ষাটের দশকের বিপ্লবী ছাত্রনেতা ছাবের আহমদ আসগরী

1

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

(গত সংখ্যা পর)
একবার এনডিএফ-এর মিটিং ছিলো মুসলিম হলে। পাহাড়তলী শ্রমিক লীগের মিছিল যাচ্ছিলো সেই মিটিং-এ। ওবায়দুল হকের নেতৃত্বে তারা পাহাড়তলী এলাকার সকল ছাত্রলীগ কর্মী উক্ত মিটিংয়ে যোগদান করেন।
৬২ খ্রিস্টাব্দে মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার ছিলো রেলওয়ে হাইস্কুল। সারা পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম মার্শাল ল’ বিরোধী মিছিল হয় চট্টগ্রামে। ৬২ খ্রিস্টাব্দে ছাবের আহমদ আসগরী অষ্টম বা নবম শ্রেণিতে পড়েন। ঢাকার শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে.এম ওবায়দুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, চট্টগ্রামের ফেরদৌস কোরেশী, এম.এ মান্নান, মুরিদুল আলম, ওবায়দুল হক পাহাড়তলী রেলওয়ে স্কুল ও গির্জাস্কুলের পেছনে যেখানে একটি গোল টাঙ্কি আছে, তারও পেছনে ফয়’স লেকের সম্মুখস্থ চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রধান পানি শোধনাগার এবং সংরক্ষণাগার এর মধ্যখানে চতুর্দিকে পাহাড়ের থলিতে লেকের পাড়ে সন্ধ্যার পরে এক গোপন মিটিং -এ বসেন। বর্তমান ইউএসটিসির পেছনে ট্যাঙ্কের লেকের ধারে চতুর্দিকে পাহাড় বেষ্টিত এই স্থান। ঐ মিটিংয়ে মার্শাল ল’ ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ছাত্রলীগের পরবর্তী কার্যক্রম (তখনো গোপন) নির্ধারিত হয়।ছাবের আহমদ আসগরী আমাকে এই তথ্য দেন এবং তা যদি সত্য হয়, তাহলে চট্টগ্রাম থেকে আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিলো বলা যায়। ড. মোহাম্মদ হান্নান বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস নামক যে গ্রন্থ রচনা করেছেন, তাতে এই তথ্য নেই। এ যাবৎ আমরা জেনে এসেছি ঢাকায় সর্বদলীয় ছাত্রনেতারা আইয়ুবের সামরিক আইন ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেন এবং ঢাকাতেই প্রথমসামরিক আইন ভঙ্গ হয়। কিন্তু ছাবের আহমদ আসগরীর প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতারা চট্টগ্রামেই বৈঠক করে সামরিক আইন ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেন। ছাবের আহমদ আসগরী আমাকে আরো বলেন, তিনি ছাত্রনেতাদের জন্য ওয়ার্কশপ গেট ক্যান্টিন থেকে কেটলিতে করে বৈঠকস্থলে চা বিস্কুট নিয়ে যান।
এই মিটিংয়ের পর কিছুদিনের মধ্যে মাধ্যমিক স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নামে মার্শাল ল’ বিরোধী বড় ধরনের মিছিল বের হয়। রেলওয়ে স্কুল থেকে ভালোভাবে মিছিল বের হয়। পাঞ্জাবী লেন (শহীদ লেন) গার্লস হাইস্কুলের মেয়েদেরকে সেই মিছিলের সামনে দেয়া হয়। মিছিলের মূল সংগঠক ছিলেন ওবায়দুল হক, আশরাফ খান, মীরা (পরবর্তীকালে আশরাফ খানের স্ত্রী ও স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী), ইউনুস নূর, ইউনুস খান (পরবর্তীকালে পাহাড়তলী আঞ্চলিক ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক)। ছাবের আহমদ আসগরীও মিছিলে ছিলেন। মিছিলটি টাইগারপাস মামা ভাগিনার দরগাহ ক্রসিংয়ে পৌঁছার পর পাকবাহিনী রাস্তায় লালগালিচা বিছিয়ে দেয়। তার ওপর উঠলে গুলি করা হবে বলে হুমকি দেয়। কিন্তু বুদ্ধি করে ছোট বয়সের মেয়েদের সামনে দিয়ে মিছিল লাল গালিচা অতিক্রম করে যায়। পাকবাহিনী ইতস্তত করে গুলি করা থেকে বিরত থাকে। আমবাগান থেকে দুই লাইনের শৃঙ্খলিত মিছিল ছিল। মিছিলে প্রধানত রেলওয়ে হাইস্কুল, পাঞ্জাবী লেন গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ছিল। মিছিল স্টেশন রোড দিয়ে যাওয়ার সময় রেলওয়ের ব্রিজের ওপর দিয়ে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্ররা যোগদান করে। নুরুন্নবী চৌধুরীর নেতৃত্বে মিউনিসিপাল হাইস্কুলের ছাত্ররা এখানে মিছিলে যোগদান করে। স্টেশন রোডে পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে।
ছাবের আহমদ আসগরী ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পলিটেকনিকে ভর্তি হন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে পরীক্ষার সময় গ্রেফতার হয়ে জেলে যান। ১১ মাস জেলে ছিলেন। প্র্যাকটিক্যাল থাকাতে জেল থেকে পরীক্ষা দিতে পারেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে পাস করেন, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা লাভ করেন।
ছাবের আহমদ আসগরী কাজী আবু জাফর ও অধ্যাপক নাজিম উদ্দিনের প্যানেলে জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। মোখতার আহমদ ও এসএম ইউসুফ যেবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, সেবার তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও নির্বাচিত হন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সিটি কমিটি জেলা স্ট্যাটাস পায়। ৬৯-এর গণআন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম মূল সমন্বয়ক ছিলেন ছাবের আহমদ আসগরী। ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, এনএসএফ ও ছাত্রশক্তি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ৭০ খ্রিস্টাব্দে ছাবের আহমদ আসগরী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আবু মোহাম্মদ হাশেম (অ্যাডভোকেট) হনসভাপতি। ৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ৭ মার্চের পর কাজী আরেফ আহমদ তাঁকে বলেন, চট্টগ্রামের যেখানে যেখানে সম্ভব ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য। দেশে টিকে থাকা সম্ভব না হলে সীমান্ত পাড়ি দিতে হবে। তারা অস্ত্র সংগ্রহের জন্য আন্দরকিল্লার একটি বন্দুকের দোকান লুট করেন। ডা. মাহফুজুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আল হারুন সেটি লুট করেন।
ছাবের আহমদ আসগরী নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন। চট্টগ্রামে নিউক্লিয়াসের সমন্বয়ক ছিলেন আবুল কালাম আজাদ।নিউক্লিয়াসের সদস্যরা কেউ কাউকে চিনতেন না। ধরা পড়লেও বলা সম্ভব ছিলো না কে কে আছে নিউক্লিয়াসে। অসহযোগ আন্দোলনের সময় ছাবের আহমদ আসগরী তাঁর বন্ধু এবং ছাত্রলীগ নেতা ডা. মাহফুজুর রহমানের সহায়তায় মেডিক্যালে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেন। ২৩ মার্চ পর্যন্ত কাজী আরেফ বলেন, তোমরা তৈরি থেকো, শেখ মুজিব চট্টগ্রাম যাবেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক চট্টগ্রামের সন্তান স্বপন চৌধুরী, যিনি ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সভায় স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ-এর প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসেন ২৪ মার্চ। তিনিও একই কথা বলেন। তিনি খামবন্ধ একটি চিঠি নিয়ে আসেন আবুল কালাম আজাদের জন্য; বললেন আপনাদেরকে যা বলবেন কালাম ভাই বলবেন। কিন্তু আবুল কালাম আজাদকে পাওয়া গেল না।তিনি তখন গ্রামে চলে গেছেন, হাশিমপুরে তাঁর বাড়িতে। চিঠি খোলার অনুমতি ছিলো না। তাই আবুল কালাম আজাদকে চিঠি দেওয়ারজন্য ছাবের আহমদ আসগরী ও স্বপন চৌধুরী ২৭/২৮ মার্চ দোহাজারী যান। ছাবের আহমদ আসগরী গাড়ি ড্রাইভ করেন। মানজার এন্ড কোং-র মানজার সাহেব ২২/২৩ তারিখ তাঁকে ঐ গাড়িটি দেন। ডাইহাটসু পিক আপ। পলোগ্রাউন্ডে গিয়ে ছাবের আহমদ আসগরী গাড়ি চালনা প্র্যাকটিস করেন। ছাবের আহমদ আসগরী আগে থেকে কিছু ড্রাইভিং জানতেন। দোহাজারী গিয়ে আবুল কালাম আজাদকেনা পেয়ে ছাত্রনেতা আবু তাহের খান খসরুকে (৭৫-এ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধৃত হয়ে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন)। চিঠিটি দেওয়া হয়আবুল কালাম আজাদকে পৌঁছে দেয়ার জন্য।
