আইনজীবী ও রাজনীতিক। ১৯২৫ সালের ২৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় তাঁর জন্ম। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই শাহ আজিজুর রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৭ সালে তিনি অল বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তিনি কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। এ সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। আজিজুর রহমান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় কুষ্টিয়া থেকে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে পরাজিত হন। শাহ আজিজুর রহমান ১৯৬২ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টে যোগ দেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং অল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার নির্বাচনে কুষ্টিয়া এনই-৩৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালের জুন মাসে তিনি জাতীয় পরিষদে সম্মিলিত বিরোধী দলের (কপ) উপনেতা নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বিবাদী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান। অবশ্য ১৯৭০ সালে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যক্রমের জন্য তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। শাহ আজিজুর রহমান ১৯৭০ সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় লীগে যোগ দেন এবং দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭০ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। শাহ আজিজুর রহমান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সামরিক জান্তা কর্তৃক জাতিসংঘে প্রেরিত প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন শাহ আজিজ। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর তিনি দালাল আইনে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার ফলে ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি মুক্তি লাভ করেন। রাজনীতি দলবিধি ১৯৭৬-এর আওতায় আবদুস সবুর খানের নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে মুসলিম লীগ পুনরুজ্জীবিত হলে শাহ আজিজুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালের জুন মাসে আজিজুর রহমান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় শ্রম ও শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়া-৩ আসন থেকে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। শাহ আজিজুর রহমান ১৯৭৯ সালের ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদ নেতা নিযুক্ত হন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৮৫ সালের জুন মাসে বিএনপিতে ভাঙন দেখা দেয় এবং দ্বিধাবিভক্ত দলের এক অংশের চেয়ারম্যান হিসেবে নেতৃত্ব দেন শাহ আজিজুর রহমান। কিন্তু অচিরেই তিনি জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং ১৯৮৫ সালের ১৭ আগস্ট এরশাদ কর্তৃক গঠিত জাতীয় ফ্রন্টে যোগ দেন। তবে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি ফ্রন্ট থেকে সরে আসেন। শাহ আজিজুর রহমান ১৯৮৯ সালের আগস্ট মাসে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত বিএনপির মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসেন। একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান ও সুবক্তা শাহ আজিজুর রহমান বাংলা এবং ইংরেজি ছাড়াও উর্দু, ফার্সি ও আরবি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন । ১৯৮৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। সূত্র: বাংলঅপিডিয়া