসকিন, যাচনাকারীদের, দাসমুক্তিতে এবং সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় এবং যারা কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণে যতœবান থাকে এবং সংকটে-কষ্টে ও যুদ্ধকালে ধৈর্যধারণ করে, এরাই প্রকৃত সত্যবাদী এবং মুত্তাকি।’ (সুরা বাকারা : ১৭৭)।
সম্মানিত নবী-রাসূলগণ ছিলেন সত্যের মহিমায় চির দীপ্তি ও উদ্ভাসিত : মানবজাতির হেদায়েতের লক্ষ্যে আল্লাহতায়ালা যত নবী-রাসুল দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, সবাই ছিলেন আপন যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী। সত্যের সুবাসিত ফুলের সৗরভে মানবজাতিকে উপহার দিয়েছেন ইহ-পারলৌকিক সুখ, সাফল্য ও সমৃদ্ধিময় জীবন। পাপাচার, দুষ্কৃতি, কুসংস্কার, দুষ্টু স্বভাব ও নিকৃষ্ট ক্রিয়াকর্মকে নস্যাৎ করে সক্ষম হয়েছিলেন সত্যের মহিমায় উদ্ভাসিত করতে। দয়াময় আল্লাহ বলেন, ‘আপনি এ কিতাবে ইবরাহিমের বৃত্তান্তও বিবৃত করুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ নবী।’ (সুরা মারইয়াম : ৪১)। আরও বলেন, ‘এ কিতাবে ইসমাঈলের বৃত্তান্ত বিবৃত করুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রাসুল ও নবী।’ (সুরা মারইয়াম : ৫৪)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘এ কিতাবে ইদরিসের বৃত্তান্তও বিবৃত করুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন একজন সত্যবাদী নবী।’ (সুরা মারইয়াম : ৫৬)।
নবীজির উপাধি হলো, “আস সাদিক্ব আল আমীন”: বিশ্ব মানবতার অনুপম রূপকার প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সত্যবাদিতা ও সততার মূর্ত প্রতীক। জীবনে কোনোদিন তিনি মিথ্যার আশ্রয় নেননি। প্রতি মুহূর্তে তিনি সত্যকে লালন করেছেন মনের গভীরে। পুরো পৃথিবী যখন দুর্নীতি, ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, এমন সময় তিনি অমানিশার অন্ধকার দূরে ঠেলে বিশ্বভুবনে সত্যের আলো জ্বেলে দিয়েছিলেন। তাই তাঁকে মক্কার মুশরিকরাই ‘আস সাদিক্ব আল আমিন’ (পূর্ণ বিশ্বস্ত ও আমানতদার) উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তাঁর কাছেই লোকেরা নিজেদের মূল্যবান ধন-সম্পদ গচ্ছিত রাখত এবং নিরাপদ মনে করত।
সত্যবাদিতা সুশৃঙ্খল ও গোছালো জীবন উপহার দেয় : কর্মদীপ্ত আর নীতি-নৈতিকতাপূর্ণ সফলতার স্নিগ্ধ আভায় জীবনকে ফলে ফুলে সুশোভিত ও আলোকিত করতে চাইলে; দুষ্কৃতি, কুসংস্কার ও দুষ্টু স্বভাব পরিত্যাগ করে বিশৃঙ্খল, এলোমেলো, অগোছালো জীবনকে শৃঙ্খলার মালা পরাতে চাইলে সত্যকে আঁকড়ে ধরতে হবে। সততা, বিশ্বস্ততা ও সত্যবাদিতার ভূষণে ভূষিত হতে হবে। বস্তুত সত্যবাদিতা মোমিন হৃদয়ে ছড়িয়ে দেয় পবিত্রতার মধুময় আবেশ। মুখরিত করে তোলে পরিবেশ। জীবন-কাননে ফোটায় আলোর ফুল। শুধরে দেয় মানুষের অনাকাক্সিক্ষত ভুল। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা কত উদ্দীপক! মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মোমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য সঠিক কথা বল; তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যাবলি শুধরে দেবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, সে মহাসাফল্য অর্জন করল।’ (সুরা আহজাব : ৭০-৭১)।
