নাসিরুদ্দিন চৌধুরী
প্রসঙ্গ কথা
পঞ্চাশের দশকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটলেও ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সামরিক শাসন জারি করে পাকিস্তানি জেনারেলরা বাঙালি নেতৃত্বের উত্থান ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশকে থামিয়ে দেয়। ৬২’র ছাত্র আন্দোলন হতাশাগ্রস্ত বাঙালি জাতিকে নতুন করে জেগে ওঠার প্রেরণা জোগায়। শিক্ষা নীতির বৈষম্য থেকে অর্থনৈতিক ও চাকরি -বাকরিতে বৈষম্যের প্রসঙ্গ এসে পড়ে। বৈষম্য নিরসনের জন্য উঠে স্বায়ত্তশাসনের দাবি, তারপর স্বাধীনতা।
সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে যে, ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসূতি। ষাটের দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য কোন একক দলকে কৃতিত্ব দেওয়া যায় না। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন তো ছিলোই, প্রথমদিকে ছাত্রশক্তিও প্রবলভাবে ছিলো। ষাটের দশকের শেষদিকে ছাত্রদের পক্ষে থেকে যখন ১১ দফা কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছিলো, তখন সরকার সমর্থিত এনএসএফ থেকে মাহবুবুল হক দুলন ও ডাকসুর জিএস নাজিম কামরান চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি গ্রæপ বেরিয়ে এসে সেসময় গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়ন তখন মেনন ও মতিয়া গ্রæপে বিভক্ত হয়ে আন্দোলনে যোগদান করে। মেনন গ্রæপ থেকে পরে বাংলা ও বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম হয়।
ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের যাঁরা মূল নায়ক, তাঁরা প্রায় সবাই লোকান্তরিত। চট্টগ্রামে শুধু একজন, অধ্যক্ষ শায়েস্তা খান বেঁচে আছেন। তাঁকে বলা যেতে পারে ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতি ও আন্দোলনের জীবন্ত কিংবদন্তী। তাঁদের পরে যাঁরা ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, তাঁরাও প্রায় সবাই অন্তর্হিত। তাঁদের মধ্যেও মাত্র একজন, আবু তাহের মাসুদ জীবিত আছেন। আবু তাহের মাসুদের সমসাময়িক এবং পরবর্তীরাও প্রায় সবাই প্রয়াত। ডা. শামসুদ্দিন চৌধুরী এবং আবদুল মোবারক আছেন।
এরপর যাঁদেরকে আমরা পাই, তাঁদেরকে আমি ষাট দশকের দু’ভাগে ভাগ করে দ্বিতীয় পর্বে অন্তর্ভুক্ত করেছি। তাঁদেরকে নিয়েই আমি ষাট দশকের ছাত্র রাজনীতির আলোচনা আরম্ভ করলাম। এর মধ্যে রাজনীতিতে ও বয়সে জ্যেষ্ঠতার ক্রম রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ অসুস্থতার ফলে শারীরিক নানা সীমাবদ্ধতার জন্য সবার জীবনী সংগ্রহ করতে পারিনি। যাদের পেরেছি, তাঁদেরকে নিয়েই আলোচনা শুরু করেছি। সিনিয়রিটি রক্ষা করতে পারলাম না বলে আমি সিনিয়রদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
ষাটের দশকের আদি পর্বের দু’জন ছাত্রনেতা ছাত্রলীগের আবদুর রউফ খালেদ ও ছাত্র ইউনিয়নের আবদুল্লাহ আল নোমানের জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে আজ আলোচনা করা হলো।
আবদুর রউফ খালেদ
আবদুর রউফ খালেদ ষাটের দশকের সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতা। ছাত্র রাজনীতির কালে তাঁর সহযোগীদের মধ্যে এমএ মান্নান, মুরিদুল আলম, ফেরদৌস কোরেশী, শায়েস্তা খান, আবু ছালেহ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
স্কুলে অধ্যয়নের সময় বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন থেকে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হন। তখন তিনি ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুরোমাত্রায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ কার্যনির্বাহী কমিটিতে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এসময় (৬৩-৬৪) তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজ (দিবা ও নৈশ) জয়েন্ট ক্যাবিনেটে ভিপি নির্বাচিত হয়ে অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করেন। তাঁর সময়েই প্রথম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণীত হয় এবং দিবা ও নৈশ পৃথক ছাত্র সংসদের কার্যক্রম চালু হয়।
