রতন কুমার তুরী
দেশজুড়ে তীব্র শীত। অনেক সময় সারাদিন সূর্যের দেখা মিলছেনা ফলে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের কষ্ট বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে এদের অনেকেই না খেয়ে দিননিপাত করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা। মূলতঃ বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিগত অবস্থান হিমালয় থেকে বেশ কাছে হওয়ায় এখানে শীত মৌসুমে অনেক সময় প্রবলভাবে শীত পড়ে। তাছাড়া প্রকৃতির ওপর বৈশ্বিক প্রভাব দিনদিন প্রকৃতিকে রুষ্ট করে তুলছে ফলে মানুষের অপরিকল্পিতভাবে প্রকৃতির ওপর আঘাত প্রকৃতি তা মেনে নিতে না পেরে রুদ্র মূত্তি ধারণ করে মানুষেরই ক্ষতি করে চলেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের প্রত্যেককে প্রকৃতির ওপর সদয় হতে হবে। দেশের আগামি প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে দেশের প্রকৃতি সমূহকে সুরক্ষা দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সবুজ বন কেটে নগারয়ন করা যাবেনা। দেশের সকল বন, পাহাড়, নদীসহ প্রকৃতিগতভাবে অবস্থানরত এসকল কিছুকে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে গণ্য করে তা ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব কিছু মেনে না চলার ফলে আমাদের দেশের ঋতু প্রক্রিয়াটাই বদলে গেছে। কখনও কখনও প্রকৃতি ঋতুভিত্তিক আচরণ করছেনা। বর্তমানে
দেশজুড়ে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে অথচ এ ঠান্ডা বাড়ার কথা ছিল আরো একমাস পর আর এতে করে বাড়ছে সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো রোগ। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছে ছোট শিশু আর বৃদ্ধরা। এদের জীবন যাপনে ঘটেছে ছন্দপতন। ঠান্ডা জনিত রোগ নিয়ে প্রতিদিন হাসপাতাল গুলোতে ভীড় করছে হাজারো মানুষ।
ঠান্ডা থেকে বাঁচতে অনেকেই কাঠের গুড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করছে কেউবা কম্বল মুড়ি দিয়ে বাড়িতেই শুয়ে আছে। শীতের প্রকোপ এতোবেশি যে, কোনো কোনো জায়গায় সারাদিন সূর্যের দেখাও মিলছেনা। এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে দেশের শ্রমজীবী মানুষ। যাদের দৈনিক শ্রম না দিলে তাদের পরিবার চলেনা।
প্রকৃতপক্ষে এদেশ ষড়ঋতুর দেশ। এখানে প্রতিটি ঋতু আসে তাদের আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে। মানুষ ঋতুগুলো উপভোগও করে কিন্তু, ইদানীং প্রকৃতির প্রতি মানুষের অত্যধিক বিরূপ আচরণের ফলে ঋতুগুলো ক্রমেই তাদের বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এখন শীত, বর্ষা, গ্রীষ্মে প্রকৃতি বৈরী আচরণ করে চলেছে ফলে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বর্তমানে চলছে শীত মৌসুম। এ মৌসুমে নিকট অতীতে এতো ঠান্ডা অনুভূত হয় নাই। এমন ঠান্ডায় দেশের সিংহভাগ পেশাজীবী মানুষ তাদের কাজ ঠিক মতো করতে পারছেনা ফলে তাদের পরিবারে দেখা দিয়েছে অভাব। শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে দৈনিক শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মধ্যে রয়েছে দৈনিক কামলা, রিকশা ওয়ালা, দৈনিক ভিত্তিক গার্মেন্টস শ্রমিক, দৈনিক ভিত্তিক কৃষিজীবী, জেলে ইত্যাদি পেশার মানুষ। একজন দৈনিক কামলা প্রতিদিন কাজ করতে না পারলে তার সংসার চলেনা। এ শীতে তারা কোনো জায়গায় কাজও পাচ্ছেনা কারণ প্রচন্ড শীতে মালিকপক্ষ ঘুম থেকে ওঠতেই বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে ঠাডা আবহাওয়া বিরাজ করতে থাকলে তাদের কষ্টের কোনো সীমা থাকবেনা। তাই এসমস্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অন্তত যে ক’দিন শীত অব্যাহত থাকবে ততোদিন পর্যন্ত এদের জন্য দু’বেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে পারলে এরা বেঁচে যাবে। এর পর রয়েছে রিকশা, ট্রলি, ভেন ওয়ালা এদের দরিদ্রতার কথা সর্বজন বিদিত। তারপরও এরা শ্রম দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে যায় কিন্তু এ শীতে তাদের রিকশা, টলি, ভেন ভাড়া হচ্ছে কম। যেহেতু ঠান্ডায় মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেনা সেহেতু তাদের রোজী রোজগার কমে গেছে। এ ঠান্ডায় অনেক সময় তারা যে আয় করছে তা দিয়ে তাদের একবেলা খাবারের পয়সাও ওঠছেনা। অনেকেই আবার এ ঠান্ডায় তাদের যানবাহন নিয়ে বের হতে পারছেনা। ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে অনেকে বাড়িতে পড়ে আছে। এদের সাহায্য করা খুবই জরুরি। তারপর রয়েছে জেলে। প্রচন্ড ঠান্ডায় জেলেরা এসময় নদীতে জাল নিয়ে বের হতে পারেনা ফলে তাদের পরিবারেও দেখা দেয় অর্থকষ্ট। এসমস্ত শ্রমজীবী মানুষের খোঁজ নিয়ে তাদের সাহায্য করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব। তানাহলে এ শীতে এদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠবে। এসময় সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই এদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে দক্ষিণাঞ্চলের চেয়ে উত্তরাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত শীত মৌসুমে ঠাÐা অনুভূত হয় বেশি। অনেক সময় দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু জায়গায় ৮/৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা নেমে যায় ফলে ওই অঞ্চলের মানুষ চরমভাবে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে।
বিশেষ করে উক্ত অঞ্চলগুলোর দরিদ্র মানুষজন শীত মৌসুমে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম হতাশায় ভোগে। এসময় তারা বিভিন্ন সাহায্যের অপেক্ষায় থাকে। এসময় অবশ্য উত্তরাঞ্চলে যৎসামান্য সাহায্য যায় কিন্তু এসব দরিদ্র মানুষদের বাঁচতে শীত মৌসুমের জন্য একটি স্থায়ী কিছু ব্যবস্থা করা দরকার। শীতের সময় যাতে এরা নিজেরাই কিছু করে জীবন নির্বাহ করতে পারে সে ব্যবস্থা আগেভাগেই করে রাখতে হবে। বিশেষ করে দেশের শ্রমজীবী মানুষদের এক বিরাট অংশ এ শীত মৌসুমে বেশ কষ্টে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। তাদের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করে এ শীত মৌসুমে তাদের বাঁচতে হবে।
আমরা প্রত্যাশা করবো সরকার এবং বিভিন্ন বড়বড় কোম্পানি এবং সমাজের অর্থবিত্ত ওয়ালারা যদি এ হার কাপাঁনো শীতে এসমস্ত দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবীদের ওপর নজর দেয় তাহলে তারা এ শীতে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে কোনো মতে দিন যাপন করতে পারবে।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক