পূর্বদেশ ডেস্ক
বিশ্বে দ্রুতগতিতে মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স ছড়িয়ে পড়ায় দেশের তিন বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিমানবন্দরগুলো হলো- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) এমপক্স নিয়ে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঐঝওঅ) এ ঈঅঅই, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, এয়ারলাইনস, রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (ঈউঈ) এবং বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে এয়ারলাইনসগুলোকে সতর্ক থাকতে এবং কোনো লক্ষণযুক্ত যাত্রী থাকলে দ্রæত স্বাস্থ্য বিভাগকে অবহিত করতে বলা হয়। আগমনের ২১ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো দেখা দিলে যাত্রীদের ১০৬৫৫ নম্বরে কল করতেও অনুরোধ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ঐঝওঅ স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে লক্ষণযুক্ত যাত্রীদের মোকাবিলার জন্য ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। লিফলেট প্রদান করছে এবং আগমন স্বাস্থ্য ডেস্কগুলো ২৪/৭ ডাক্তার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ঐঝওঅ আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা থার্মাল স্ক্যানার আর্চওয়ে দ্বারা স্ক্রিন করছে। প্রয়োজন হলে লক্ষণযুক্ত যাত্রীদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক রোগ হাসপাতাল (ওউঐ) এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে পাঠানো হবে বলেও জানানো হয়।
এদিকে আফ্রিকার কিছু অংশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি জনস্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও। আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক এই রোগে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অপারেশনস মেম্বার এয়ার কমোডর এ এফ এম আতীকুজ্জামান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম কামরুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক, ঐঝওঅ, শেখ দাউদ আদনান, পরিচালক, ঈউঈ, ডিজিএইচএস, ডা. নাসির আহমেদ খান, সিনিয়র উপদেষ্টা, আইএইচআর, ডা. এএসএম আলমগীর, জাতীয় পেশাদার কর্মকর্তা, ডঐঙ, এওসি চেয়ারম্যান মিসেস দিলারা আহমেদ, ঐঝওঅ স্বাস্থ্য বিভাগীয় ডা. শামীমা এবং এয়ারলাইনস প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়ায়। এ ছাড়াও সঙ্গম, ত্বকের সংস্পর্শ, কথা বলা বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে। আফ্রিকা, ইউরোপের পর এবার এশিয়ার পাকিস্তানে সর্বশেষ তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) এ ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। কেননা ছোঁয়াচে এ মাঙ্কিপক্স দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে।
কী এই মাঙ্কিপক্স? : আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ছড়িয়ে পড়ে মাঙ্কিপক্স। কথা বলা বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে। ফ্লুর মতো উপসর্গ ছাড়াও এতে পুঁজ ও ক্ষত সৃষ্টি হয়। এর উপসর্গ হিসেবে সংক্রমণের ৬ থেকে ১৩ দিন পর সাধারণত মাথাব্যথা, জ্বর, ফুসকুড়ি বা ঘা এবং মাংসপেশিতে ব্যথা দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময় প্রভাব সামান্য হলেও মৃত্যুও হতে পারে এ রোগে। আক্রান্ত হওয়া ১০০ জনের মধ্যে এই ভাইরাসে মৃত্যু হয় গড়ে চারজনের।
প্রাণঘাতী মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা : দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করতে ডব্লিওএইচও-এর জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণা সংক্রামিত এলাকায় পরীক্ষা, টিকা এবং ওষুধ পাওয়া সহজ করে। এ ছাড়াও এটি ভাইরাস নিয়ে বিদ্যমান কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক প্রচারণা বাড়াতে সাহায্য করে।
কোথায় ঘটছে সংক্রমণ? : এখন পর্যন্ত আফ্রিকার ৩৪টি দেশে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ নথিভুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশেও এই ভাইরাসটিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। ভাইরাসটি মূলত কঙ্গো থেকেই আশপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে সংক্রমণ হয়েছে ১৪ হাজারেরো বেশি এবং মৃত্যু হয়েছে ৫২৪ জনের। যেখানে আগে কখনো সংক্রমণ ঘটেনি সেখানেও রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে আছে বুরুন্ডি, কেনিয়া, রুয়ান্ডা এবং উগান্ডাও।