রউফ খালেদ মজাহারুল হক বাকীর নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য এবং পরবর্তীকালে ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স (ফরেন)-এ চাকরি দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের শুরু। এ সময় সেখানে তিনি ট্রেড ইউনিয়নের সেক্রেটারির দায়িত্বও পালন করেন। পরবর্তীকালে তিন বছর (৬৫-৬৭) তিনি হার্বার্টসন্স এবং ৮ বছর (৬৮-৭৫) মাল্টিন্যাশনাল সিঙ্গার সেলাই মেশিন কোম্পানিতে প্রথমে ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার ও পরে পদোন্নতি পেয়ে এরিয়া ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে তিনি নিজস্ব আমদানি রফতানির ব্যবসায়ে নিয়োজিত হন।
রউফ খালেদ সেবার ব্রত নিয়ে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে লায়নিজমের সাথে যুক্ত হন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তিনি লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং ইসলামাবাদ-এর সেক্রেটারি, প্রেসিডেন্ট, লায়ন্স ক্লাবের ডিস্ট্রিক্ট চেয়ারম্যান, জোন চেয়ারম্যান, রিজিওন চেয়ারম্যান, রিজিওন চেয়ারম্যান (হেড কোয়ার্টার), ডিস্ট্রিক্ট গভর্নরের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেন। রিজিওন চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতালের অবৈতনিক সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন এবং তিন বছর (১৯৯৯-২০০১) দক্ষতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে হাসপাতালের সার্বিক উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ অবদান রাখেন। এ সময় তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল সেবার গুণগতমান উন্নয়নের মাধ্যমে অন্ধত্ব নিবারণ ও দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদরিদ্রদের মধ্যে সুলভে এই সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা। এসময়ে হাসপাতালের জন্য তিনি স্লোগান রচনা করেন- Prevent blindness, restore eye-sight (অন্ধত্ব প্রতিরোধ, দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার)। লায়ন এ. কাইয়ুম চৌধুরীর নেতৃত্বে লায়ন এর পৃথক জেলা করার শর্ত পূরণের লক্ষে তিনি একক প্রচেষ্টায় ৩টি নতুন লায়ন হোম ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন।
তৎকালীন পাকিস্তান আমলে বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ, প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে সমমনা কয়েক বন্ধুর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তিনি পাক সাংস্কৃতিক পরিষদ নামে একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্থার গোড়াপত্তন করেছিলেন। তিনি চন্দনাইশ ফাতেমা জিন্নাহ গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পক। তিনি পত্র-পত্রিকায় মাঝে মধ্যে জাতি গঠনমূলক বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধও লিখেছেন। তিনি ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে জাপানে ব্যবসা পরিচালনায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি পাকিস্তান, ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন।
সমাজসেবী ও রাজনীতিবিদ আবদুর রউফ খালেদ ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে চন্দনাইশ থানার হারলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা এম.এ. খালেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, মাতা মোসাম্মৎ মোমেনা খাতুন।
আবদুর রউফ খালেদের শিক্ষাজীবনের শুরু হারলা সমবায় প্রাইমারি স্কুলে। প্রবেশিকা পাস করেন ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে। অতঃপর চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে আই.এ. ও ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে বি.এ. পাস করে আইন কলেজে ভর্তি হন।
আবদুল্লাহ-আল-নোমান
প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী আবদুল্লাহ-আল-নোমান শৈশব থেকে সমাজ সচেতন, সংস্কৃতিমনস্ক ও রাজনীতির প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিত্ব। তিনি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার গহিরা গ্রামের যে পরিবারটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেটি রাজনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে চট্টগ্রামের মধ্যে একটি প্রাগ্রসর পরিবার হিসেবে খ্যাতিমান ছিলো । আবদুল্লাহ-আল-নোমান দীর্ঘ অর্ধশতাধিক বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সাংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে অসংখ্য আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন আবদুল্লাহ-আল-নোমান।
তিনি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে এসএসসি পাস করে যখন তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ভর্তি হন, পাকিস্তানে তখন আইয়ুবের ফৌজি শাসন। গণতন্ত্র শৃঙ্খলিত, রাজনীতির রা করার উপায় নেই। কিন্তু বাষট্টি খ্রিস্টাব্দে যখন সামরিক শাসন উঠে গেল, তখন দেখা গেল হঠাৎ খোলা বাতায়ন পথে যেমন মাতাল হাওয়ার লুটোপুটি পড়ে যায়, তেমনি ছাত্র সমাজের মনে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ শরীফ কমিশনের শিক্ষা রিপোর্টকে উপলক্ষ করে প্রচন্ড আন্দোলনের রূপ নিয়ে ফেটে পড়েছে।
৬২’র ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আবদুল্লাহ আল নোমানের ছাত্র রাজনীতিতে দুরন্ত আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
জনাব নোমান ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে জেলা কমিটির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে থেকে সংগঠনকে সংগঠিত ও নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৮-৬৯ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সংগ্রাম পরিষদ-এর নেতৃত্ব দেন। পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রদের পক্ষ থেকে গঠিত ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ কমিটির নেতা হিসাবে ছাত্রদের নেতৃত্ব দেন। তিনি ছাত্রদের নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কাজ করেন। ঐ সময় মোমিন রোডে হরিখোলা মাঠে ত্রাণ কমিটির অফিস ছিল। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে থার্ড ডিভিশন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকালে মুসলিম হাইস্কুলের সামনে থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিলাভ করেন। তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রদের ১১ দফার মাধ্যমে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানকে চট্টগ্রামে সংগঠিত করতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ৬৮-৬৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে তিনি অন্যতম আহবায়ক নিযুক্ত হন। অপর তিন আহবায়ক ছিলেন আবু তাহের মাসুদ, সৈয়দ শামসুল আলম ও মোখতার আহমদ।
স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমের লক্ষে জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের অভিযোগে তাঁর ওপর হুলিয়া জারি হয়। তিনি হুলিয়া মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সাহসী বক্তব্য রাখায় ১৯৭০ এর ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক আদালত রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে অভিযুক্ত করে ৭ বছর কারাদন্ড, ১০ বেত্রাঘাত ও সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার রায় প্রদান করে।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গের ওপর দিয়ে প্রলয়ংকরি হারিকেন ও জলোচ্ছ্বাস প্রবাহিত হলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ঘূর্ণিদুর্গতদের সাহায্যার্থে চট্টগ্রামে গঠিত চট্টগ্রাম ‘নাগরিক রিলিফ কমিটি’ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সময় তিনি বিশিষ্ট সংগঠক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন।
আবদুল্লাহ আল নোমান ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক হিসাবে কাজ করেন এবং ভারতে গমন করে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১ মে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন গঠনের পর কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ কায়েমের লক্ষ্যে সশস্ত্র কর্মপন্থা গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এ সময় তারা একটি লিফলেটও প্রকাশ করেন। যার বক্তব্য ছিলো মোটামুটি এরকম : ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হবে। আওয়ামী লীগ আপোষ করতে চায়।’ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যখন ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনায় বসে আপোষের পথে সংকট উত্তরণের উপায় উদ্ভাবনে ব্যস্ত, তখন চট্টগ্রামে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের রাউজান থানার গহিরায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। রাউজান কলেজ মাঠ ও ডাবুয়ায় সভা করে জনসাধারণকে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তার আগে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা সিটি কলেজের পাশে অগ্রণী ব্যাংক খুলে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা চালান। এসময় সিটি কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীদের বাধার মুখে সব অস্ত্র আনা সম্ভব হয়নি। কিছু রাইফেল ও বন্দুক নিয়ে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা রাউজান চলে যান। এ পর্যায়ে কোন এক সময় চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের মরিস মাইনর গাড়ি নিয়ে কাজী জাফর চট্টগ্রামে আসেন। সেই গাড়িটি ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা সশস্ত্র প্রস্তুতির কাজে ব্যবহার করেন। অস্ত্রের পাশাপাশি বিস্ফোরক সংগ্রহের চেষ্টাও চলে। প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজের ল্যাবরেটরি থেকে কেমিক্যালস সংগ্রহ করা হয়। এই রাসায়নিক সামগ্রী জহির রায়হানের পূর্বোক্ত গাড়িতে করে গহিরা নিয়ে যাওয়া হয়। কেমিক্যালসের জন্য নতুন পাড়া এলাকায় অবস্থিত বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিআরআইএস) রসায়নাগারের পরিচালকের সাথেও দেখা করেন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা। অস্ত্র বানাতে ওয়েল্ডিং মেশিন আনার জন্য তাঁরা চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিল-এ গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা এত ভারি ছিল যে বয়ে আনা সম্ভব হয়নি। চন্দ্রঘোনা থেকে কাপ্তাই রোড দিয়ে রাউজান ফিরে আসার পথে পাহাড়তলীতে জনাব নোমানসহ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের বহনকারি গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে জনাব নোমান আহত হন।
যাই হোক, সংগৃহীত বিস্ফোরক দিয়ে সদরঘাট দাউদ কর্পোরেশনের অফিস ও আমিন গ্রæপের অফিসে প্রতীকী বোমা হামলা চালানো হয়। ২৩ মার্চ চেরাগী পাহাড়ে বোমা হামলা করে পালানোর সময় ছাত্রনেতা ওসমান গণি চৌধুরী ও সাদেক সাইফুর রহমান (স্বপন) কোনোরকমে আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হন। পরদিন স্থানীয় আজাদী পত্রিকায় শিরোনাম হয় ‘‘নকশালীদের বোমা হামলা। এটা কিসের আলামত’’।
এদিকে দেশে তখন তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে মানবেতিহাসের ঘৃণ্যতম ও নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলার প্রায় সমস্ত নেতা-কর্মী রাউজানে জড়ো হন। তাদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দ জালাল, নুরুল হুদা, মোজাম্মেল হক, ওসমান গণি চৌধুরী, মৃদুল গুহ, নাজিমউদ্দিন প্রমুখ। এমনি পরিস্থিতিতে কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহের পুত্র চিত্ত সিংহ, যিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাস করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন, তিনি কলকাতার একজন সাংবাদিকসহ কুন্ডেশ্বরীতে ফিরে আসেন। কুন্ডেশ্বরীতে তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। ক্র্যাকডাউনের পর তারা ভারতে চলে যান। জনাব নোমানের বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ও এমপিএ আবদুল্লাহ আল হারুনও চিত্ত সিংহকে নিয়ে রামগড় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি দেন। তিনি পরে আবার ফিরে এসে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীকে নিয়ে ত্রিপুরায় যান। তারা আশ্রয়, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের অপর শীর্ষ নেতা এম এ হান্নান এবং বাঁশখালীর খান সাহেব রফিক আহমদ চৌধুরীর পুত্র ক্রীড়াবিদ ফরহাদও এ সময় ক’দিন জনাব নোমানের গহিরার বাড়িতে ছিলেন। ফরহাদ ছিলেন আবদুল্লাহ-আল নোমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফরহাদ একদিন তাঁর মাকে দেখতে যাবার কথা বলে বাঁশখালীর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন। নোমান, এম এ হান্নানকে নিয়ে রামগড় যাবার উদ্দেশে নানুপুরে যান। কিন্তু তারা মির্জা মনসুরের বাড়ি থেকে গহিরায় ফিরে আসেন এবং দেখতে পান ফরহাদ বাঁশখালী যাননি, শুয়ে আছেন নোমানের বাড়িতে। পরদিন তাকে নিয়ে নোমান পাহাড়তলী দিয়ে কর্ণফুলী নদী পার করে বোয়ালখালী পাঠিয়ে দেন, যাতে তিনি বাঁশখালী যেতে পারেন তাঁর মাকে দেখতে। ফরহাদ আর ফিরে আসেননি। স্বাধীনতার পর খবর পাওয়া যায়, তিনি কক্সবাজার গিয়ে শহীদ হয়ে যান।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে আবদুল্লাহ আল নোমান ভারতে যান। ইতিমধ্যে ভারত থেকে তাঁর বড় ভাই আবদুল্লাহ-আল হারুন বারবার তাঁকে খবর পাঠাচ্ছিলেন তাঁকে সীমান্ত পাড়ি দেবার জন্য। তাঁর সাথে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকায় জনাব নোমান বড় ভাইয়ের কথায় হুট করে ভারতে যাওয়া সমীচীন মনে করেননি। তাঁর পার্টি চ্যানেলে যোগাযোগ হওয়ার পর জনাব নোমান ভারতে যান। সেখানে গিয়ে শুনতে পান কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি নামে একটি দল গড়েছেন কাজী জাফর আহমদরা। মশিউর রহমানও একদিন ভারতে গিয়ে বামপন্থীদের করণীয় নির্ধারণের জন্য একটি সভা আহবান করেন। কিন্তু তার আগেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাকে ধরে পুশ ব্যাক করে দেয়। জনাব নোমান কুমিল্লা সীমান্তের নিকটবর্তী একটি স্থানে সিপিএম-এর সহযোগিতায় বামপন্থীদের জন্য খোলা একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়ে কাজী জাফরের সাথে দেখা করেন। তাঁর সাথে আলোচনার পর জনাব নোমানকে ইস্টার্ন সেক্টরের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্টার্ন কমান্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাশেদ খান মেননের বড় ভাই সাদেক খান ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদের বন্ধু। যেহেতু আওয়ামী লীগ বামপন্থীদের প্রতি সন্দেহবশত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করতে চাইতো না, তাই সাদেক খানের মাধ্যমে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় এবং সহযোগিতা চাওয়া হয়। কলকাতায় ঐ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মেজর জিয়াউর রহমানের সাথেও বামপন্থীদের বৈঠক হয়। নোমানও বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। তখন থেকে জিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। জিয়া তাদেরকে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পরামর্শ দেন। তখন তিনি এরকম একটি ইঙ্গিত দেন যে, এই যুদ্ধ শেষ যুদ্ধ নয়। পরে আরো যুদ্ধ করতে হতে পারে এবং সেজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
স্বাধীনতার পর মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সরকারের সন্ত্রাস, নির্যাতন ও অগণতান্ত্রিক কর্মকাÐের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আবদুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৭৪Ñএর দুর্ভিক্ষে মওলানা ভাসানী কর্তৃক আহূত চট্টগ্রামে ‘ভুখা মিছিল ও ভারতীয় পণ্য বর্জন’ কর্মসূচির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। মওলানা ভাসানীর পক্ষে সরকারের নিকট ভাসানী ন্যাপ-এর চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তিনি স্মারকলিপি পেশ করেন।
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করলে আবদুল্লাহ আল নোমান তার কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য হন। একই বছর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করলে জনাব নোমান ঐ দলেরও কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। জিয়াউর রহমান পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটি গঠন করলে তিনি তার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংগঠনিক কমিটির সভাপতিও নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী দল কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত আছেন। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির সাংগঠনিক যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দান আবদুল্লাহ আল নোমানের রাজনৈতিক জীবনের শীর্ষবিন্দু এবং মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এরশাদ সরকার কর্তৃক কারারুদ্ধ হন। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি হুলিয়া মাথায় নিয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং স্বৈরশাসকের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলনে অনড় থাকেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি এবং জনাব সাদেক হোসেন খোকা (ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র) একই সাথে ঢাকার রাজপথে এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর জনাব আবদুল্লাহ আল নোমানই প্রথম বেগম খালেদা জিয়াকে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দান থেকে ‘দেশনেত্রী’ খেতাবে ভূষিত করেন। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে জনাব নোমান ‘চট্টগ্রাম-৯’ আসনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও নির্বাচিত হন। প্রতিমন্ত্রী হিসাবে বন ও পরিবেশ এবং পরে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। একই আসন থেকে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত হন। এবার তিনি শ্রম এবং পরিবেশ, খাদ্য, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। একই আসন থেকে ২০০১ খ্রিস্টাব্দে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং তৃতীয় বার নির্বাচিত হন। এবার তিনি আবারও মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
আবদুল্লাহ আল নোমান ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আহমদ কবীর চৌধুরী ছিলেন শিক্ষাব্রতী এবং সমাজহিতৈষী।
১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি কাজেম আলী হাইস্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় স্কুলের বার্ষিকী সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে রাউজান হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। সেটা ছিল ঢাকা বোর্ডের শেষ ব্যাচ। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি কলেজের সাহিত্য ও ম্যাগাজিন সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্কুলে থাকতেই তিনি ১৯৫৯-১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।
আবদুল্লাহ আল নোমান স্কুল জীবনে ভালো ফুটবল খেলতেন। সেন্টার ফরোয়ার্ড লেফ্ট-ইন-পজিশনে খেলতেন। কাজেম আলী হাইস্কুলে পড়তেন। সে সময় ফুটবলার হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। যে বছর তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্র, সে বছর রাউজান হাইস্কুল থানা ফুটবল প্রতিযোগিতায় ফাইনালে ওঠে। তখন সেটা জুনের খেলা নামে পরিচিত ছিলো। জেলা আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতার থানা ফাইনাল হবে শহরে। তিনি যেহেতু রাউজানের সন্তান, স্কুল কর্তৃপক্ষ সেজন্য ফাইনালে তাদের হয়ে খেলতে তাকে ট্রান্সফার নিয়ে রাউজান স্কুলে যাওয়ার জন্য খুব পীড়াপীড়ি শুরু করে। তাদের অনুরোধ, চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত তিনি কাজেম আলী স্কুল ছেড়ে রাউজান স্কুলে যান শুধু ফুটবল খেলার জন্য। সে কারণে তাঁকে এসএসসি পরীক্ষাও দিতে হয় রাউজান স্কুল থেকে।
আবদুল্লাহ আল নোমানের স্ত্রী তাসমিন আরা বেগম অর্থনীতিতে বি.এ. অনার্স ও এম.এ; তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ থেকে অবসর নেন।
জনাব নোমান এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তাঁর শ্বশুর সৈয়দ এজাজউদ্দিন আহমদ ছিলেন চাকরিজীবী। নিবাস রাউজান থানার কোয়েপাড়া গ্রামের মৌলভী পাড়া সাব রেজিস্ট্রার বাড়ি।
পুত্র সাঈদ-আল-নোমান যুক্তরাষ্ট্রের মিচিগান ইউনিভার্সিটি থেকে বিজনেস স্টাডিজ-এ অনার্স ও মাস্টার্স। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স এন্ড পলিটিকেল সায়েন্স (এল.এস.ই) এ পাবলিক পলিসি এন্ড পাবলিক চয়েস বিষয়ে পি.এইচ.ডি করে বর্তমানে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রধান নির্বাহী হিসেবে এটি পরিচালনা করছেন।
পুত্রবধূ সাজিয়া-আবদুল্লাহ (যুক্তরাষ্ট্রের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি তে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এন্ড ম্যানেজমেন্টÑএ মাস্টার্স করেছেন।
কন্যা ডা.তাজিন নোমান (এম.বি.বি.এস) বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিভাগে মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত। জামাতা ডা. মুহাম্মদ সাদেকুল হক (এফ.সি.পি.এস,বি.সি.এস। স্বাস্থ্য) বর্তমানে বিদেশে অধ্যয়নরত।
লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা