পনের বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহের সময় ঢাকার পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকান্ডের ‘সঠিক বিচার’ চাইতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। হত্যাকান্ডের ‘প্রকৃত ঘটনা’ উন্মোচনসহ ‘পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীদের’ বিচার নিশ্চিতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহীর ছেলে আইনজীবী সাকিব রহমান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার মহাখালী রাওয়া হলে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪ জনের হত্যার বিচার এবং শহীদ সেনা দিবসের দাবিতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। খবর বিডিনিউজের।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
গত প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা বিডিআর বিদ্রোহের মামলাটি আপিল বিভাগে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বজনদের জানা নেই দাবি করে সাকিব রহমান বলেন, মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়টাতে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা যারা ভুক্তভোগী, তারাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কীভাবে জানবে?
বিডিআর হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রকারী বিগত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন হচ্ছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কমপ্লেইন ফাইল করব।
বর্তমান সরকারের এতোদিনেও আমাদের জন্য ৫ মিনিট সময় হয়নি, এখন যারা কমপ্লেইন ফাইল করব, সেসব শহীদ পরিবারকে সরকার নিরাপত্তা দিবে আশা করছি। কারণ আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব, তারা গত সরকারের ক্ষমতায় ছিল
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছে ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
গত ৪ নভেম্বর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠান শেষে পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকান্ডের পুনঃতদন্ত ‘অবশ্যই হবে’ বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী লীগ চাইবে না- গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক।
নিহতদের স্বজনদের তরফে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন নিহত কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী। তিনি বলেন, গেজেটের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির আগেই এই দিবস ঘোষণা করে সেদিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার দাবি জানান তিনি।