যারা নিজের জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ অংশ নিয়েছেন এবং সম্মুখ যুদ্ধে শাহদাত বরণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে শহীদ ক্যাপ্টেন আবদুস সবুর খান অন্যতম। তিনি পটিয়া থানার (বর্তমান চন্দনাইশ উপজেলার) বরমার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫০ সালের ২ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মরহুম আলী হোসেন খানের ৬ সন্তানের মধ্যে পঞ্চম। তাঁর মাতার নাম মরহুমা রমিজা খানম। ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বরমা ত্রাহি মেনকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে তিনি (আবদুস সবুর খান) কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ঐ বছরই চট্টগ্রাম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন। চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৬৮ সালে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটি কোহাটে তাঁর প্রথম কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে করাচীর গ্রিট রুডস্থ বিমানবাহিনীর ছাউনীতে যোগদান করেন। সেখানে কর্মরত থাকাকালীন বাঙ্গালী সৈন্যদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করেছিলেন। ১৯৬৯ এর গণআন্দোলন, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন, পরবর্তী বিমান বাহিনীতে কর্মরত বাঙ্গালী সৈন্যদের সংগোপনে তিনি সংগঠিত করেন। জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশমাতৃকার টানে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় তাঁর বড় ভাই বরমা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এডভোকেট আবদুল গফুর খানের পরামর্শে বিমান বাহিনী থেকে ছুটি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে চট্টগ্রামে চলে আসেন। চট্টগ্রামে আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ভারতের হরিনা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণে যান। প্রশিক্ষণ শেষে এফএফ-৩৩ গ্রæপে যোগ দেন। পরবর্তীতে এফএফ-৩৩ ও ৩৪ এর সমন্বয়ে অপারেশন টিমের চীফ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বৃহত্তর পটিয়া (চন্দনাইশসহ), আনোয়ারা, বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় সফলভাবে অপারেশন পরিচালনা করেন। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন পটিয়া থানার বর্তমান চন্দনাইশের বশরতনগরস্থ রাজাকার, আলবদর, আল শামস-এর ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনা করেন। ওখানে সম্মুখযুদ্ধে রাজাকারদের একটি বুলেট তাঁর কপালে আঘাত হানে। সেখানে আবদুস সবুর খান শহীদ হন। পরদিন ৩০ নভেম্বর সকালে রাজাকার বাহিনীর লোকজন শহীদ আবদুস সবুরের লাশ শঙ্খনদীতে ফেলে দেয়। তিনদিন পর ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সকালে শহীদ আবদুস সবুবের লাশ ভাসমান অবস্থায় চর বরমার শঙ্খনদীতে পাওয়া যায়। একই দিন বিকালে নিজ গ্রামের ঊষা পুকুরের পাড়ে শহীদ সবুরের লাশ দাফন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি পান। তিনি অবিবাহিত অবস্থায় শাহাদাত বরণ করেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান চন্দনাইশের গৌরব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সবুর খান তাঁর জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। তিনি রাজনীতির প্রেরণা ও সমাজের আদর্শ হয়ে থাকবেন চিরকাল। তাদের ত্যাগের ঋণ শোধ হবার নয়। শাহাদাত বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
লেখক : সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল- ছড়াকার ও সাংবাদিক