শেখ হাসিনাসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করা সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সিএমপির চান্দগাঁও থানার পর এবার পাঁচলাইশ থানায় আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নগরীর মুরাদপুরে গুলিতে কলেজছাত্র ওয়াসিম আকরাম নিহতের ঘটনায় করা ওই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাছান চৌধুরী নওফেল, সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ একশ’ আট জনকে আসামি করা হয়েছে।
নগরীর পাঁচলাইশ থানায় গত ১৮ আগস্ট দিবাগত রাতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত কলেজছাত্র ওয়াসিম আকরামের মা জোসনা বেগম। মামলায় অভিযুক্ত অন্যরা হলেন সাবেক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, চসিক কাউন্সিলর যথাক্রমে শৈবাল দাশ সুমন, কাউন্সিলর আবদুস ছবুর লিটন, এসরারুল হক এসরার, মোবারক আলী, হারুন অর রশীদ, মোরশেদুল আলম, নুর মোস্তফা টিনু, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, আশরাফুল আলম, গিয়াস উদ্দিন, জহরলাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, জিয়াউল হক সুমন, পুলক খাস্তগীর, নুরুল আবছার মিয়া, মোহাম্মদ ওয়াসিম, আবদুস সালাম মাসুম, ছাত্রলীগ নেতা জাকারিয়া দস্তগীর ও মো. ফিরোজ প্রমুখ।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, মুরাদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে কলেজছাত্র ওয়াসিম আকরাম নিহতের ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ একশ’ আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
শীর্ষ নেতাদের বাইরে মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি,মো. ইসমাইল, মো. দেলোয়ার, এন. এইচ. মিন্টু, মোহন ঘোষ, মো. আলী, ভূবন ঘোষ, আরহাম খান, ইসমাইল উদ্দিন লিটন, দৌলত খান, এনামুল হক মানিক, নুর মোহাম্মদ, মো. সোহেল, নেজাম উদ্দিন, মো. আমজাদ হোসেন, ইরফানুল আলম তুষার, ইব্রাহিম খলিল, জয়নাল উদ্দিন জাহেদ, নুর নবী সাহেদ, শহীদুল ইসলাম, সাগর দাস, জাহেদ হোসেন, জি এম তৌশিফ, সাদ্দাম হোসেন ইভান, দেবাশীষ পাল দেবু, মো. জাবেদ, মহিউদ্দিন, মো. জাফর, মো. আলী (সাহেদ), মহিম আজম, দিদারুল আলম, মো. ইলিয়াছ, মো. আলী, মো. ইসহাক, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, দিদারুল আলম মাসুম, মো. মাসুম, জিহান আলী খান, মহিউদ্দিন শাহ, মুজিবুর রহমান রাসেল, মোহাম্মদ রাশেদসহ আরও একশ’ আটজনকে। এর বাইরে অজ্ঞাতনামা আরও একশ’ থেকে দেড়শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ১৬ জুলাই বিকেল তিনটা থেকে চারটার মধ্যে নিহত ওয়াসিম আকরাম পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুরের বারকোড রেস্টুরেন্টের সামনে ছিলেন। তখন ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী শক্তিপূর্ণ যৌক্তিক আন্দোলন চলছিল। আন্দোলন চলাকালে আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে সারাদেশের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা অস্ত্রসস্ত্রসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ওই দিন বিকেল চারটায় কলেজছাত্র ওয়াসিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং ওই সময়ে তার ওপর আসামিদের নির্দেশে বোমা বিস্ফোরণ ও লাঠিসোঁঠা, হকিস্টিক, কিরিচ এবং মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালানো হয়। এক পর্যায়ে আসামিদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে ওয়াসিম বুকে ও নাভিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কলেজছাত্র ওয়াসিম আকরাম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং একই কলেজে ছাত্রদলের যুগ্ম আহŸায়কের দায়িত্বে ছিলেন। নিহত ওয়াসিম কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শফিউল আলমের ছেলে। তারা দুই ভাই ও তিন বোন।
এর আগে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কলেজছাত্র তানভীর ছিদ্দিকীকে (১৯) হত্যার অভিযোগে সিএমপির চান্দগাঁও থানায় আরেকটি মামলা হয়। ওই মামলায় সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাছান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনকে আসামি করা হয়। গত ১৬ আগস্ট দিবাগত রাতে নিহত ছাত্রের চাচা মোহাম্মদ পারভেজ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।