শিশুশ্রম জাতির জন্য অভিশাপ

2

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে শিশুশ্রম একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা এবং সামাজিক অসচেতনতার চক্রে আটকা পড়া শিশুরা তাদের শৈশব হারিয়ে ফেলে নিষ্ঠুর শ্রম বিনিময়ে। ‘শিশুদের সুরক্ষা জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তি’ খাতায় থাকলেও গোয়ালে নেই। শিশুদের বাঁচার, থাকার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকারের প্রতি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের এক চরম অবহেলায় বরং বার বার দৃশ্যমান হচ্ছে। বাংলাদেশে লাখ লাখ শিশু তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটাচ্ছে কঠিন শ্রমে। গৃহস্থালি কাজ থেকে শুরু করে নির্মাণশিল্প, ইটভাটা, কৃষি কিংবা কারখানায় শিশু শ্রমিকের উপস্থিতি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অভিভাবকদের দারিদ্র্য, শিক্ষার সুযোগের অভাব এবং অস্থির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শিশুদের শ্রমে ঠেলে দেয়। এছাড়া নির্যাতনের বিষয়টি বলার বেশি অবকাশ রাখে না। স¤প্রতি অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) আয়োজিত এক সংলাপে উঠে আসে শিশুশ্রমিকদের নির্যাতন বা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহতের ব্যাপারটি। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করায় এই শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুর মত ঝুঁকিতে পড়ছে- এমন অভিযোগও ছিল ওই সংলাপের বিষয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫-১৭ বছর বয়সী কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ৬৮ হাজার। এ পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে দেশে শিশুশ্রমিকের অবস্থা কতটা ভয়াবহ। যে বয়সে শিশুর স্কুলে যাওয়ার কথা, সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা, সে বয়সে এ দেশের বিরাটসংখ্যক শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হতে হচ্ছে। এর চেয়ে নির্মম সংবাদ আর কী হতে পারে?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫-১৭ বছর বয়সী কর্মজীবী শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ৬৮ হাজার। এ পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে দেশে শিশুশ্রমিকের অবস্থা কতটা ভয়াবহ। যে বয়সে শিশুর স্কুলে যাওয়ার কথা, সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা, সে বয়সে এ দেশের বিরাটসংখ্যক শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হতে হচ্ছে। এর চেয়ে নির্মম সংবাদ আর কী হতে পারে? বাংলাদেশের শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছর বয়সের কম বয়সী কোনো শিশুকে কোনো ধরনের কাজেই নিয়োগ করা যাবে না এবং ১৮ বছর বয়সের নিচের কোনো শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা যাবে না। আইন ভঙ্গে অভিভাবকদের জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান। কিন্তু শুধু আইন করে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে না। শিশুরা কেন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হতে বাধ্য হয়, তার আসল কারণ উদ্ঘাটন এবং সে সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা জরুরি। এ বিষয়ে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ কতটা গ্রহণ করা হয়েছে, সেটাও বিবেচনায় আনতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শিশুশ্রম কেবল একটি শিশু বা তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ডেকে আনে। শিশুশ্রমের ফলে শিশুরা তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হয়। কঠোর পরিশ্রম তাদের স্বাস্থ্য নষ্ট করে, শিক্ষার সুযোগ কেড়ে নেয় এবং তাদের জীবনের সম্ভাবনাগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। যেসব শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত, তারা প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগে। শিশু শ্রমের সামাজিক প্রভাবও গভীর। এটি দরিদ্রের চক্রকে আরও পোক্ত করে, কারণ শিশুশ্রম পরিবারগুলোর অবস্থা উন্নত করার পরিবর্তে তাদের শিক্ষার সুযোগ নষ্ট করে, যা ভবিষ্যতে উন্নতির পথ রুদ্ধ করে। তদুপরি, শিশুরা যখন ছোটবেলায় শ্রমে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা সহজেই অপরাধমূলক কার্যকলাপ বা শোষণের শিকার হতে পারে।
শিশুশ্রম বন্ধ করতে হলে সর্বাগ্রে দারিদ্র্যের লাগাম টানতে হবে। একটি দরিদ্র পরিবারে শিশুরা প্রায়শই বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। অভিভাবকরা তাদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কাজে পাঠিয়ে দেন। এ ছাড়া অশিক্ষা এবং সচেতনতার অভাব বড় ভূমিকা পালন করে। অনেক অভিভাবকই জানেন না যে, শিশুশ্রম তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য কতটা ক্ষতিকর। এছাড়া শিশুশ্রমের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে সমাজের প্রতিটি অংশের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। পরিবার, স্কুল, সরকার, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে। শিশুশ্রমমুক্ত একটি সমাজ গড়ার অর্থ হলো- একটি জাতির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা। শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের জন্য শিক্ষার সুযোগ, নিরাপদ শৈশব এবং স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব রাষ্ট্র,সমাজ ও পরিবারের। তবে রাষ্ট্রকে আগে শিশু শ্রম বন্ধে উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। দরিদ্রতা বিমোচন ও সামাজিক নিরপত্তায় শিশুদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।