‘শেকড় থাকবে মাটিতে, ডালপালা ছড়াবে আকাশে’- তির্যক নাট্যদলের ৫০ পূর্তি

64

পূর্বদেশ অনলাইন
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালের নির্মাণ আর সৃজনে, আরোপ আর উদ্ভাবনে বাংলাদেশের নাট্যমঞ্চে নব-নাট্যের সূত্রপাত। ১৬ মে ১৯৭৪, সেই অসামান্য সময়কালে তির্যক নাট্যদলের জন্ম। মানুষের জন্য, শিল্পের জন্য কমিটেড থাকার ধারাবাহিক এই পথটি ৫০ বছর অতিক্রম করেছে। তির্যক নাট্যদলের ৫০ বছর পূর্তির দিনে আবেগে আপ্লূত হয়েছেন দলের সম্মানিত সদস্য ও কলাকুশলীরা। তির্যক নাট্যদলের দল প্রধান একুশে পদক প্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দারের বলিষ্ঠ হাতে চলমান পথচলায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ভাবনা এবং কর্মে তির্যক হাজার বছরের বাঙালির ঐতিহ্যসন্ধানী। তাই বাঙালির নাট্য-ঐতিহ্যের কালজয়ী রচনা সম্ভার থেকে কিছু মণিকাঞ্চনের মঞ্চ রূপায়নে সমৃদ্ধ করেছে বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের জগতকে। রবীন্দ্রনাথ, মধুসূদন দত্ত, নজরুল, ওয়ালীউল্লাহ্ তাঁদেরই কয়েকজন। নিরীক্ষা হিসেবে লোকজ সংস্কৃতি আশ্রিত আঙ্গিকে, নিজস্ব সুর-তাল-ছন্দে তির্যক উপস্থাপন করেছে ব্যতিক্রমী সৃজনকর্ম – ছন্দনাটক। তির্যক বিশ্বাস করে, ‘শেকড় থাকবে মাটিতে, ডালপালা ছড়াবে আকাশে’। তাই নাট্যপ্রয়োগের আঙ্গিকেও আত্মীয় করে নিয়েছে ব্রেখট, গটওস্কি প্রমুখ বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বদের রচনাকে। তির্যক প্রযোজনার আঙ্গিক ভাবনা বিষয়ের প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্রমবিবর্তনশীল। তির্যকের প্রযোজনায় সফলভাবে চিত্রিত হয়েছে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম। এ দলের আরেকটি নিরীক্ষামূলক প্রয়াস ফেস্টুন-ড্রামা’য় রূপায়িত হয়েছে একাত্তরের দগ্ধ, করুণ এবং স্মৃতি। ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে তির্যক আয়োজন করেছে বাংলাদেশে প্রথম ‘ব্রেখট্ উৎসব’। বাংলাদেশে মঞ্চ নাটকের ধারাবাহিক চর্চার ইতিহাসে রবীন্দ্র নাট্যোৎসবের সূচনার পথিকৃৎ তির্যক নাট্যদল। প্রথম রবীন্দ্র নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে। ১৬ মে ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রামের নাট্যমঞ্চে প্রথমবারের মত ব্রেখটের ‘সমাধান’ নাটকের শততম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়। দুই বাংলার নাট্যমঞ্চে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী কাব্যনাটক ‘বিসর্জন’-এর প্রথম দ্বি-শত মঞ্চায়ন করেছে তির্যক। শিশুনাট্য প্রযোজনা, শিশু চিত্রাঙ্কন, মাতৃভাষা ও শহীদ শিশুদের নিয়ে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড দিবসে ‘নাট্যভাষা বাংলা আমার’ শীর্ষক নাট্যোৎসব, বিষয়ভিত্তিক লেকচার ওয়ার্কশপ, সেমিনার, নাট্যস্মারক ও নাট্যপ্রযোজনার ছবি প্রদর্শনী, নাট্যমেলা, তির্যক বুলেটিন-এর নিয়মিত প্রকাশ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই এই নাট্যদল পৌঁছে যায় দর্শকদের কাছে। তির্যকের আমন্ত্রণে এসেছেন দেশ-বিদেশের বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্বগণ। প্রদর্শিত হয়েছে দুই বাংলা এবং বিশ্বনাটকের বিখ্যাত প্রযোজনা। “থিয়েটার ডিজাইন এবং অভিনয় প্রশিক্ষণ কোর্স’ শিরোনামে এ পর্যন্ত ১৭টি কোর্স সমাপ্ত হয়েছে। ৫০ বছরে ৪৫টি নাটকের প্রায় ২,৮০০ টিরও বেশি প্রদর্শনীর অভিনয়ের সাক্ষী সকল দর্শক-শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি অকুণ্ঠ ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা জানায় তির্যক নাট্যদল। গতকাল ১৬ মে ২০২৪ সন্ধ্যায় নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউট চট্টগ্রাম এর লেকচার থিয়েটারে দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তির্যক নাট্যদলের নির্দেশক, অভিনেতা, কলাকুশলী ও সম্মানিত সদস্যবৃন্দ। এ সময় দেশের বাইরে ও দূরদূরান্তে থাকা দলের সম্মানিত সদস্যরা অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।