মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৯নং ওয়ার্ডের হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকার দুঃখগাথায় স্থান করে নিয়েছে একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। শুকনো মৌসুমে ধুলাময় একটি পথ, আর বর্ষায় পরিণত হয় চাষের জমিতে। সড়কটিতে পা ফেলা যায় না। ঘর থেকে কোথাও বের হতেও মন চায়না সেই সড়ক ব্যবহারকারী হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় খেটে খাওয়া মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করতে যেতে পারেন না। এলাকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না। মাসের পর মাস বন্ধ থাকে যানবাহনও। এক কথায় সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে হলে গায়ের পোশাক আর পোশাক থাকে না। সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানেও যেতে পারেন না স্থানীয়রা। কারণ চলাচলের সড়কটি বর্ষা মৌসুমে কাঁদাময় আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিময়। সরকার আসে সরকার যায়; এ সড়কের চেহারা বদলায় না। সড়কটির উন্নয়নে কোনো বরাদ্দও আসেনা। বছরের পর বছর এই একমাত্র সড়কটি দিয়েই সীমাহীন দুর্ভোগ গায়ে নিয়ে যাতায়াত করতে হয় হাজার হাজার মানুষকে।
চন্দ্রঘোনার বনগ্রাম পূর্ব নতুন পাড়ার বাসিন্দা আবদুল কাদের জানান, এ সড়কটি আমাদের সব কিছুতেই পিছিয়ে রেখেছে। সড়কের এখন যে রূপ, তা দেখে বুঝার উপায় নেই এটি একটি সড়ক। দৃশ্যত এটি একটি চাষের জমি মনে হবে। আমরা অমানবিক দুর্ভোগ-কষ্ট নিয়ে অতি জীবন-জীবিকার তাগিদে এই সড়কটি ব্যবহার করছি। কাউকে যদি হাসপাতালে নিতে হয় কাঁধে বহন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। এই সড়কটির এতোই বেহাল দশা যে রাততো দূরের কথা, দিনের বেলাতেই একজন সুস্থ-সবল মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারেন না। এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও কখনো সড়কটির সংস্কারে এগিয়ে আসেননি।
শিক্ষার্থী ফারজানা চৌধুরী জানান, সড়কের সমস্যার কারণে কলেজে যেতে পারছি না। এক কথায় আমরা ঘরবন্দী। পুরুষ মানুষরা যেখানে এক পা দিলে হাঁটু কাদায় বন্দী হয়ে যায় সেখানে নারী-শিশুদের কি অবস্থা বলেন? আমরা এই সড়কের সংস্কার এবং চলাচলের উপযোগী সড়ক হিসেবে দেখতে চাই।
স্থানীয় শিক্ষক ফজলুল করিম বলেন, ‘এভাবে আমাদের গ্রামের প্রধান সড়ক, যে পথে প্রতিদিন স্বপ্ন নিয়ে হাঁটে যায় মানুষ, স্কুলে যায় শিশুরা, বাবার কাঁধে, কখনো মায়ের কাঁধে অসুস্থ সন্তান নিয়ে ছুটে চলা, বৃদ্ধ দাদুর লাঠির একেকটা টোকা জমে থাকে কাদার গভীরে- এই দৃশ্য আমাদের প্রতিনিয়ত দেখতে হয় এই পথে। এই সড়কটি আমাদের শিরা-উপশিরার মতো; তবু বছরের পর বছর পড়ে আছে কাদার তলায়। বর্ষাকালে এ যেন আর পথ নয়, কষ্টের নদ তে পরিণত হয়! পা ফেলা যায় না, সাইকেল চলে না, রিকশ তো দূরের কথা চোখের সামনে জীবন থেমে থাকে কাদার জন্য। তবুও কেউ দেখে না! তবুও কেউ শোনে না! তবুও কেউ জাগে না! আজ আমরা কাঁদছি না, আজ আমরা বলছি এই সড়কটি সংস্কার করুন, এখনই করুন, এটা শুধু মাটি না, এটা স্বপ্নের সিঁড়ি, জীবন বাঁচানোর সড়ক, গ্রামের প্রাণ’।
আমার এই দুঃখভরা আর্তনাদ যেন পৌঁছে যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে- সেই অনুরোধ জানান তিনি।
ইউপি সদস্য মুনিরিয়া চৌধুরী জানান, সত্যি এ সড়কের করুণ চিত্র। যান কিংবা জন চলাচল কি যে কষ্টের তা বুঝানো যাবে না। এটি সংস্কার হলে এলাকার জীবন-জীবিকা বদলে যাবে। পরিবর্তন আসবে সবকিছুতেই। সড়কটির সংস্কারে বড় বরাদ্দের প্রয়োজন। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে সে রকম বরাদ্দ নেই। এলজিআরডি কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান জানান, সড়কটি সংস্কারের প্রয়োজন। আমি এ বিষয়ে দ্রæততার সাথে ব্যবস্থা নিব।