শিক্ষক জাতির কান্ডারি

6

মিতা পোদ্দার

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং শিক্ষক হচ্ছেন জাতি গঠনের মহান কারিগর। সম্রাট নেপোলিয়ান বলেছেন ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও আমি একটা শিক্ষিত জাতি দেব’। এই কথাটির সত্যতা ঠিক কতটুকু আমাদের এই বাংলাদেশে? যেখানে শিক্ষা নেই সেখানে শিক্ষকের মর্যাদা ও নেই। তবে কী আমাদের বাংলাদেশে শিক্ষা দিন দিন বিলুপ্তির পথে? জানি আমার কথা অনেকের খারাপ লাগবে। লাগাটা স্বাভাবিক। তবে এটাও ভাবুন আজ কেন শিক্ষা নিয়ে আমার এই কথোপকথন? ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরাও নিজেদের স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে জানি। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে স্বৈরাচারী সরকার পদত্যাগের মাধ্যমে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বিজয় নিয়ে আসলো। আমরাও শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের এই বিজয়কে মেনে নিলাম। দেশের উন্নয়নে শিক্ষার্থীরা নব ভূমিকা পালন করবে এটাই সকলের প্রত্যাশা। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম যখন আমার মা বাবা বলতো তাদের পরেই নাকি শিক্ষকের স্থান। মা বাবাকে যেমন কষ্ট দিলে আল্লাহ নারাজ হন ঠিক তেমনি শিক্ষকের মনে আঘাত দিলে সেই ছেলেমেয়ে কোন দিন মানুষ হতে পারেনা। এই কথার সম্পূর্ণটাই তো আজ উল্টো হয়ে যাচ্ছে। আমার, আমাদের দেশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই আছে শুধু সার্টিফিকেট তৈরির কারখানা। সুশিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা বা মানবিক শিক্ষার এই অভাব এখন প্রকট আকার ধারণ করছে। শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। শিক্ষক হলো তার সুনিপুণ কারিগর। শিক্ষা ছাড়া আলোকিত মানুষ সৃষ্টি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অথচ সেই শিক্ষকদের আজ বিভিন্ন কারণে পদত্যাগ করতে হচ্ছে। একজন শিক্ষক তাঁর নিজ হাত দিয়ে দিয়ে এই কোমলমতি শিশুদের মানুষ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই অপ্রত্যাশিত যা বলার মত নয়। স্বাধীন দেশের এ কেমন নমুনা?
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করিয়ে শিক্ষার্থীরা যেন পুরো বিশ্বটাকে জয় করে নিয়েছে। ধরাকে তারা এখন সরা জ্ঞান করছে। যেই শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর সেই শিক্ষকদের নিজের ইচ্ছেমত টেনে হিঁচড়ে চেয়ার থেকে নামানোর প্রচেষ্ঠা। কেন এই অসভ্যতা? শিক্ষক যদি অন্যায় বা জালিয়াতি করে তবে তা দেখার দায়িত্ব উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের। সেখানে শিক্ষার্থীদের এত দুঃসাহস হয় কী করে? এর পিছনে কারা ইন্ধন জোগাচ্ছে? একজন শিক্ষকের অপমান, সকল শিক্ষকের জন্য লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক। আমরা শিক্ষকসমাজ যদি একতাবদ্ধ না হই তাহলে এই বাংলাদেশে সঠিক শিক্ষা অর্জন কখনোই সম্ভব হবেনা। এরা কোমলমতি শিশু। যে যেমন বোঝাচ্ছে সেই জ্ঞান নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। ন্যায় অন্যায়বোধে এরা আজ অন্ধ। তাই আর দেরী নয়, সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় এবং শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়গণের কাছে আমার বিনীত নিবেদন এই অভিশাপের বোঝা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করুন। নতুনা দেশ উন্নতির পথে বরং ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। আমি পাশাপাশি শিক্ষক মহলের সকলের কাছে অনুরোধ করছি শিক্ষকদের নিয়ে এমন আচরণ যাতে শিক্ষার্থীরা আর করতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
লেখক: প্রাবন্ধিক