ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলনের নায়করা

1

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

প্রসঙ্গ কথা
পঞ্চাশের দশকে ৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটলেও ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সামরিক শাসন জারি করে পাকিস্তানি জেনারেলরা বাঙালি নেতৃত্বের উত্থান ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশকে থামিয়ে দেয়। ৬২’র ছাত্র আন্দোলন হতাশাগ্রস্ত বাঙালি জাতিকে নতুন করে জেগে ওঠার প্রেরণা জোগায়। শিক্ষা নীতির বৈষম্য থেকে অর্থনৈতিক ও চাকরি -বাকরিতে বৈষম্যের প্রসঙ্গ এসে পড়ে। বৈষম্য নিরসনের জন্য উঠে স্বায়ত্তশাসনের দাবি, তারপর স্বাধীনতা।
সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে যে, ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসূতি। ষাটের দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য কোন একক দলকে কৃতিত্ব দেওয়া যায় না। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন তো ছিলোই, প্রথমদিকে ছাত্রশক্তিও প্রবলভাবে ছিলো। ষাটের দশকের শেষদিকে ছাত্রদের পক্ষে থেকে যখন ১১ দফা কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছিলো, তখন সরকার সমর্থিত এনএসএফ থেকে মাহবুবুল হক দুলন ও ডাকসুর জিএস নাজিম কামরান চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি গ্রæপ বেরিয়ে এসে সেসময় গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়ন তখন মেনন ও মতিয়া গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আন্দোলনে যোগদান করে। মেনন গ্রæপ থেকে পরে বাংলা ও বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম হয়।
ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনের যাঁরা মূল নায়ক, তাঁরা প্রায় সবাই লোকান্তরিত। চট্টগ্রামে শুধু একজন, অধ্যক্ষ শায়েস্তা খান বেঁচে আছেন। তাঁকে বলা যেতে পারে ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতি ও আন্দোলনের জীবন্ত কিংবদন্তী। তাঁদের পরে যাঁরা ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন, তাঁরাও প্রায় সবাই অন্তর্হিত। তাঁদের মধ্যেও মাত্র একজন, আবু তাহের মাসুদ জীবিত আছেন। আবু তাহের মাসুদের সমসাময়িক এবং পরবর্তীরাও প্রায় সবাই প্রয়াত। ডা. শামসুদ্দিন চৌধুরী এবং আবদুল মোবারক আছেন।
এরপর যাঁদেরকে আমরা পাই, তাঁদেরকে আমি ষাট দশকের দু’ভাগে ভাগ করে দ্বিতীয় পর্বে অন্তর্ভুক্ত করেছি। তাঁদেরকে নিয়েই আমি ষাট দশকের ছাত্র রাজনীতির আলোচনা আরম্ভ করলাম। এর মধ্যে রাজনীতিতে ও বয়সে জ্যেষ্ঠতার ক্রম রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ অসুস্থতার ফলে শারীরিক নানা সীমাবদ্ধতার জন্য সবার জীবনী সংগ্রহ করতে পারিনি। যাদের পেরেছি, তাঁদেরকে নিয়েই আলোচনা শুরু করেছি। সিনিয়রিটি রক্ষা করতে পারলাম না বলে আমি সিনিয়রদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
ষাটের দশকের আদি পর্বের দু’জন ছাত্রনেতা ছাত্রলীগের আশরাফ খান ও অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেমের জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে আজ আলোচনা করা হলো।

আশরাফ খান :
ষাটের দশকের ছাত্রনেতাদের মধ্যে আশরাফ খান ছিলেন অনন্য। তিনি ছিলেন বক্তৃতার জাদুকর, বাগযোদ্ধা। তিনি যেন বাকযুদ্ধ করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানকে পরাজিত করে ক্ষমতাচ্যুত করার সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন। সমসাময়িক ছাত্রনেতাদের মধ্যে তাঁর মত বাগ্মী আর কেউ ছিলেন না। ছাত্রলীগে নয়, ছাত্র ইউনিয়নে নয়, ছাত্র শক্তিতেও নয়। শুধু ছাত্রলীগের ইদরিস আলম এবং এস এম ইউসুফ খানিকটা তাঁর সঙ্গে তুলিত হতে পারতেন। গলাবাজি যদি একটি আর্ট হয়, তাহলে আশরাফ খান একজন বড় আর্টিস্ট ছিলেন। কণ্ঠশীলন যদি একটি গুণ হয়, তাহলে আশরাফ খান একজন গুণী মানুষ ছিলেন। শুধু গলাবাজি করেই তিনি ৬ দফা আন্দোলনে জোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর একটি টিম ছিলো, সে টিমের সদস্য ছিলেন ইদরিস আলম, আতুরার ডিপো মৃধাপাড়ার চারণ কবি বদন মিয়া দীদারি, তখনকার সাহসী টগবগে তরুণ নুর মোহাম্মদ চৌধুরী ও শাহ বদিউল আলম। চট্টগ্রামে ৬ দফার পক্ষে যে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিলো, তার জন্য কাউকে যদি কৃতিত্ব দিতে হয়, আশরাফ খান, ইদরিস আলম, বদন দীদারি, নুর মোহাম্মদ চৌধুরী ও শাহ বদিউল আলমকে তার সিংহভাগ কৃতিত্ব দিতে হয়। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী আইয়ুব খান ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একমাত্র বোন সম্মিলিত বিরোধীদলের প্রার্থী মাদারে মিল্লাত ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী প্রচারাভিযানকালে আশরাফ খান ও ইদরিস আলমের জাদুকরি বক্তৃতার একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। সেটি হলোÑসেই নির্বাচনের পূর্বে ফাতেমা জিন্নাহ চট্টগ্রাম সফরে আসেন। তিনি ট্রেন যোগে ঢাকা থেকে আসছিলেন এবং তাঁকে দেখা ও তাঁর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার জন্য পথে পথে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিলো। প্রত্যেক স্টেশনে ট্রেন থামাতে হয়েছিলো। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরেও তাঁর চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছিলো। এদিকে মাদারে মিল্লাতকে স্বাগত জানানোর জন্য চট্টগ্রাম স্টেশনেও হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলো। জনতার যাতে ধৈর্য্যচ্যতি না ঘটে এবং কেউ যাতে ফাতেমা জিন্নাহকে না দেখে না যায়, সেজন্য আশরাফ খান ও ইদরিস আলম মাইক নিয়ে পালা করে বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ১ ঘণ্টা ২ ঘণ্টা যায় কিন্তু ফাতেমা জিন্নাহর ট্রেন কিছুতেই আসে না। আশরাফ খান ও ইদরিস আলমও বক্তৃতা থামাতে পারছিলেন না। এভাবে প্রায় ৩৩ ঘণ্টা বক্তৃতা দানের একটি রেকর্ড করে ফেলেন। তারপর ফাতেমা জিন্নাহর ট্রেন এসে পৌঁছায়।
ঐ নির্বাচনে চট্টগ্রামস্থ ফাতেমা জিন্নাহ নির্বাচন প্রচার কমিটি আশরাফ খানকে সমগ্র বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার মাদারে মিল্লাত নির্বাচন প্রচার কমিটির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করে। আশরাফ খান চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কাপ্তাই, চন্দ্রঘোনা, রাঙামাটি, রামগড়, মিরসরাই, ফেনী, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা, ল²ীপুর, চাটখিল, চন্দ্রগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানিগঞ্জ, সোনাগাজী, দাগনভূঞা প্রভৃতি অঞ্চলে উৎসাহী ছাত্র জনতার আহবানে শত শত জনসভায় ভাষণ প্রদানপূর্বক গণজাগরণ সৃষ্টি করেন।
১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি দৃঢ় আস্থা ও তাঁর ঘোষিত ৬ দফা কর্মসূচির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। চট্টগ্রাম সিটি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
আশরাফ খান ১৯৬৬-৬৯ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগের ৬ দফা আন্দোলনে ও প্রচারে সক্রিয় নেতৃত্ব প্রদান করেন। চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, কাপ্তাই, রামগড়, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লায় আমন্ত্রিত হয়ে আশরাফ খান অসংখ্য জনসভায় ভাষণ দেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করায় চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সংগ্রামের (৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানসহ) অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে ৬ দফার পক্ষে চট্টগ্রাম-ফেনী-নোয়াখালী-রাঙ্গামাটি-রামগড়-কাপ্তাইয়ে ব্যাপক গণসংযোগ করেন।
আশরাফ খান ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের পাঠানটুলির ইতিহাসখ্যাত পাঠান বংশে জন্মগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে, এই পাঠান বংশ হতেই পাঠানটুলী এলাকার নামকরণ করা হয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন চট্টগ্রামের মগরাজত্বের সময় মুসলমানদের চট্টগ্রাম বিজয়কালে যে সকল পাঠান বাহিনী এ দেশে আগমন করেন তাঁদের অনেকেই উক্ত অঞ্চলে স্থায়ীভাবে আবাস স্থাপনে বসবাস করতে থাকেন, তদনুসারে এই এলাকার নাম হয় পাঠানটুলী।
আশরাফ খানের পিতা মরহুম আমানত খান (বিএল) ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতাস্থ স্কটিস চার্চ কলেজ হতে বিএ এবং পরবর্তীতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএল (বর্তমানে এলএলবি) পাস করেন। নিজ এলাকায় জনগণের শিক্ষার স্বার্থে তিনি তাঁর পাঠান পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতায় ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে নিজ গ্রামে ‘পাঠানটুলী খান সাহেব বালক বিদ্যালয়’ ও বালিকা বিদ্যালয়, পাঠানটুলী পোস্ট অফিস ইত্যাদি জনহিতকর প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিষ্ঠা করেন। আমানত খান ১৯২৪ হতে ১৯২৮ইং খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অবিভক্ত বাংলার আইন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন।
আমানত খান বিএল-এর পিতা মসউদ খান পাঠানও সে যুগে একজন খ্যাতনামা জমিদার ছিলেন। তাঁদের উত্তরসুরী হিসেবে মুহাম্মদ আশরাফ খান ১৯৫৮-৫৯ইং খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল ছাত্র সংঘের জেনারেল ক্যাপ্টেন, ১৯৫৭-৫৮ইং খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রাম স্কাউট ট্রুপ এর স্কাউট ট্রুপলিডার, ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল ইব্রাহিম চুন্দ্রিগড়ের চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত জনসভায় একজন স্থানীয় বক্তা (মুসলিম ছাত্রলীগের সংগঠন) হিসেবে প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তৃতা করে উপস্থিত জনতার বিপুল প্রশংসা লাভ করেন। তিনি ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান দ্বিতীয় স্কাউট জাম্বুরিতে কলেজিয়েট স্কুল স্কাউট বাহিনীর অধিনায়ক, ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক (দেশব্যাপী) শিক্ষা সপ্তাহে উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার জন্য ২য় পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে আশরাফ খান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট হাইস্কুল হতে দ্বিতীয় বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি করে এবং ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মুক্তি আন্দোলন ও শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সহ সম্পাদক হিসেবে ইতিহাসে প্রথম বাংলাভাষায় শপথ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ভিপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ১৯৬১ হতে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চট্টগ্রামের সকল ছাত্র গণআন্দোলনের তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক।
১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন আশরাফ খান এবং ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ পাস করেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম শহরে বেবী টেক্সি ও রিকশা ড্রাইভারদের সংগঠিত করে ‘‘চট্টগ্রাম বেবী টেক্সি ও রিকশা ড্রাইভার ইউনিয়ন’’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর টেক্সি ড্রাইভারদের পুনর্বাসনের জন্য ‘চট্টগ্রাম বহুমুখী সমবায় সমিতি’ গঠন করে অসহায় টেক্সি ও রিক্সাচালকদের জন্য কিস্তিতে সমবায়ের টেক্সি প্রদানে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেন।
৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রামে স্টেশন রোডস্থ সিটি আওয়ামী লীগ অফিস হতে (কন্ট্রোল রুম) কর্মরত ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের জন্য চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে টেলিফোনে মুহাম্মদ আশরাফ খানকে অবহিত করেন। তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের কর্মী রাখাল চন্দ্রকে দিয়ে একটি খোলা জিপে মাইকসহ তাঁর নিকট স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারের জন্য প্রেরণ করেন। উত্তর ও দক্ষিণ আগ্রাবাদ ইউনিয়ন ও পাঠানটুলী ও উত্তর পাঠানটুলী আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাইকযোগে আহবান করেন এবং আগ্রাবাদ রোড (বর্তমান শেখ মুজিব রোড) যাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অভিযান চালাতে না পারে তার জন্য সমস্ত আগ্রাবাদ রোডে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সমগ্র চট্টগ্রাম শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রচার অভিযান নির্ভয়ে পরিচালনা করেন।
এই প্রচার অভিযানের সময় এলাকার নৌবাহিনীর একজন কর্মচারী জাফর, মোটর সাইকেলে করে পথ দেখাচ্ছিল, পরবর্তীকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে হত্যা করে। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের জন্য ২৫ মার্চ দিবাগত গভীর রাত্রে চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার সামনে উপস্থিত হলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল খালেক পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওসি খালেক সাহেবের গলায় একটি গরুর রশি লাগিয়ে জিপের পিছনে তাকে বেঁধে রাজপথে টানা শুরু করে এবং ওসি খালেকের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত বর্বর পাকিস্তানিরা তাকে রেহাই দেয়নি। ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাত্রে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা মাইকযোগে প্রচার প্রসঙ্গে বিসিএস কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মাহাবুবুুর রহমান লিখিত (A Stranger’s Tale) পুস্তিকার ৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে যে, “Declaration of Independence of Bangladesh” : “Sheikh Mujib declared Independence through the EPR wireless network, his Proclamation was transmitted to Chittagong. At about midnight Mr. Ashraf Khan a local Awami League leader and activist, wake me from sleep. He informs me that Bangabandhu had declared independence, and accordingly, we should do our duty. we immediately came out in the streets at midnight and put barricades to prevent the movements of Pakistani armured vehicles with loudspeakers. Mr. Mohd. Ashraf Khan and others announced Bangabandhu’s declaration of independence. Those who lived in the restricted area of the cantonment did not get the message and they are now making the controversy.”
১৯৭১ এর ২৫ মার্চ এক ঐতিহাসিক ঘটনা, এইদিন পাকিস্তানের শেষ দিন। চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরী এবং সালারে জিলা মোজাফফর আহমদসহ অন্যান্যদের নেতৃত্বে দৈনিক আজাদীর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রকাশনায় অবদান রাখেন শেখ মুজিবুর রহমান, এম এ আজিজ, শেখ মোজাফফর আহমদ, নগর আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর উপ-প্রধান শাহ্ বদিউল আলম, আওয়ামী লীগের অন্যতম সংগঠক বদন মিয়া দিদারী। সারাদিনব্যাপী লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। দৈনিক আজাদীর উক্ত বিশেষ সংখ্যায় চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ আশরাফ খানের নিম্নোক্ত বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়:
‘‘দুশমনের কিল্লাকে চূরমার করার জন্য বাংলার মানুষ প্রস্তুত হউন’’
বিগত ২৪ বৎসর জুলুমের ইতিহাস আপনাদের জানা আছে। এ জুলুমের বিরুদ্ধেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তথা বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষের লড়াই। পশ্চিমা ভাইয়েরা ২৪ বৎসর কেন্দ্রীয় ক্ষমতা দখল করিতে দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করিতে পারিবে, অথচ মেজরিটি জনসংখ্যাগরিষ্ঠ সম্বলিত বাঙালি জাতি এক বছরও দেশ শাসন করিতে পারিবে না এর চাইতে দুঃখ ও অপমান আর কি হইতে পারে। আজও বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কুচক্রী মহল বুলেট বেয়নটের জোরে উৎখাত করিতে চায়। তাই আজ বাংলার মানুষের প্রয়োজন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়িয়া তোলা। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা। যদি কোন শাসক বাংলার এই স্বাধীনতার সংগ্রামকে বন্দুকের নলের সাহায্যে দমাইতে চায় তাহা হইলে বাংলার ছাত্র জনতা কৃষক শ্রমিক নারী পুরুষ হিন্দু-মুসলিম যাহাতে উহার উপযুক্ত জবাব দিতে পারে তার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। নগর আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের আয়োজিত লালদীঘির মাঠের এই জনসভা চট্টগ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষকে সংগ্রামের প্রেরণা যোগাইবে। ইহাতে প্রাণচাঞ্চল্যের জোয়ার আসিবে। তাই আজকের এই বিজয়লগ্নে বাংলার আপামর জনতার নিকট আমাদের অনুরোধ দুশমনের কিল্লাকে চূরমার করার জন্য বাংলার মানুষ প্রস্তুত হউন। জয় বাংলা।
আশরাফ খান ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমান ডেপুটি মেয়র) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে ১৬০০০ ভোট লাভ করেন এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান (বর্তমান মেয়র) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৮০০০ ভোট লাভ করেন। ১৯৮৮-১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য, আজীবন সদস্য রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম, আজীবন সদস্য-ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম প্রবাসী সমিতি, সদস্য-বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্থা, চট্টগ্রাম শাখা, আজীবন সদস্য চট্টগ্রাম মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি সহ অসংখ্য সংগঠনের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন পদে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। দেশব্যাপী সড়ক পরিবহন মালিকদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব হিসেবে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ হতে দায়িত্ব পালন করেন আশরাফ খান। দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই এর পরিবহন সংক্রান্ত উপ-কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা-কলিকাতা বাস সার্ভিস চালুর সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব হিসেবে একটি সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে ঢাকা হতে কলিকাতাগামী প্রথম বাসে গমন করেন। আশরাফ খানের সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে শামসুল হক (গাজীপুর), অধ্যাপক ইউসুফ আলী (দিনাজপুর), শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ ফজলুল হক মণি, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমদ, নূরে আলম সিদ্দিকীসহ আরো বহু স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতাদের হৃদ্যতাপূর্ণ গভীর সম্পর্ক ছিল।

অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেম
১৯৭১ সালে আবু মোহাম্মদ হাশেম ছিলেন স্টুডেন্ট মোবিলাইজার : হরিণা, ত্রিপুরা (ভারত) ১৯৭১ এফএফ কমান্ডারÑরাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি রণাঙ্গণ।
ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে পরিচালিত বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন, যা বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রচন্ড গতিবেগ সঞ্চার করে অবশেষে মুক্তিযুদ্ধে অনিবার্য করে তুলেছিলো, অ্যাডভোকেট আর মোহাম্মদ হাশেম চট্টগ্রামে সেই আন্দোলনের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। উনসত্তর সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন; গণ অভ্যুত্থানের জন্যে সেই বছরটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সেই ইতিহাস সৃষ্টির কালে চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ শাখার সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত করার সুবাদে তিনি ছাত্র-জনতাকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করতে পেরেছিলেন। সত্তরের নির্বাচনে জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাজ করেন, ৭১ এর মার্চে বঙ্গবন্ধুর ডাকে চট্টগ্রামে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং ২৬ মার্চ থেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
আবু মোহাম্মদ হাশেমের জন্ম ১৯ জুলাই ১৯৪৩ খ্রিস্টব্দে, রাউজান থানার মোহাম্মদপুর গ্রামে। তাঁরা পাঁচ ভাই, তিন বোন। ভাইরা হচ্ছেন-আবু মোহাম্মদ খালেদ, আবু মোহাম্মদ হাশেম, আবু মোহাম্মদ রাশেদ, আবু মোহাম্মদ আলমগীর ও আবু মোহাম্মদ খোরশেদ। তাঁদের পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতী আবদুল কুদ্দুস মাষ্টার, মাতা রাবেয়া খাতুন।
আবু মোহাম্মদ হাশেম ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে রাউজান আর আর এসি ইনস্টিটিউশন হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে সিটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে একই কলেজ থেকে ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন।
আবু মোহাম্মদ হাশেম ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে রাউজান থেকে শহরে আসেন এবং ৬২ খ্রিস্টাব্দে সিটি কলেজে ভর্তি হন। একই সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক জীবনও আরম্ভ হয়। সিটি কলেজ ছিলো ছাত্রলীগের দুর্গ, তিনি ছাত্রলীগেই যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নির্বাচিত হন। সেবার সভাপতি পদে বাঁশখালীর আনোয়ারুল আজিম ভোলা মিয়া এবং অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে আবু মোহাম্মদ হাশেম বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
আবু মোহাম্মদ হাশেম মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভ‚মিকা পালন করেন। তিনি এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিরোধ যুদ্ধ সংগঠিত করেন। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে রামগড়ে যান এবং ২ মে রামগড়ের পতন হলে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর এর বাঙালি সৈনিকের সাথে সীমান্ত পার হয়ে ভারতের সাব্রæম শহরে উপনীত হন। সাব্রæম থেকে হরিণা গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার জন্য অন্যদের সঙ্গে বাঁশ-গাছ কেটে হরিণা ক্যাম্প স্থাপন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। হরিণায় ১নং সেক্টরের সদর দপ্তর স্থাপিত হয়। আবু মোহাম্মদ হাশেম যেহেতু জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, তাই তাঁকে এক নম্বর সেক্টরের স্টুডেট মোবিলাইজার নিযুক্ত করা হয়। ছাত্র-যুবকরা ভারত যেতো, তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করাই ছিলো তাঁর কাজ। সেটাই ছিলো মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটমেন্টের প্রথম ধাপ।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি চার থানার মুক্তিবাহিনীর (এফএফ) কমান্ডার নিযুক্ত হয়ে দেশে প্রবেশ করেন এবং রাউজানের কচু পাড়ায় তাঁর সদর দপ্তর স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।
স্বাধীনতার পর বেশ ক বছর তিনি বিরোধী দলীয় রাজনীতি করেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা জাসদের প্রথম সভাপতি; বর্তমানে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি এবং ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম নিজামুল হক দৈনিক দেশ বাংলা একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো।
আশির দশকে আবু মোহাম্মদ হাশেম চট্টগ্রাম জজ আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ভাইস প্রেসিডেন্ট, ২০০২ খ্রিস্টাব্দে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ২০২২ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেম সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিরও সদস্য।
অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেমের সহধর্মিণীর নাম নুরুন্নাহার বেগম। তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। পুত্রদ্বয় হলেন-মাঈনুল হাশেম, ঢাকায় ব্রাক ব্যাংকের হেড অফিসে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত। অপর পুত্র তানভীর হাশেম মুনিমও পৈতৃক পেশা অবলম্বন করে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। তিনি একজন বার-এট-ল।

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা