সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা ও আন্তরিকতাই যথেষ্ট

2

‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’ বাংলা ভাষায় এ বচনটির সত্যতা প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে কোন না কোনভাবে ঘটে। চট্টগ্রাম নগরীর অধিবাসীদের বেলায় এ কথাটির সত্যতা শতভাগ। একসময় চট্টগ্রাম নগরীর দুঃখ বলতে বুঝানো হতো চাকতাই খালকে। কারণ এখালটি দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় চাকতাই খালকেন্দ্রিক জলাবদ্ধতা দেখা দিত। ক্রমান্বয়ে এ জলাবদ্ধতা পুরো চট্টগ্রামকেই গ্রাস করে। কারণ মানব সৃষ্ট সংকটের কারণে নগরীর ৫৪টি খালের প্রায় সবকটিই অবৈধ দখল ও ভরা হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের আর কোন বিকল্প ছিল না। এরফলে নগরীর দুঃখ হিসেবে ক্রমান্বয়ে জায়গা দখল করে নেয় জলাবদ্ধতা। এক ফসলা বৃষ্টি মানে নগরীর নির্দিষ্ট কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া। এর থেকে রেহাই পেতে চট্টগ্রাম নগর কর্তৃপক্ষ মরিয়া হয়ে উঠত। প্রকল্পের পর প্রকল্প গ্রহণ করে কুলকিনারা পাওয়া মুশকিল হয়ে উঠে। সর্বশেষ বিগত সরকারের আমলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), ওয়াসা, বন্দর ও সিটি কর্পোরেশন মিলে সাড়ে এগারো হাজার কোটি টাকার ছোট বড় বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। এরপরও জলাবদ্ধতার লাগাম টেনে ধরা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সর্বশেষ দেখা যায়, প্রকল্পের সঠিক তদারকি না করা, নালা-নর্দমাগুলো সঠিক সময়ে পরিষ্কার না করা এবং উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে জলাবদ্ধতার সংকট থেকে মুক্তি মিলছেনা। এবার সেই সমস্যার ইতি টানলেন সিটি মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন। বলতে দ্বিধা নেই তার ডাইনেমিক নেতৃত্ব, জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল নগর সেবা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় এবং মেয়র নিজেই তদারকি করায় এবার লাগাতর ভারি বৃষ্টিতে নগরী অনাকাক্সিক্ষত জলাবদ্ধতার কবলে পড়েনি। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত গণমাধ্যমকে বলেছেন, “পানি প্রবাহের পথগুলো পরিষ্কার থাকায় পানি জমতে পারছে না।” গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা চারদিন নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরীতে অতি ভারি বৃষ্টি ঝরলেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। পতেঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত একদিনে ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে বর্ষায় সচরাচর যেসব স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, সেসব জায়গায় রবিবার পর্যন্ত জলাবদ্ধতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। যদিও মাঝেমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পানি দ্রুত সরে যাওয়ায় বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি নগরবাসীকে। চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ কয়েকটি এলাকা জলাবদ্ধতা প্রবণ। প্রতি বর্ষায় ভারি বৃষ্টি হলে এসব এলাকা এক থেকে একাধিকবার তলিয়ে যায়। নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন “গত শুক্রবার, শনিবার ভারি বৃষ্টির পরও সকালে বহদ্দারহাট মোড়ে পানি দেখিনি। এর অন্যতম কারণ এখানে নালার উপর একটা মার্কেট ছিল। “চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক সেটা কয়েক মাস আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে। খালও মোটামুটি পরিষ্কার ছিল। হয়ত সেকারণে এখনো পানি উঠেনি।” আরেক জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকা চকবাজার; প্রতিবার চকবাজারের যেসব এলাকায় পানি ওঠে সেখানে পানি উঠলেও তা দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী ছিলনা। নগরীতে চিরাচরিত জলাবদ্ধতার দেখা না মেলার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে জানান, ‘পানি প্রবাহের পথগুলো পরিষ্কার থাকায় পানি জমতে পারছে না। এখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকাগুলোতে পানি ওঠার কোনো খবর পাইনি। পরিস্থিতি ভালো আছে।’ তবে জোয়ারের পানি বৃষ্টির সাথে মিলে গেলে জলাবদ্ধতা অনিবার্য হয়ে উঠে বলে মত দেন বিশ্লেষকরা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) চলতি বছরের শুরু থেকে খাল-নালা পরিষ্কারের কাজ শুরু করে। তবে এ খাতে বরাদ্দ স্বল্পতা এবং খাল পরিষ্কারের যন্ত্রপাতি কিনতে প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় একাধিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এক্ষেত্রে বরাবরের মত চট্টগ্রামের প্রতি সরকারের উপেক্ষার নীতি রয়ে গেছে। আমরা মনে করি, চট্টগ্রামের উন্নয়ন, খাল, নালা-নর্দমা খনন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশনকে যুক্ত করা। সিটি কর্পোরেশন সকলের সাথে সমন্বয় করে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করলে এবং নিয়মিত খাল, নালা-নর্দমা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবে-এমনটি প্রত্যাশা নগরবাসীর।