শান্তির দিকে হাত বাড়িয়ে রাখবো, যুদ্ধের প্রস্তুতিও থাকতে হবে : ড. ইউনূস

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শান্তির দিকে আমাদের হাত বাড়িয়ে রাখতে হবে সব সময়। কিন্তু যুদ্ধের প্রস্তুতিতেও থাকতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক এটা আমরাও কামনা করি না। গতকাল বুধবার তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বীর উত্তম এ কে খন্দকারে অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, যুদ্ধ প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। কাজেই যুদ্ধ প্রস্তুতি সম্পর্কেও একটা ঘোরতর আপত্তি। আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি, যেখানে যুদ্ধের হুমকি সব সময় ঘিরে রাখে। সেখানে প্রস্তুতি না নিয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমাদেরই কাছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে আছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব যে আজকেই (বুধবার) শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা বাস করি। কাজেই এই পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী এবং প্রস্তুতি নিতে হলে আধাআধি কোনও জায়গা নেই। খবর বাসস ও বাংলা ট্রিবিউনের।
তিনি বলেন, এটা এমন এক পরিস্থিতি, ‘জয়’-ই তার একমাত্র অপশন। এখানে পরাজয়ের সুযোগ থাকতে পারে না।কাজেই কত উচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতি নিতে পারি সেটার চেষ্টা আমাদের থাকতেই হবে। কিন্তু আজকাল যুদ্ধ একটা ব্যয়বহুল ব্যাপার। আর আমাদের অর্থনীতি দুর্বল অবস্থায় আছে। এমনিতেই বাংলাদেশ মজবুত অর্থনীতি হয়ে গড়ে উঠতে পারেনি। তার মধ্যে বিগত সরকারের যথেচ্ছাচারের কারণে যা ছিল তাও লুটপাট হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সামগ্রিক কৌশল ঠিক করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমান বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বিমান বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিমান বাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহবান জানাচ্ছি। আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।’
তিনি বলেন, বিমান বাহিনীতে ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, হেলিকপ্টার পরিবহন বিমান, রাডার সংযোজনের জন্য সরকার বিমান বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা স্বাধীনতা যুদ্ধে বিমান বাহিনীর অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। একইসাথে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের শহীদদের কথা স্মরণ করে বলেন, শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী এবং সাধারণ জনগণ যারা দেশের অধিকারের প্রশ্নে জীবন ও রক্ত দিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তাদেরকে স্মরণ করছি।
তিনি দেশের বিমান বন্দরসমূহের সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমান বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমান বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও পেশাগত উৎকর্ষরে জন্য মহড়ায় অংশগ্রহণকারীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আজকের এই অনুশীলন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আত্মবিশ্বাস, প্রস্তুতি এবং অর্পিত দায়িত্ববোধের বাস্তব রূপায়ণ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি জাতির আস্থা ও ভালবাসা অটুট থাকুক-এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এর আগে বিমান ঘাঁটিতে এসে পৌঁছালে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। অনুষ্ঠানস্থলে বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এসময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।