পূর্বদেশ ডেস্ক
নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্তত তিন সুপারিশ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। বিশেষ করে বিদায় নেওয়ার পর ইসির বিষয়ে তদন্তভার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির হাতে দিলে এবং সীমানা পুননির্ধারণ ও ভোটার তালিকা নিয়ে স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ করার সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে তা ইসির স্বাধীনতা ‘খর্ব করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন বিষয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন আয়োজিত ‘আরএফইডি টক’ অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন সিইসি। খবর বিডিনিউজের।
এ অনুষ্ঠানে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সারসংক্ষেপ নিয়ে ইসির অবস্থান তুলে ধরেন সিইসিএএমএম নাসির উদ্দিন। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির কথাও বলেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গত ১৫ জানুয়ারি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫০টি সুপারিশ সম্বলিত প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করেছে।
এর মধ্যে একটি সুপারিশে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনাররা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে এবং শপথ ভঙ্গ করলে মেয়াদ পরবর্তী সময়ে উত্থাপিত অভিযোগ প্রস্তাবিত সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর বিধান করতে হবে।
ভবিষ্যতে সীমানা নির্ধারণে আলাদা স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করার কথা বলা হয়েছে অন্য দুই সুপারিশে।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সারাংশ ইতোমধ্যে ‘গোচরীভূত’ হয়েছে বলে জানান সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন।
ইসির চারটি ‘সাংবিধানিক ম্যান্ডেটের’ কথা তুলে ধরেন সিইসি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংসদ নির্বাচন, ভোটার তালিকা ও সীমানা পুননির্ধারণ। এ চারটির বাইরে সংবিধানে ক্ষমতা দেওয়া না থাকলেও অন্য কোনো নির্বাচনের মধ্যে স্থানীয় সরকার অনুরাধ করলে কমিশন আয়োজন করে।
ভোটার তালিকা ও সীমানা পুননির্ধারণের ক্ষমতা ইসির কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশে নাখোশ সিইসি বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষমতা ইসির কাছ থেকে সরিয়ে নিলে বা এমন কোনো শর্ত আরোপ করলে যাতে কমিশন অভিযোগগুলোর সুরাহা করতে না পারে বা বিবেচনার সময় বাধার সৃষ্টি হয়, তাহলে বিশাল একটা সমস্যা দেখা দেবে।
সিইসি বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ ইসির সাংবিধানিক ম্যান্ডেট, এটার উপর ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। এখন স্বাধীন একটা প্রতিষ্ঠানকে আমি যদি বলি ডিলিমিটেশন করে দেন, উনি উনার মত টাইমলি একটা দেবেন। তখন ডিলিমিটেশন করতে করতে ইলেকশনের ডেটই পার হয়ে যাবে। কারণ এতে ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকবে না; উনি তো স্বাধীন কর্তৃপক্ষ।
টাইমলি কমপ্লিট করা এবং প্রপারলি কমপ্লিট করা, যেটা কন্সটিটিউশনাল ম্যান্ডেট-এটা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষকে দেওয়াটা আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করি না।
ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম স্বাধীন করার সুপারিশ নিয়েও আপত্তি জানান সিইসি।
নাসির উদ্দিন বলেন, ভোটার এনআইডি কার্ড, ভোটার রেজিস্ট্রেশন যেটা উনারা বলেছেন পরবর্তী পর্যায়ে একটা আবার স্বাধীন অধিদপ্তর/পরিদপ্তরে হ্যান্ডওভার করার জন্য সাজেস্ট করছেন। আমি ভোটার লিস্ট করব, আর অন্য এক কর্তৃপক্ষ এটার দায়িত্বে থাকবে! তাহলে ইসির নিয়ন্ত্রণ থাকবে? মার্চ মাসে হালনাগাদ শুরু করার কথা, এখন আমরা জানুয়ারির ২০ তারিখ শুরু করে দিয়েছি, ৬৫ হাজার লোককে মবিলাইজ করেছি। মে মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। আরেকটা কর্তৃক্ষকে দিলে আমার কি তার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে? ইটস ইমপসিবল।
নির্বাচন কমিশনার যদি ব্যর্থ হন বা শপথ ভঙ্গ হয়, তাহলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে তদন্তের সুপারিশ নিয়েও তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন সিইসি নাসির উদ্দিন।
সাবেক এই আমলা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যেমনভাবে পার্লামেন্টারি ইলেকশন হবে, কেয়ার গর্ভমেন্ট না থাকলেও লোকাল গভার্নমেন্ট ইলেকশনটাও কোয়ালিটি ইলেকশন হবে যদি ইসির স্বাধীনতা অক্ষুণœ থাকে। সুন্দর ইলেকশন হবে। কিন্তু পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটির হেফাজতে দিয়ে দিলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে; এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না।
ইসির জনবল, বাজেট ইত্যাদির দায়িত্বও সংসদীয় কমিটির হাতে দেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন, যা নিয়ে আপত্তি আছেন সিইসির।
সিইসির মতে, সংস্কার কমিশন বিষয়গুলো ‘যৌথভাবে’ করার কথা বললেও তাতে ইসির ‘আসল কাজ’ বিঘিœত হবে।
নতুন ইসি গঠনে বিদ্যমান আইন সংস্কার করে ‘সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের খসড়া’ প্রস্তাব নিয়েও সমালোচনা করেন সিইসি।