শুক্র গ্রহে রহস্যময় বা অদ্ভুদ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটি গ্রহটির ভেতরে কোনো প্রাকৃতিক পরিবর্তন বা নড়াচড়া হচ্ছে তারই ইঙ্গিত বলে দাবি তাদের। নতুন গবেষণা অনুসারে, শুক্র গ্রহের পৃষ্ঠে প্রায় গোলাকার কিছু গঠন দেখা গিয়েছে। গবেষকদের ধারণা, গ্রহটিতে এখনও ভূ-গাঠনিক বা টেকটোনিক কার্যকলাপ চলছে।
আবিষ্কারটি নতুন হলেও যেসব তথ্য ব্যবহার করে এমন তথ্য মিলেছে সেগুলো ৩০ বছরেরও বেশি পুরনো। এসব তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ‘ম্যাজেলান’ মিশনে পাওয়া গিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। খবর বিডিনিউজের
গবেষকরা বলছেন, শুক্রের এমন আচরণ পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলোর মতোই, যা ভূত্বকের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে। এটি পৃষ্ঠের সান্দ্র বা আঠালো অভ্যন্তরের ওপর ভেসে চলে এবং ক্রমাগত পৃষ্ঠের পরিবর্তন ঘটায়। শুক্রের টেকটোনিক প্লেট না থাকলেও এর পৃষ্ঠ এখনও ভেতরের গলিত পদার্থের কারণে পরিবর্তিত হচ্ছে।
গ্রহটির পৃষ্ঠের বিকৃতি বা পরিবর্তন হচ্ছে তা বোঝার জন্য শুক্রের ‘করোনা’ নামের বিশেষ গঠন নিয়ে পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। এগুলো কয়েক ডজন থেকে কয়েক শত মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। শুক্রে শত শত করোনা রয়েছে এবং ধারণা করা হয়, এগুলো তখনই তৈরি হয় যখন গ্রহের অভ্যন্তরের ম্যান্টল থেকে গরম পদার্থ ওপরে উঠে এসে পৃষ্ঠের উপরিভাগের ভূত্বককে ঠেলে তোলে।
গবেষকরা বলছেন, এ আবিষ্কার কেবল কাছের গ্রহ শুক্র সম্পর্কেই নয়, বরং পৃথিবীর অতীত ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারে। ‘করোনা গঠন বর্তমানে পৃথিবীতে নেই। তবে গবেষকদের ধারণা, আমাদের গ্রহ যখন তরুণ বয়সে ছিল ও যে সময় টেকটোনিক প্লেট গঠিত হয়নি ওই সময়ের পৃথিবীতে করোনা থাকতে পারে’- বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক, বাল্টিমোর কাউন্টির ‘ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড’-এর সহকারী গবেষণা বিজ্ঞানী ও নাসা’র গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের সহকারী গবেষণা বিজ্ঞানী গায়েল ক্যাসিওলি। তিনি বলেন, ‘মাধ্যাকর্ষণ ও ভূ-প্রকৃতি বা টপোগ্রাফি তথ্য একত্র করে করা এ গবেষণাটি শুক্রের পৃষ্ঠে বর্তমানে যেসব অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া কাজ করছে, সেগুলোর বিষয়ে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিয়েছে’।
এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ম্যাজেলান মিশনের মাধ্যমে, যা ১৯৯০-এর দশকে শুক্রের কক্ষপথে ঘুরেছিল। মিশনটি বহু বছর আগের হলেও শুক্রের মাধ্যাকর্ষণ ও ভূ-প্রকৃতি সংক্রান্ত সবচেয়ে ভালো তথ্য সরবরাহ করেছে এটি। সেইসব তথ্যের মধ্যে শুক্রের বিভিন্ন করোনা গঠনের তথ্যও ছিল। তবে এগুলোর সঠিক কারণ গবেষকদের কাছে ছিল অজানা।
ওই সময় করোনার বিভিন্ন গঠনের জন্য বেশ কিছু ব্যাখ্যা প্রস্তাব করেছেন গবেষকরা। তবে নতুন গবেষণায় বিস্তারিত মডেল তৈরি করে গবেষণা দলটি পরীক্ষা করেছে, যদি করোনা গঠনগুলো নিচ থেকে গরম বাতাসের স্তুপের মাধ্যমে তৈরি হয় তাহলে কী হবে এবং তারপর সেইসব সিমুলেশনকে শুক্রের বাস্তব তথ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা।
গবেষণায় গবেষকদের সিমুলেশন ও বাস্তব তথ্য মিলে গিয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এ গবেষণায় ৭৫টি করোনা গঠনের মধ্যে ৫২টি করোনা এমন কিছু উপাদান ধারণ করে যেগুলো হয়তো ভাসমান ম্যান্টল পদার্থের কারণে তৈরি, যা সম্ভবত শুক্রের পৃষ্ঠের ওপর প্রভাব ফেলছে।