কথা ছিলো আ স ম আবদুর রব চাঁদপুর হয়ে আগরতলা যাবেন। নোয়াখালীর মোস্তাফিজুররহমানের জন্য একটা মেসেজ ছিলো। ফেনী হয়ে আগরতলা যাবার পথে মোস্তাফিজুর রহমানকে মেসেজটি দিতে হবে। মেসেজটি স্বপন চৌধুরীর হাতে ছিলো। দোহাজারী থেকে আসার সময় কালুরঘাট সেতু পার হবার পর কাপ্তাই রাস্তার মাথায় এসেতাঁরা দেখেন প্রচন্ড গোলাগুলি হচ্ছে। রাস্তাঘাট জনশূন্য। কিছু লোক ইতস্তত ছুটাছুটি করছে। তারা কাপ্তাই রাস্তায় গাড়ি ঢুকিয়ে দেন। সে সময় লেভেল ক্রসিং-এর গেট বন্ধ ছিলো। তারা গেটের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন। তাদের গাড়িতে পেছন থেকে গুলি লাগে। মদুনাঘাট ব্রিজ পার হওয়ার পর তাদের গাড়ির চাকা ফেটে যায়। এক্সটা চাকা লাগান। পাহাড়তলী মহামুনিতে চাকা ভাল করে পরীক্ষা করেন রিক্সার গ্যারেজে। তখন বেলা ১২টা/ ১টা। চন্দ্রঘোনা লিচু বাগানে গিয়েও কোনো চাকা পেলেন না। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্টোর থেকে দুটি চাকা নেন। শাহ আলম বীরোত্তমের পরিবারকে কাপ্তাই থেকে তুলে নেন। যাবার সময় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একটা চিরকূট দিয়ে যান। একরামের উদ্দেশে লেখেন কালুরঘাট পর্যন্ত দখল হয়ে গেছে। ইমিডিয়েটলি ভেকেট করো। শহর ত্যাগ করার সময় তারা বিভিন্ন জায়গায় মেসেজ দিয়ে যান যে যেদিকে পারো রামগড় চলে এসো। আসার সময় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চেক করে দেখেন কেউ আছে কিনা। আবার একটি চিরকুট দেন তাড়াতাড়ি কলেজ ত্যাগ করার জন্য। একরাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভিপি অথবা জিএস ছিলেন। শাহ আলমের পরিবারকে নাজিরহাট নামিয়ে দিয়ে তারা রামগড়ে যান। শাহ আলম তাদের সাথে রামগড় যান। হাটহাজারীতে তাঁরা ডা. মাহফুজ, ফাহিম উদ্দিনসহ পাহাড়তলীর অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে দেখতে পান। তারা ভাটিয়ারি দিয়ে পাহাড়তলী থেকে হাটহাজারী আসেন। হাটহাজারীর ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আমিন তাদেরকে গেঞ্জি কিনে দেন। রামগড়ে হান্নান সাহেবসহ সকলের সাথে দেখা হয়।
এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ হতে মুক্তিকামী জনতা রামগড়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করে। ছাবের আহমদ আসগরী রামগড় থেকে মিরসরাইয়ের প্রত্যন্ত প্রান্তরে গিয়ে নিজের পিকআপে করে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে রামগড় এনে জড়ো করেন।
রামগড়ে অবস্থানকালে তিনি বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন। মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর শওকত, ক্যাপ্টেন রফিক মিরসরাই, সীতাকুন্ডে যেসব অপারেশন বিশেষ করে ব্রিজ অপারেশন করেন, প্রত্যেকটা অপারেশনে ছাবের আহমদ আসগরী গাড়ি নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। এসব অপারেশনে এম.এ হান্নান, আবদুল্লাহ আল হারুন, মোশাররফ হোসেন, মির্জা মনসুরও অংশগ্রহণ করেন।
