সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপণ জাতি মানবে না

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

সংস্কারের বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার ‘বেশি সময় নেওয়ার কৌশল নিলে’ জাতি তা মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, নির্বাচনমুখী সংস্কারের জন্য যে সমস্ত সংস্কার স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়ন করা দরকার, আপনারা সেটা চিহ্নিত করুন এবং সকল মহলের সাথে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করুন এবং সেটার আইনি সংস্কার করুন। আইনি সংস্কারের পর যদি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করার দরকার হয় সেটা করবেন, এর জন্য কত সময় লাগবে আমরা জানি।
বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চেয়ে এলেও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা আগে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সারার ওপর জোর দিচ্ছেন। খবর বিডিনিউজের।
আগামী নির্বাচন কবে হবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার কতটা করে ভোটে যাওয়া হবে তার ওপর নির্ভর করে ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। তবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য এত সময়ের প্রয়োজন নেই।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায় সমাপ্ত করে এনেছে। আমাদের কাছে তালিকা আছে। মার্চের ২ তারিখের মধ্যে একটা পরিষ্কার ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়ে যাবে। এরপর শুনানি আপত্তি চলবে সেটা ধারাবাহিক প্রসেস এবং সেটাও মাস দুয়েকের ভেতরে হয়ে যাবে। সেই প্রজ্ঞাপনও আমরা পেয়েছি নির্বাচন কমিশন থেকে। সুতরাং বেশি সময় নেওয়ার জন্য আপনারা কোনো কৌশল অবলম্বন করলে জাতি সেটা মেনে নেবে না।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনারা সংসদ নির্বাচন দিতে দেরি করলে জনগণের সামনে তার যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন। আপনারা কি যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন? আপনারা কি আমাদের বক্তব্য কানে তোলেন?
গতকাল বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তরের প্রসঙ্গ টেনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সংস্কারের সকল রিপোর্ট জমা হবে। জানুয়ারিতে আলোচনা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এবং যারা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিতত্ব করেন সামাজিক শক্তিগুলোর সাথে। জানুয়ারি পার হয়ে গেল, আজকে ফেব্রæয়ারির ৫ তারিখ। এখন বলছেন মধ্য ফেব্রæয়ারিতে আলোচনার জন্য তারা প্রস্তুত হবেন। তারপরে কতদিন আলোচনা করবেন জানি না।
আবার আজকে (বুধবার) পত্রিকায় দেখলাম, মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, শেখ হাসিনা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করেছে। তো শেখ হাসিনার দোসররা তো আপনার উপদেষ্টা পরিষদেও অন্তর্ভুক্ত আছে। আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম আপনি তাদেরকে বাদ দেন নাই। শেখ হাসিনার দোসররা প্রশাসনে আছে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। আমরা বলেছিলাম ফ্যাসিবাদের দোসরদের বহাল রেখে আপনি বেশি দূরে যেতে পারবে না। আপনি কিছু কিছু শুনেছেন। মনে হয়েছে এত শ্লথ গতি, যে আপনি কি সংস্কার করবেন আমাদের বোধগম্য নয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রতিবেদনে কি আসছে আমি জানি না। তবে এই সমস্ত নিশিরাতের বিচারকদের বহাল রেখে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে স্বাধীন করা যাবে কিনা, রাখা উচিত হবে কিনা, আমার সন্দেহ আছে। সরিষার ভেতরে ভূত রেখে কখনো মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আপনি সফল হতে পারবেন না।
২০২৩ সালে বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ ধরে দলটির এই নেতা বলেন, আমরা মূলনীতিগুলো ৩১ দফা উদ্ধৃত করেছি। সংস্কার কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার জনগণের কাছে যাবে এবং জনগণের চাহিদা অনুযায়ী এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো গঠন করবে এবং জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সেই সংস্কারগুলো গ্রহীত হবে এবং সেটা বাস্তবায়ন হবে তাহলেই জাতির মঙ্গল।