এম এ হোসাইন
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কিছুটা থমকে থাকা কোরবানির পশুর হাটগুলো রোদের দেখা মিলতেই জমজমাট হয়ে উঠেছে। হাটে ভিড় করতে শুরু করেছেন ক্রেতারা। প্রতিটি হাটে প্রচুর কোরবানির পশু থাকায় দাম নিয়ে চলছে টানাটানি। বিপুল মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিটি হাট জমে উঠলেও বিক্রেতারা বলছেন সে অনুপাতে বিক্রি হচ্ছে না। তবে জমজমাট উপস্থিতিতে স্বস্তি ফিরেছে বাজারের। শেষ সময়ে এসে দামাদামির চেয়ে কেনাবেচায় বেশি জোর দিবেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
গতকাল বুধবার সাগরিকা ও বিবিরহাট পশুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম ও আশপাশের উপজেলা থেকে ট্রাকে করে শত শত গরু এনে হাট ভরিয়ে তুলেছেন বেপারিরা। ছোট-বড় নানা আকারের কোরবানির গরুতে হাট উপচে পড়েছে। তবে টানা বৃষ্টির কারণে অনেক হাটে কাদা জমে যাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতারা অস্বস্তিতে পড়েছেন। হাট ইজারাদাররা খড়কুটো, বালি ও মাটি দিয়ে কিছুটা স্বস্তি দিতে চেষ্টা করছেন।
বেপারিরা জানান, যত আয়োজনই হোক, কাঙ্খিত ক্রেতার দেখা মিলছে না। খামারি ইদ্রিস আলী বলেন, গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে, গরু বড় করতে খরচও বেশি। কিন্তু এখন দাম পাচ্ছি না।
গরুর সারি, ট্রাকভর্তি পশু, ডাক-হাক-সব মিলিয়ে হাটগুলো যেন উৎসবমুখর এক পরিবেশ। কেনার জন্য প্রচুর মানুষের উপস্থিতিও আছে। কিন্তু এত আয়োজনের মাঝেও নেই কাঙ্খিত সেই ক্রেতা। অনেকেই হাটে এসে দাম যাচাই করে চলে যাচ্ছেন। বিক্রেতারা বলছেন, খরচ বেশি হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে।
সাতকানিয়া থেকে ১৩টি গরু নিয়ে আসা জামাল উদ্দিন বলেন, ৩টি গরু বিক্রি করেছি। বাকিগুলো বক্রি করতে পারছি না। যে দাম চাচ্ছে, তাতে লোকসান হবে। বাজারে প্রচুর গরু আছে, সেজন্য দাম কম চাচ্ছে। কিন্তু কম দামে তো কেউ বিক্রি করতে পারবে না। এখনো ক্রেতাদের অনেকেই বাজার যাচাইয়ে ব্যস্ত। বাকলিয়া থেকে বিবিরহাটে আসা নাজমুল ইসলাম বলেন, গরুর দাম একটু কম মনে হয়েছে, আরও একদিন পরে কিনবো। দাম আরো কমার সম্ভাবনা বেশি।
বেপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ গরু কিনে এনেছেন প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে। কেউ কেউ সারা বছর নিজেই পালন করেছেন। খাদ্যের দাম, পরিবহন খরচ, পরিচর্যা, সব মিলিয়ে তারা মনে করছেন, কম দামে বিক্রি করলে লোকসানে পড়তে হবে।
নারী ক্রেতা সাবরিনা সুলতানা বলেন, লাখ টাকার মধ্যে একটি গরু কিনতে এসেছি, একটু ঘুরে দেখি। পছন্দ হলেই কিনে ফেলবো।
হাটে এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি গরু বেশি দেখা যাচ্ছে। অনেক বেপারি জানিয়েছেন, লাখ টাকার নিচে গরু ছাড়তে নারাজ তারা, কারণ নিজেরা বেশি দামে কিনেছেন কিংবা বছরজুড়ে খরচ করেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এ বছর স্থানীয়ভাবে ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি গবাদিপশু উৎপাদিত হয়েছে। তবে সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি, অর্থাৎ ঘাটতি আছে প্রায় ৩৫ হাজার ৩৮৭টি পশু। গরুর সংখ্যা সর্বাধিক, ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। বাকিগুলো হলো ছাগল, ভেড়া ও মহিষ।
জেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি পশু উৎপাদন হয়েছে স›দ্বীপ (৮৫ হাজার ২৫০টি), পটিয়া (৭৮ হাজার ৭৯১টি) ও ফটিকছড়িতে (৭৮ হাজার ৫৩০টি)। নগরে পাঁচলাইশ, ডবলমুরিং ও কোতোয়ালী এলাকায়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পশু প্রস্তুত হয়েছে।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে নগরের কোরবানির পশুর হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ। তিনি বিবিরহাট ও এক কিলোমিটার হাট ঘুরে দেখেন এবং ইজারাদার, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, সিএমপি সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিটি হাটে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তায় পুলিশের নজরদারি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থ পরিবহনে যেন কেউ ঝুঁকিতে না পড়ে, সে বিষয়েও আমরা সজাগ।
সবমিলিয়ে, আবহাওয়া উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে হাটে ভিড় বাড়লেও এখনও কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা শুরু হয়নি। বিক্রেতারা ভালো দাম পাওয়ার অপেক্ষায়, আর ক্রেতারা বাজেটের মধ্যে উপযুক্ত পশু খুঁজছেন। এই টানাপোড়েনের মাঝেই জমে উঠেছে চট্টগ্রামের কোরবানির পশুর হাট। এখন দেখার পালা, ঈদের আগের কয়েক দিনে বাজারে ঘাটতি কাটিয়ে বিক্রেতারা কাঙ্খিত দাম পান কি না।