নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এ সময় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের সাথে কথা বলেন। পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেন। একই সঙ্গে সমাধানের আশ্বাসও দেন।
গতকাল সোমবার সকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চমেক হাসপাতালে আসেন। বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন শেষে হাসপাতালের দায়িত্বরতদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন তিনি। এরপর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়, এমন অভিযোগের জবাবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, চমেক হাসপাতাল ২২শ বেডের, কিন্তু রোগী থাকে সাড়ে তিন হাজারের বেশি। ধারণক্ষমতার বাইরে রোগী ধারণ করায় একটু তো ব্যতিক্রম হবে। বাড়তি পয়সা নেওয়াসহ নানান অভিযোগ আছে। তবে পরিদর্শন করতে করতে চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে যেটা মতবিনিময় হলো তাতে আমি বলব যে এখানে সরকারেরও যথেষ্ট দায়বদ্ধতা আছে। এখানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির যেসব আউটসোর্সিং কর্মী নেওয়া হয়, গত তিন-চারমাস যাবত তাদের বেতন নেই। বেশ কিছু সমস্যা যাওয়ায় এখনো তাদের বেতনভাতার বিষয়টি পাশ হয়নি। সেটি পাশ হলেই সরকারিভাবে তাদের জন্য পুনরায় বেতনভাতা বরাদ্দ হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো আর বিনা পয়সায় তাদের মাসের পর মাস রাখতে পারবে না, তখন তারা যেসব রোগীর কাজ করছেন তাদের কাছ থেকে কিছু পয়সা নেন। এটা তার ব্যক্তিগত বেতন পোষানোর জন্য নিয়ে থাকছে। এটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা। তবে আমরা বলছি এভাবে তাদের বেতনভাতা বন্ধ হওয়া উচিত হয়নি। প্রক্রিয়াটি অনেক আগে থেকেই এমন হওয়া উচিত ছিল যা বরাদ্দ দেওয়ার কথা সেটি যেন সরকার সারাবছর দেয়।
হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স-টেকনোলজিস্টের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, এসব সমস্যা হয়তো একদিনে সমাধান সম্ভব নয়। তবে আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে হয়তো সমাধান সম্ভব। কিন্তু পুনর্গঠন করতে হবে। প্রতিদিন হাসপাতালে ১২০০ থেকে ১৫০০ রোগী আসছে। এসব রোগীর মধ্যে কিছু রোগীকে ওয়ার্ডের ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে, কিছুকে বাইরে পাঠানো হচ্ছে। যদি গ্রাম-ইউনিয়ন-উপজেলা পর্যায়ে রোগীদের বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো শুধু ওই রোগীটাই বড় হাসপাতালে আসবে যার সত্যি সত্যি এখানে চিকিৎসা দরকার। যেটাকে বলা হয় রেফারাল সিস্টেম। এটা কিন্তু এখন পর্যন্ত হয়নি। ইউনিয়ন পর্যায়ে কিছু ছোট ছোট কমিউনিটি ক্লিনিক হয়েছে। কিন্তু সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক নেই। উপজেলা-সদর-জেলা হাসপাতালগুলোতেও বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এটা আছে তো ওটা নেই, ওটা আছে তো এটা নেই। যে কারণে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেননা চিকিৎসাসেবা একটি যৌথ কাজ। চিকিৎসক লাগে, টেকনিশিয়ান লাগে, যন্ত্র লাগে। সেজন্য আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে।
কিছু কিছু গণমাধ্যমে ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেছে বলে যে সংবাদ প্রচার করা হয়, তা নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন আছে জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আপনারা কি নিশ্চিত ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেছেন? এসব প্রতিবেদনের কারণে কিন্তু মানুষ খুব উত্তেজিত হয়ে যায়, ভুল বুঝতে পারে। এই ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করা আমাদের কারও কাম্য নয়। নিজের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হয়ে যদি আমরা সংবাদগুলো পরিবেশন করি রোগী-হাসপাতাল-মানুষ সবার সঙ্গে একটা সখ্যতা তৈরি হবে। তবে আমি চাই যেটি সত্যি সত্যি অন্যায় হয়েছে সেটি খুব ভালো করেই বের করা হোক এবং যারা দায়ী তারা শাস্তির আওতায় আসুক। কিন্তু অকারণে কাউকে দোষী বানানো উচিত নয়। এ সময় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।