‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় সুন্নিয়ত, সুফিবাদি দর্শনকে প্রসারিত করতে হবে’

1

‘সুন্নিয়তই ইসলামের শাশ^ত দর্শন ও মূলধারা। সুন্নিয়ত ও সুফিবাদই হচ্ছে ইসলামের নির্যাস ও চূড়ান্তভাবে নাজাতের পথ। দুনিয়াজুড়ে আজ নিরীহ মানবতার ওপর জঘন্য জুলুম ও অসহনীয় নিপীড়ন চলছে। দেশে দেশে এখনো রক্তারক্তি, সংঘাত ও কারবালার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। মজলুম মানবতার আহাজারি আর্তনাদে সমগ্র বিশ্ব আজ বাষ্পরুদ্ধ। ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতিদিনই ঝরছে নিরীহ নারী-শিশুদের প্রাণ। অথচ বিশ্ব বিবেক আজ নীরব। মজলুম মানুষকে রক্ষায় এই নীরবতা চোখ বুজে আর মেনে নেওয়া যায় না। বিশ^ব্যাপী শান্তি, সম্প্রীতি, গণঐক্য ও জননিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় মানববাদি সুন্নিয়ত ও সুফিবাদি দর্শনকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। সুন্নিয়ত ও সুফিবাদি দর্শনে প্রতিষ্ঠিত থাকা ছাড়া বিশ্ব মুসলমানরা কখনো নিষ্কৃতি পাবে না। উগ্রতা বা সহিংসতা নয়, মানুষকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসার মাধ্যমেই দুনিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনা আজ সময়ের দাবি’।
গতকাল বৃহস্পতিবার জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আহলে বায়তে রাসূল (দ.) স্মরণে ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিলের ৭ম দিনে উপস্থিত ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলোচকরা এসব কথা বলেন।
মাহ্ফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক এম এরশাদ উল্লাহ। তিনি বলেন, এদেশসহ পৃথিবীতে ইসলাম এসেছে ত্যাগের মাধ্যমে। নবী রাসূল আউলিয়ায়ে কেরাম ইসলাম প্রচার-প্রসারে জাগরণ ঘটিয়েছেন। অনেকেই হয়তো জানেন না এই জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আজ হতে ৪০ বছর আগে শহীদ জিয়া মাত্র এক টাকার বিনিময়ে এই মসজিদের জায়গার সংস্থান করেছেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আলহাজ্ব সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রিয়নবীর (দ) হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি ইমাম হাসান-হোসাইনকে ভালোবাসে সে যেন আমাকেই ভালোবাসে। যে তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করলো সে যেন আমার সঙ্গেই শত্রুতা করলো। ঈমানদার ছাড়া কেউ হযরত আলী (রা) কে ভালোবাসবে না। আর মুনাফিক ছাড়া কেউ তাঁর প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে না।
বিশেষ অতিথি আমির হোসেন সোহেল বলেন, আমরা এ অঞ্চলে নবী রাসূল পাইনি। ইসলাম পেয়েছি ওলী বুজুর্গের মাধ্যমে। ওলী বুজুর্গের দোয়া ও ওসিলায় অনেক অসাধ্য বিষয় সহজেই পূরণ হয়। এর বাস্তব দৃষ্টান্ত আমি অনুভব করেছি। আমার আব্বা সূফি মিজানুর রহমান সাহেব তো আমাদের জন্য পরশপাথর। তাঁর কর্ম জীবন দর্শন আমাদের প্রেরণা জোগায়। আহলে বায়তে রাসূলের (দ) প্রতি মহব্বত ও আনুগত্য যে কতটা জরুরি তা দেখিয়ে গেছেন আল্লামা জালাল উদ্দিন আলকাদেরী (রহ)। বর্তমানে এ মাহ্ফিলের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন সুফি মিজানুর রহমান।
মাহ্ফিলে মাকামে মাহমুদ ও আজমতে মোস্তফা (দ) বিষয়ে আলোচনার সময় ঢাকার মুহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়বিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন আলআজহারি বলেন, প্রিয় নবীর (দ) শান মর্যাদা অতুলনীয়। তাঁর মর্যাদা উচ্চকিত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক। হাশরের ময়দানে প্রিয় নবীর (দ) শান মর্যাদা শ্রেষ্ঠত্ব দেখা যাবে। প্রিয় নবী (দ) গুনাহ্গার উম্মতকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।
আ’লা হযরতের কবিতায় নবীপ্রেম বিষয়ে উরকিরচর মুহাম্মদিয়া গাউছিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ হাসান রেজা বলেন, আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খান (রহ) এর নবীপ্রেম ও ইশক মহব্বত সত্যিই অতুলনীয়। তাঁর রচিত কসিদা পড়ে ঈমানদার জনতা নবীপ্রেমে সিক্ত ও উজ্জীবিত হয়।

‘দেশে দেশে আহলে বায়তের চর্চা : প্রসঙ্গ কারবালা’ বিষয়ে বক্তব্যে আল্লামা আবদুল মুস্তফা আবদুর রহিম আজহারি বলেন, আজ দেশে দেশে আহলে বায়তের চর্চা হচ্ছে। তবে জমিয়তুল ফালাহ্’র এই শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিল সত্যিই ব্যতিক্রমী ও অনন্য। এ ধরনের মাহ্ফিল হবে আমাদের জন্য নাজাতের উসিলা।
মাহ্ফিলে ‘সঠিক আক্বিদা প্রচারে সুফি সাধকের ভূমিকা’ বিষয়ে আলোচনা করেন আল্লামা গোলাম রাব্বানি কাসেমী (ঢাকা)। এছাড়াও আলোচনা করেন গহিরা কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা মহিউদ্দিন তাহেরী, কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী মুহাম্মদ ওসমান সিদ্দিকি, নাতে রাসূল (দ) পরিবেশন করেন মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম।
মাহ্ফিলে পরিচালনা পর্ষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দিলশাদ আহমেদের নির্মিত বিগত মাহ্ফিলগুলোর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশন করা হয়। মাহ্ফিলে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন জামেয়া আহমদিয়ার শায়খুল হাদিস আল্লামা মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারী, দরবারে হাশেমীয়া আলিয়া শরীফের সাজ্জাদানশীন আল্লামা মুফতি ক্বাযী মুহাম্মদ আবুল এরফান হাশেমী, আহলা দরবারের শাহাজাদা সৈয়দ এমদাদুল ইসলাম, পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক আমির হোসেন সোহেল ও জহিরুল ইসলাম রিংকু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইদ্রিস মিয়া, এসএ গ্রæপের এমডি সাজ্জাদ আরেফিন আলম, সাবেক লায়ন্স জেলা গভর্নর লায়ন এস এম শামসুদ্দীন। ড. জাফর উল্লাহ ও হাফেজ মাওলানা আহমদুল হকের সঞ্চালনায় মাহ্ফিলে শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যগণের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান সমন্বয়ক ও পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, খোরশেদুর রহমান, মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ সাইফুদ্দীন, প্রফেসর কামাল উদ্দীন আহমদ, আব্দুল হাই মাসুম, জাফর আহমদ সওদাগর, মাইনুদ্দীন মিঠু, শফিক আহম্মদ, কায়েস ভ‚ইয়া, হাফেজ আহমদ রেজা, ফজলুর রহমান সাহেদসহ বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন, মতোয়াল্লী ও ইমামগণ। হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণির পরিবেশনায় সালাত সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়।