নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির নির্বাচনে সিলগালা করে রাখা ব্যালট পুনঃগণনার জন্য শ্রম অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন নির্বাচন কমিশন। কারণ একজন প্রার্থীর বেআইনি হস্তক্ষেপে ব্যালট পুনঃগণনার কার্যক্রম আটকে যায়। তার এমন কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমিতির সাধারণ সদস্যরা।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক ও রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন মো. গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে ভোট পুনঃগণনার এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় ভোট পুনঃগণনার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আটকে যায়।
এদিকে উদ্বুত পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন নির্বাচন কমিশন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইউছুপ খান মাহাবুব বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ভোট পুনঃগণনার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। আমরা দুই পক্ষে থেকে চারজন করে মোট আটজনের মতামত নিছি। তাদের সর্বসম্মতিক্রমে মনসুরের কথার ওপর একমত হয়। মনসুর যদি এখন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভোট গণনা করে সেটাও তারা মেনে নেবে। এটার ওপর আমরা নির্বাচন কমিশনাররা একমত হয়ে রেজুলেশন করে মোট ৯ জন কমিশন এবং দুইপক্ষের স্বাক্ষর নিয়েছি। এসময় প্রশাসনের সবাই উপস্থিত ছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ বলে, আমাকে সভাপতি করে দিতে হবে; আমার পক্ষে তো তা সম্ভব না। আমরা জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছি। পরে উনি দুইপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’
ব্রিফিংকালে নির্বাচন কমিশনার নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘মনসুর প্যানেলে যারা এজেন্ট ছিল, তাদের কিন্তু অভিজ্ঞতা কম বলে আমার মনে হয়েছে। যে কারণে ভোট গণনায় দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। তারপরও ভোট গণনা শেষে রেজাল্ট ঘোষণা করব এমন মুহূর্তে সভাপতি প্রার্থী মনসুর সাহেব বহিরাগত লোকজন নিয়ে বলে- ভোট বন্ধ কর, গণনা বন্ধ কর, এই এজেন্ট উঠে যাও, কোন ভোট হবে না বলে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। এসব সিসি ক্যামরায় ধারণ করা আছে। এমন সময় আরেকজন লোক দেখা গেল নিজেকে লেফটেনেন্ট কর্নেল পরিচয় দিয়ে আমাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নির্বাচনের ফলাফল গণনায় হস্তক্ষেপ করে। আমরা মনে করেছি উনি একজন প্রশাসনের লোক। কিন্তু আমরা জানতে পারি ওই লোকটি ভ‚য়া পরিচয় ব্যবহার করেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হলাম। দুঃখের কথা হলো, আপনি সংবিধান মানবেন না, জোর করে সমিতি দখল করবেন এভাবে তো হয় না।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি প্রার্থী এস এম আবুল মনসুর বলেন, ‘আমি কথা বললে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে বিধায় কথা বলা নিষেধ আছে।’ কোন বিষয়ে জানার থাকলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার ২ লাখ টন চাল জি-টু-জি’র অধীনে আমদানি করছে। এসব চাল আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস কার্যক্রম আরম্ভ করতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। এই নির্বাচনকেন্দ্রিক ঝামেলা যদি লেগেই থাকে তাহলে সরকারি চালগুলো পরিবহন ও চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে। এতে দেশের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এছাড়া বাধাগ্রস্ত হবে সরকারের খাদ্য কর্মসূচি। তবে অনেকেই বলছেন, সে ধরনের কোন শঙ্কা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলেন, ‘একটি পক্ষ গণতান্ত্রিক উপায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে জোর করে চেয়ার দখল করতে চায়। তাদের স্বপ্ন সফল হলেই খাদ্য বিভাগ ও পরিবহনে লুটপাটের রাজস্ব কায়েম করবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সমিতির দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ধারা উপধারা অনুসরণ এবং ঘোষিত তফসিল মোতাবেক গত ৩০ নভেম্বর ১৮টি পদে স্বতন্ত্র দুটিসহ মোট ৩৮ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ শেষে রাত ৩টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ভোট গণনা শেষ করা হয়। এসব কার্যক্রম সারাক্ষণ সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয় এবং শ্রম দপ্তরের প্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক প্রত্যক্ষ নজরদারীর মাধ্যমেই যাবতীয় কর্মকান্ড শেষ করা হয়। ফলাফল ঘোষণার প্রাক্কালে এক প্রার্থীর নেতৃত্বে কিছু বহিরাগত নির্বাচন কমিশনকে ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রাখার জন্য বাধ্য করেন। অনন্যোপায় হয়ে নির্বাচন কমিশন এবং উপস্থিত কর্মকর্তাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমুদয় ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সিলগালা করে পুলিশ প্রশাসনের জিম্মায় রেখে দেওয়া হয়।