সংশোধিত এডিপির আকার ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির প্রক্রিয়ায় চলতি অর্থবছরের মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বড় অঙ্কের বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়েছে; টাকার অঙ্কে কমানো হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের শতকরা ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এডিপি কমিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংশোধিত এডিপির আকার ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা করেছে। সবচেয়ে বেশি কমানো হয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এডিপির আকার কমিয়ে সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) অনুমোদন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এসব তথ্য তুলে ধরেন; যিনি ক্ষমতার পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ধীর হয়ে পড়ায় আগেই এডিপিতে বড় ধরনের কাটছাঁটের কথা বলেছিলেন।
শিক্ষায় বরাদ্দ কমার বিষয়ে এনএসই বৈঠকের পর সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের শিক্ষাখাতের বেশির ভাগ প্রকল্প দুর্নীতিগ্রস্ত। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষাখাতের অনেক প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এটা সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রকল্পও বন্ধ করা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দসহ ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার এডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। কমানোর পর এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয়ের বরাদ্দসহ আরএডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ১২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা; অর্থ্যাৎ কমেছে ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ৫২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে প্রথম কয়েক মাস উন্নয়ন কর্মকাÐে ব্যাপক স্থবিরতা দেখা যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের অনেকেই আগের আমলের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে গা ঢাকা দেন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া প্রকল্প তালিকার বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন প্রকল্প বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বারবারই বর্তমান সরকারের তরফে বড় ধরনের প্রকল্পের ব্যয় কমানোর ইঙ্গিত ছিল। সোমবার এনএসইর মাধ্যমে তা চূড়ান্ত হল।
সংশোধিত এডিপিতে পাঁচ খাতে মোট উন্নয়ন বাজেটের ৬৪ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে আগের মতই পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে, ২২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এরপর ১৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বরাদ্দ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি।
এছাড়া আরএডিপির ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষা খাতে, গৃহায়ন ও কমিউনিটি খাতে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আরএরডিপিতে বরাদ্দ কমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাত। এই তিন খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে মোট ৪৫ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। আরএডিপিতে সেখান থেকে ১২ হাজার ২১৯ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। সেই হিসাবে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ৮ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, যা আরএডিপিতে মোট বরাদ্দের মাত্র ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।
অপরদিকে শিক্ষা খাতে চলতি অর্থবছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা ছিল মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আরএডিপিতে ১১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বাদ দিয়ে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ রাখা হয়েছে।