সত্যবাদীদের সাহচর্য মানুষকে তাকওয়াবান করে তোলে : সত্য সব সময় মানুষকে কল্যাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, আর মিথ্যা অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। তাই তো আল্লাহতায়ালা তাকওয়া অর্জনের জন্য সত্যবাদীদের সাহচরে্য থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা সত্যবাদীদের সান্নিধ্য, সত্য মুখরিত পরিবেশে বসবাস, আমৃত্যু মিথ্যা বর্জনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, সর্বোপরি মহান রবের সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমে সত্যবাদিতার কাক্সিক্ষত ভূষণে ভূষিত হওয়া সম্ভব। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘হে মোমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক।’ (সুরা তওবা : ১১৯)।
ঈমানদার মিথ্যুক হতে পারেনা : একটি মিথ্যা হাজার মিথ্যার জন্ম দেয়। আবার একটি মিথ্যাকে হাজার মিথ্যা দিয়েও ঢাকা যায় না। মিথ্যা প্রকাশিত হবেই। আর মিথ্যা প্রকাশ হলে মিথ্যাবাদী লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়। মানব সমাজে ঘৃণিত হয়। তাই মুমিনকে সবসময় মিথ্যা পরিহার করে চলতে হবে। ঈমানদারের আচরণে মিথ্যাচারিতা কাম্য নয়। এ মর্মে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, মুমিনের স্বভাবে খেয়ানত ও মিথ্যাচারিতা ব্যতীত সব ধরনের আচরণ থাকতে পারে (মুসনাদে আহমাদ : ২২৮২৭)।
অন্য হাদিসে আছে, একদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, মুমিন কি ভীরু হতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাঁকে আরও জিজ্ঞাসা করা হলো, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, মুমিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি বললেন, না। (মালেক : ১৮৩২)
সততায় বরকত : ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যাবতীয় লেনদেনে সততা বজায় রাখলে তাতে বরকত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যদি ক্রেতা-বিক্রেতা সত্য বলে এবং ভাল-মন্দ প্রকাশ করে, তাহ’লে তাদের লেনদেন বরকতময় হবে। আর যদি উভয়ে মিথ্যা বলে এবং দোষ-ত্রæটি গোপন করে, তাহ’লে এ লেনদেন থেকে বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে’।[ বুখারী হা/২০৭৯; মুসলিম হা/১৫৩২]
সত্যবাদী সব স্থানেই নন্দিত। কুরআন মাজিদে সত্যবাদীদের প্রশংসা করা হয়েছে। তাদের সান্নিধ্য অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।ইরশাদ হয়েছে – ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক’। (সুরা তাওবা: ১১৯)
সত্যবাদিতা পবিত্র জীবন যাপন করার মৌলিক ভিত্তি। সত্যবাদী ব্যক্তি আত্মমর্যাদাশীল হয়। ফলে সে বহু অনৈতিক ও অন্যায় কাজ থেকে অনায়াসেই বেঁচে থাকে। একজন সত্যবাদীর জীবন হয় ফুলের মতো সৌরভময়। ফুল যেমন তার হৃদয়কাড়া সুরভী দিয়ে চারপাশটা মোহিত করে রাখে তদ্রæপ একজন সত্যবাদী মানুষ সত্যবাদিতার সৌরভ ছড়িয়ে পরিবার সমাজকে মোহিত করে রাখে। এভাবে সে দুনিয়ায় সৃষ্টির কাছে এবং আখেরাতে স্রষ্টার কাছে সম্মানজনক মর্যাদাপূর্ণ ঈর্ষনীয় জীবন লাভে ধন্য হয়।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় খতীব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