শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসুক দেশ

4

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। গত ৮ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. বৃহস্পবিার রাতে বঙ্গভবনের দরবার হলে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সহ ১৪ উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন। বাকি তিনজন কয়েকদিনের মধ্যে শপথ নেয়ার কথা রয়েছে। মূলত প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্যরা শপথ গ্রহণের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন তারা। অন্তর্বর্তীকালীন এ নতুন সরকারকে আমরা স্বাগত ও প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। জুলাই মাস জুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মধ্য জুলাই-এ সহিংসতায় রূপ নেয়ার পর তা অনেকটা গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির মুখে ৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার দুপুর নাগাদ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং সেনা বাহিনীর সহযোগিতায় নিরাপদে ভারতে আশ্রয় নেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ কার্যত সরকারবিহীন হয়ে পড়ে। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার রাতে শপথের পূর্ব পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের অধিনে মূলত সেনাবাহিনী দেশ পরিচালনা করেন। বৃহস্পতিবার নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ হয়েছে। একই সঙ্গে দেশ এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হল বলে আমাদের বিশ্বাস। গতকাল শুক্রবার উপদেষ্টাদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বন্টন হয়েছে বলে আমরা জানতে পারি। দ্রæতসময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বন্টন করার মাধ্যমে কাজের গতি আসবে নিঃসন্দেহে। জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রতিরক্ষাসহ ২৭ টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বাকি সকলকে একটি করে মন্ত্রণালয় দেখার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
আমরা জানি, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সরকার বিহীন দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিচরম অবনতি ঘটেছে। এ সময়ে দায়িত্ব নেওয়া নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিঃসন্দেহে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আওয়ামীলীগের দীর্ঘ শাসনে অনেক অর্জন থাকলেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় রাষ্ট্রের সাংগঠনিক কাঠামো অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে। নতুন সরকার সেগুলো সংস্কারের কথা বলছেন। বাস্তবে কাজটি সহজ নয়, অনেকটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তা ছাড়া এই সরকারের কাছে আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনগণের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। সবগুলো বিবেচনায় নিয়ে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সরকার পরিচালনা করতে হবে। তবে সবার আগে নজর দিতে হবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার বিষয়ে। শুক্রবার বিধ্বস্ত পুলিশ বাহিনী কাজে যোগদান করেছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে। অনেক স্থানে থানা অস্তিত্বও নেই। পুলিশ টুল-টেবিল নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। আশা করা যায়, দেশের প্রশাসনসহ সর্বস্তরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল প্যারিস থেকে ঢাকায় ফিরে তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা তাঁর প্রথম কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। কারও ওপর কোনো হামলা না করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে, এ কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ধর্ম-গোত্র রক্ষা করা আমাদের কাজ। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু।’ প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটা যথার্থ বলে মনে করি। সেই অনুযায়ী দ্রæত কাজ করতে হবে। এছাড়া আমরা মনে করি, নির্বাচিত না হলেও জনপ্রত্যাশিত এ সরকারকে দল-মতনির্বিশেষে জনগণ ও সব রাজনৈতিক নেতৃত্বের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। রাজনৈতিক সরকারগুলোর মধ্যে একধরনের প্রবণতা দেখা যায়, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু দলীয়করণ করা হয়। দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখলে নেমেছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের অনুগতরা। বিদায়ী সরকারের অনেক কর্মকর্তা অনেকেই নানা অজুহাতে বিদায় নিয়েছেন। অনেকে বিদায়ের অপেক্ষায় আছেন। এই পদগুলোতে যেন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কিছু নিয়োগ ও পরিবর্তন হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রদবদলে যেন দলীয় প্রাধান্য না পায় সেই দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশকে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নিতে হবে এ সরকারকে। আর এ জন্য দরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যথাসময়ে সেই কাজটি সম্পন্ন করবেন-এমনটি প্রত্যাশা দেশবাসীর।