শিক্ষার্থীদের ক্ষতির দায় নিবে কে?

2

চলতি শিক্ষাবর্ষের তিন মাস অতিবাহিত হতে চলছে, রমজানের পর যেসব বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র নেই সেইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হবে শ্রেণিপাঠ কার্যক্রম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩০ ভাগ বিনা মূল্যে পাঠ্যবই পায়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরা করছে। কখন নাগাদ বাকি বইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছবে তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। আমরা লক্ষ করে আসছি, গত কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এরপরও গত বছর ফেব্রæয়ারি মার্চে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু এবার তারও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। অভিভাকরা আশা করেছিল, অতীতের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সমস্যা এড়াতে এ বছর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক কমিটি (এনসিটিবি) বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেবে, এটাই ছিল প্রত্যাশিত। বাস্তবে লক্ষ করা যাচ্ছে, এ বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রায় তিন মাস সময় পার হয়ে গেলেও বিনামূল্যের বই এখনো সব শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছেনি। এখনো প্রায় এক কোটি বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারেনি এনসিটিবি; এখনো ২০ লাখ বই ছাপানো বাকি রয়েছে; সবই মাধ্যমিক স্তরের। অভিযোগ উঠেছে, শেষের দিকে ছাপানো বইয়ের মান ঠিক রাখছে না বেশকটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। অভিভাবক ঐক্য ফোররামের পক্ষ থেকে পাঠ্যবই বিতরণে সংশ্লিষ্টদের খপয়ালিপনাকে দায়ি করে গণমাধ্যমে বলেন, আড়াই মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা এখনো সব বই পায়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।
অভিযোগ রয়েছে, এবার বই ছাপানোর কাগজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন ব্যবসায়ীরা। এ অভিযোগ আমলে নেননি এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তিনি বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু শেষ সময়ে এসে তিনিই বিদেশ থেকে কাগজ আমদানির উদ্যোগ নেন। এ কাগজ এসে পৌঁছায় ফেব্রæয়ারির শেষ দিকে। অথচ প্রথম থেকে উদ্যোগ নিলে এ সমস্যা অনেকটাই কেটে যেত। বস্তুত এনসিটিবির নানা অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও ধীরগতির কারণে বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন ভার্সন সংগ্রহ করা যাচ্ছে। তবে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা এ সুবিধা নিতে পারছে না। কাজেই যত দ্রæত সম্ভব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।
শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে মানসম্মত বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীরা যাতে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় আগ্রহী হয়, সে বিষয়েও তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অতীতে ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। কাজেই মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই প্রকাশে কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে যাতে কোনোরকম দুর্নীতি না হয়, তাও নিশ্চিত করা।