নিজস্ব প্রতিবেদক
মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে গতকাল সোমবার সকালে নগরীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা। সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিতে প্রথমে পুলিশ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মুরাদপুরে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রসেনার নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘আজ (সোমবার) সকাল ৯টা থেকে ১০০ থেকে ২০০ লোক সড়ক অবরোধ করেন। তাদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ঘণ্টাখানেক বোঝানোর পরও তারা মানেনি। তারা রোড বøক করবেই। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।’
ওসি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। হতাহতের বিষয়টি জানা নেই। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আমরা সচেষ্ট থাকব। সাধারণ মানুষ পুলিশের সাথে আছে। তারা চায় না মানুষের দুর্ভোগ হোক। তাই তারা আমাদের সহায়তা করছে।’
যেভাবে সংঘর্ষের শুরু : পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা মুরাদপুর এলাকায় জড়ো হন। তারা সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের একটি দল বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলে। এসময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাদের বাগবিতন্ডা শুরু হয়। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীরাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় সেনাবাহিনীর একটি দল। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোঁটা হাতে ওরা কারা : পুলিশের পাশাপাশি অবরোধ ঠেকাতে একদল লোক লাঠি হাতে তৎপর ছিল মুরাদপুর এলাকায়। তাদের অনেকের মুখে মাস্ক পরা ছিল। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অবরোধকারী একজনকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। পাশ থেকে সাদা পোশাকে মাস্ক পরা একজন আটক যুবকের শরীর তল্লাশি করে। তার হাতে লাঠি ছিল। এসময় আরও কয়েকজনকে লাঠি হাতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীরা বলছে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবির পুলিশের সঙ্গে মিলে হামলা করেছে।
এর আগে গত শনিবার (৩ মে) নগরীতে আয়োজিত এক সমাবেশে ৪ মে ‘মার্চ টু গাজীপুর’ এবং ৫ মে সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন সুন্নাত ওয়াল জামাআতের চেয়ারম্যান আল্লামা কাজী মঈনউদ্দিন আশরাফী।
আমাদের ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, মাওলানা রইস উদ্দিনের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে উপজেলায় সড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন বাংলাদেশ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জমায়াত ও ইসলামী ছাত্রসেনার উপজেলার নেতৃবৃন্দ। গতকাল সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এ অবরোধ কর্মসূচি দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। এ সময় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের উপজেলার বিবিরহাট বাসস্ট্যান্ড, নাজিরহাট ঝংকার মোড়, উত্তর ফটিকছড়ি হেঁয়াকো-গহিরা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এছাড়া ফটিকছড়ি বাস স্টেশন এলাকায় বিজিবির গাড়ি আটকে দেন অবরোধকারীরা। এসময় বিভিন্ন যানবাহনও আটকা পড়ার কারণে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। সড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সড়কে টহলরত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও ফটিকছড়ি থানা ওসি নুর আহমেদসহ সংঙ্গীয় ফোর্স।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, গতকাল গুনাগরি চৌমহনী এলাকায় ছাত্রসেনা ও ইসলামী ফ্রন্টের নেতাকর্মীদের উপর হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে দলের ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতরা হলেন- মাওলানা আবদুর রহিম সিরাজী, মাওলানা ওসমান গণি, তমিজ উদ্দিন, সৈয়দ আরিফ, মনির কাদেরী, হাবিবুল্লাহ (ইফাচ), আবদুল আজিজ, মোহাম্মদ হানিফ, আবু বকর, সোহাইল মাহমুদ, শহিদ উল্লাহ ও খোরশেদ হাশিমী। সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সাথে তর্কাতর্কি থেকে এই হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর বাজার, কালীপুর ইউনিয়নের গুণাগরী মোড়, রামদাসহাট এলাকায় একযোগে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেয় শতাধিক ব্যক্তি। বেলা ১১টার দিকে গুণাগরী মোড়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মুখোমুখি অবস্থান থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং হামলার ঘটনা ঘটে।
বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত) সুধাংশু শেখর হালদার জানান, আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে চলে গেছে। হামলা বা মারামারির ঘটনা আমাদের জানা নেই। অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। কাউকে আটকও করা হয়নি।
চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ৯ টা থেকে দোহাজারী পৌর সদর এলাকায় মহাসড়কের উপর বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। চন্দনাইশ দোহাজারীতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত, ছাত্রসেনা, যুবসেনা, ইসলামী ফ্রন্ট। ডা. কলিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে অবরোধ কর্মসূচি ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চন্দনাইশ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা মো. সোলাইমান ফরুকী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, কাজী শাহাজাহান, আব্দুল মোমেন লাভলু, শরফত আলী, মুহাম্মদ জাকি খাঁন, খয়ের আহমদ রুবেল, রাজিব রিফাত, সেনা নেতা আনোয়ার হোসাইন, সেকান্দর হোসেন
পটিয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে মহাসড়কের ইন্দ্রপোল এলাকায় অবরোধ কর্মসূচী পালন করছেন ইসলামিক ফ্রন্ট, যুবসেনা ও ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি দুই ঘন্টা ধরে চলে। এসময় মহাসড়কে দীর্ঘ যানযট সৃষ্টি হয়। কাগজীপাড়া পটিয়া মডেল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন এবং হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেন। পরে অবরোধ তুলে নিয়ে বিক্ষোভকারীরা মিছিল করে পটিয়া উপজেলা গেটের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেন।
রাউজান প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল ৯টার পর থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরগামী কোন বাস ছেড়ে যায়নি। জরুরি সেবা ছাড়া সড়কে সিএনজি অটোরিকশাও কম দেখা গিয়েছে। প্রতিবাদী স্লোগান, নাতে রাসূল (দ.) ও ইসলামী সঙ্গীতের মাধ্যমে রাজপথে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা।
অবরোধ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাউজান সদরস্থ জলিল নগর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে উপজেলা পরিষদ মাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করে। ইসলামী ছাত্রসেনা রাউজান উপজেলা উত্তর ও পৌরসভা যৌথ আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা ছাত্রসেনার সভাপতি কে এম তাজুল ইসলাম আসিফ। যুবনেতা মাওলানা এম সাইফুল ইসলাম নেজামী ও পৌর ছাত্রসেনার সভাপতি মুহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা ইসলামী ফ্রন্টের আহবায়ক উপাধ্যক্ষ মাওলানা শামসুল আলম নঈমী। বক্তব্য রাখেন মাওলানা শামসুল আলম হেলালী, মাওলানা নেছারুল হক, মাওলানা মনসুর উদ্দিন নেজামী, মাওলানা নেজাম উদ্দিন তৈয়বী প্রমুখ।