নিউক্লিয়াসের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ গঠিত হলে এমএ মান্নান, এস, এম, ইউসুফ এবং ছাবের আহমদ আসগরী বিএলএফ সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিংয়ে পাঠানো এবং ইন্ডাকশনের কাজে নিয়োজিত থাকেন। তাঁর গাড়িটি এ সময় খুব কাজ দেয়। মুক্তিযুদ্ধের চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে যখন সবাই দেশের ভিতরে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়, তখন ছাবের আহমদ আসগরী সীতাকুÐ, মিরসরাই ও স›দ্বীপের জোনাল কমান্ডারের দায়িত্ব নিয়ে মিরসরাই আসেন।মাতবরহাটে তাঁর হেডকোয়ার্টার ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি সীতাকুন্ডে অবস্থান করেন। ১৭ ডিসেম্বর ভোরে সীতাকুÐের বিএলএফ ডেপুটি কমান্ডার মো. গোফরানুল হককে সঙ্গে গিয়ে ভাঙ্গা সড়ক ও সেতুগুলো অতিক্রম করে সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সাকিট হাউসে এসে পৌঁছান। ১৭ তারিখ সকালে পাক বাহিনী চট্টগ্রামে আত্মসমর্পণ করে। সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে তখন বিজয় উৎসব শুরু হয়েছে। সেখানে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ছাবের আহমদ আসগরীসহ ডা. গোফরানুল হক বিজয় উৎসবে সামিল হন।
তখন স্টেশন রোডস্থ মিসকা হোটেল ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা। ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ হতে ২৩ তারিখ পর্যন্ত যুদ্ধ পরবর্র্তী বাংলাদেশের অভিযাত্রা ও চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা ধরনের নাটকীয়তা ও ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। ছাবের আহমদ আসগরী সেই ক্রান্তি লগ্নে সাহসিকতার সাথে তাঁর কিছু বিশ্বস্ত সহকর্মী যথাক্রমে জ্যেষ্ঠ নেতা আবুল কালাম আজাদ, মোখতার আহমদ, আবু ছালেহ এবং চট্টগ্রাম শহরের মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন, ডা. মাহফুজুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ সালাউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার ইরফানুল হক ও গোফরানুল হককে নিয়ে কয়েকটি বৈঠক করেন এবং এই প্রচেষ্টার সাথে পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও লোকমান গণি চৌধুরী যুক্ত হন। তৎকালীন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতা এমএ হান্নান ও প্রফেসর নুরুল ইসলাম চৌধুরী ছাবের আহমদ আসগরীর উদ্যোগ সকল করার জন্য যথাসাধ্য সমর্থন ও সাহায্য প্রদান করেন। কমান্ডার সাহাবুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর অভূতপূর্ব বলিষ্ঠ ভ‚মিকার কারণে চট্টগ্রামের তথা বাংলাদেশের রাজনীতির একটি ক্রান্তিকাল বিপর্যয়ের কিনারা হতে ফিরে আসে।
ছাবের আহমদ আসগরী দীর্ঘদিন থেকে গুরুতর রোগে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী আছেন। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। পরপাড়ের ডাকের অপেক্ষায় দিন গুণছেন। বিরাট জীবনের সবকিছু এখন আর তাঁর মনে নেই। মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে কথায় কথায় তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাসকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ৯ মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে না। এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ৯ মাস সশস্ত্র পর্যায়। ২৬ মার্চ আগ্রাসন দিবস। সশস্ত্র যুদ্ধের সময় আমি একটা পার্ট ছিলাম। আমরা তো সরে গেলাম। যারা নির্যাতিত হয়েছে, ত্যাগ স্বীকার করেছে, তাদের অবদান অনেক বেশি। তারা না হলে আশ্রয় পেতাম না, খবরাখবর পেতাম না।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক