শেখ হাসিনার মুখে নির্বাচন নিয়ে কথা ‘শোভা পায় না’

0

পূর্বদেশ ডেস্ক

একইদিনে তিনটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনার দেওয়া সাক্ষাৎকার বুধবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া কিংবা না দেওয়ার প্রসঙ্গে তার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে, যার মধ্যে আছেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হলেও এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় ক্ষমা চাইতে রাজি নন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া কিংবা না দেওয়ার প্রসঙ্গে তার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে, যার মধ্যে আছেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। খবর বিবিসির।
তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই বলছেন, পরপর তিনটি নির্বাচনে শেখ হাসিনা নিজেই যেখানে জনসাধারণের ভোটাধিকার হরণ করেছেন, সেখানে তার মুখে এই ধরনের কথা ‘শোভা পায় না’।
অন্যদিকে বুধবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে নির্বাচন ঘিরে ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, নির্বাচন বানচালে ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তির কাছ থেকে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে।
ইমেইলের মাধ্যমে নানা প্রশ্নের জবাব দেন হাসিনা। যেগুলোর একটি ছিল বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া না হলে দলটির লাখ লাখ সমর্থক আগামী বছরের নির্বাচন বয়কট করবে।
পরবর্তী সরকারের অবশ্যই নির্বাচনি বৈধতা থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি কার্যকর রাজনৈতিক সিস্টেম চাইলে আপনি লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না।
তবে পরপর তিনটি নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর মুখে এমন কথা সাজে কি না এমন প্রশ্ন তুলেছেন অন্তত চারটি রাজনৈতিক দলের নেতারা।
হাসিনার এমন বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কে ভোট দেবে না দেবে এটা বাংলাদেশের জনগণের ব্যাপার। কেউ যদি মনে করে, বাংলাদেশের মালিকানা কেউ নিয়ে নিয়েছে, এটা তো সঠিক হবে না।
সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ব্যক্তিগত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোটাররা কাকে ভোট দেবে, না দেবে- গণতান্ত্রিক দেশে এটা তাদের নিজেদের অধিকার।
দলটির আরেকজন নেতা হাসান মাহমুদ টুকু মনে করেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন বয়কট করলে তার খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, উনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার কতগুলো নির্বাচন উনি প্রতিনিধিত্বমূলক করেছেন? ভোটাধিকার হরণের নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করে জনরোষের মুখে পালিয়ে গিয়ে এই কথা বলা ওনার মুখে শোভা পায় না।
অনেকটা একই কথা বলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন সকলের আকাক্সিক্ষত হলেও শেখ হাসিনা নিজে ‘তিন-তিনটা নির্বাচনকে চূড়ান্ত যে তামাশা-প্রহসনে পর্যবসিত করেছিলেন, এ ব্যাপারে তার বা তার সরকারের সামান্যতম উপলব্ধি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়ে শেখ হাসিনার মন্তব্যকে যথার্থ মনে করছেন না গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তার মতে, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। ফ্যসিবাদী শাসনের পতনের পর সেসময় অন্যায়-অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িতরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে এবং সাধারণ সমর্থকরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দলে যুক্ত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ বা কোনো রাজনৈতিক দল ছাড়া যে নির্বাচন হতে পারে, সেই নজিরতো শেখ হাসিনাই তৈরি করেছিলেন। সেখানে এই কথা বলা তার যুক্তিতেও আসে না।
একই বক্তব্য জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিরও। দলটির মতে, কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া যায় না।
দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বলেন, দেশবাসী গত তিনটি কথিত নির্বাচনে ভোটদানের সুযোগ বঞ্চিত হয়েছে। দেশের মানুষ যদি আগামী নির্বাচনে উৎসাহের সঙ্গে ভোট দেয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে।
প্রসঙ্গত, গত মে মাসে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।