আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী একযোগে শুরু এসএসসি, দাখিল ও ভেকেশনাল পরীক্ষা ২০২৫। সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর আওতায় সারাদেশে ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা আয়োজন করতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। প্রশ্নপত্র ফাঁস, গুজব, নকল বা অসদুপায় অবলম্বনের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি নিয়েছে কমিটি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের রুটিন অনুযায়ী ১০ এপ্রিল শুরু হয়ে থিউরি পরীক্ষা চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। এরপর আরো প্রায় ১০ দিন চলবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। যথারীতি এবারও বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হবে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্রের ও সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র দিয়ে। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ থেকে ২২ মে পর্যন্ত। এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ এক হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। ২২৯১টি কেন্দ্রে ১৮ হাজার ৮৪টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেবে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন। এদিকে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিতে বসছেন এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। গতবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ২৪ জন। সেই হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৪ হাজার ৯৭ জন।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এবারের এসএসসিতে মাধ্যমিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক হাজার ১৬৪টি বিদ্যালয়ের এক লাখ ৪০ হাজার ৯২৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিবেন। চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, এবার মানবিক বিভাগ থেকে ৪৭ হাজার ৯০৩ জন, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৩৫ হাজার ৫৫৮ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৫৭ হাজার ৪৬৬ জন পরীক্ষার্থী এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮০ জন, অনিয়মিত ২২ হাজার ৭৩৪ জন এবং মানোন্নয়ন ১১৩ জন শিক্ষার্থী। এছাড়াও মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র রয়েছে ৬১ হাজার ৭৬৫ জন, ছাত্রী রয়েছে ৭৯ হাজার ১৬২ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এবারের পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রেরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে শুরু করে যেকোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা মোকাবেলায় বোর্ড প্রস্তুত। জানা যায়, আন্তঃবোর্ড এর সভায় এবার প্রশ্ন ফাঁসের গুজব নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর নানা বিষয়ে যেভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, তার আচড় যেন এসএসসি পরীক্ষায় না পড়ে সেই দিকে বিশেষ নজর দেয়ার হবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষার নিরাপত্তা, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ ও সব ধরনের অনিয়ম রোধে সতর্ক অবস্থানে আছি আমরা। ইতোমধ্যেই পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ভিজিলেন্স টিম কাজ করবে। গত আগস্ট মাসে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটিই প্রথম কোন পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছে এ পরীক্ষা চ্যালেঞ্জ এবং রোমাঞ্চকর দুটোই। এবারের পরীক্ষায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, যেমন যে প্রজন্মটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে, তাদের একটি গণ আন্দোলনের মধ্যেই প্রি টেস্ট দিতে হয়েছিল। আর যখন নির্বাচনী পরীক্ষা দিচ্ছিল তখন দেশের সামগ্রিক পরিবেশ অনুকূল ছিল না। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরীক্ষা পদ্ধতিরও পরিবর্তন করেছে। মূল্যায়নের আধিক্য থেকে রচনামূলক পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে, অবশ্যই এটি অভিভাবকদের দাবি ছিল। সংগতকারণে সিলেবাস পরিবর্তন হয়েছে বেশকিছু। সব মিলিয়ে পরীক্ষার্থীরা আজ তাদের জীবন পরিবর্তনের এক একাডেমিক সাধনায় বসছে । তাদের এ সাধনা, আরাধ্য বা প্রচেষ্টা সফল হোক। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হোক এসএসসি পরীক্ষা। সকল পরীক্ষার্থীর জন্য শুভ কামনা।