শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর উদ্যোগ জরুরি

3

ছয় দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশব্যাপী সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কলেজের শিক্ষাথীরা এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে। রমজানের আগে তাদের আন্দোলন অনেকটা শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু তাদের দাবি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন ইতিবাচক ভূমিকা বা বক্তব্য না পেয়ে গত কয়েকদিন বেশ অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। তারা বুধবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধসহ জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করে। এ সময় চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সড়ক অবরোধের কারণে চট্টগ্রামের প্রধান সড়কগুলো একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। এসময় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে তুলে দিয়ে নিবৃত্ত করতে চাইলেও পারেনি। শুধু চট্টগ্রামে নয়, শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন মূলত পুরো দেশের প্রধান সড়কগুলো অবরুদ্ধ হয়ে উঠে। বিকাল নাগাদ তারা বৃহস্পতিবার আবারও রেল লাইন বøকেড কর্মসূচি ঘোষণা করলে সরকারের টনক নড়ে। এসময় শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে আগ্রহী হয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি শিথিল করে। কিন্তু সর্বশেষ বৃহস্পতিবার বৈঠক হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। জানা যায়, তারা উপদেষ্টা ছাড়া বৈঠকে বসতে না চাইলেও কর্মকর্তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বৈঠক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করে তা বাস্তবায়নের আহবান জানালে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপদেষ্ঠার কাছে তাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন । বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানায়, বৈঠকের সিদ্ধান্তে তারা সন্তুষ্ট নন। তারা আবারও কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জনা যায়, বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেলা ৩টার দিকে বেরিয়ে তারা এ ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আজ শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের বৈঠক করার জন্য ডেকে আনা হয়। কিন্তু একজন অতিরিক্ত সচিব বৈঠক করেছেন। আমাদের দাবি-দাওয়া লিখে নিয়ে সচিবের কাছে উপস্থাপন করবেন, তারপর উপদেষ্টার কাছে দেবেন। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের আন্দোলন বর্তমানে শিথিল আছে। কিন্তু আমরা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করবো। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে ‘রাতের আঁধারে’ নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে। ২. ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যে কোনও বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে। ৩. উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্তে¡ও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ৪. কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। ৫. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে। ৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো দিয়েছে এবং বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করছে, তার যৌক্তিকতা নিয়ে আলাচনা হতে পারে। সরকারকে সব দাবি একসাথে মেনে নিতে হবে-এমনটি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আশা করে কিনা তা আমাদের জানা নেই। তবে তাদের আন্দোলনের ফলে দেশের জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অফিস আদালত ও স্কুল কলেজে যাতায়াত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তদুপরি এখন চলছে এসএসসি পরীক্ষা, এসময় যেকোন আন্দোলন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের চরম দুর্ভোগে ফেলবে। সুতরাং কাল বিলম্ব না করে শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সমস্যার দ্রæত সমাধানপূর্বক তাদের শ্রেণি কক্ষে ফেরানোর উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে।