শহর ছাড়ছে মানুষ ফাঁকা হচ্ছে নগরী

2

মনিরুল ইসলাম মুন্না

আগামী শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। আজ থেকে শুরু হয়েছে সরকারি ছুটি। ছুটিতে পরিবারের সাথে ঈদ করতে গ্রামের পানে ছুটছে মানুষ। যে যেভাবে পারছে, সেভাবেই যাওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ বাস, কেউ ট্রাক আবার কেউ ট্রেনের মাধ্যমে বাড়ির পানে ছুটে যান। এতে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে নগরী। গতকাল বুধবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন অবস্থা দেখা গেছে।
সকালের দিকে হালকা বৃষ্টির চাপ থাকলেও কাউন্টার ও স্টেশনগুলোতে গন্তব্যে যাওয়া মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। দুপুরের দিকে দেখা যায়, ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় তীব্র গরম উপেক্ষা করে বাস-ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে মানুষ ছুটে যাচ্ছেন আপন গন্তব্যে। অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদুল আযহা উদযাপন করতে স্বজনদের সঙ্গে বাড়িতে স্বস্তিতে ঈদ করার আনন্দে ছুটছেন সবাই। পরিবার পরিজনের সাথে ঈদ করার জন্য প্রতিবারই বাস ও ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার পথে নানা ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অনেক ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠে গেলে জিআরপি পুলিশ এবং আরএনবির সদস্যরা যাত্রীদের ট্রেনের ছাদ থেকে নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
ট্রেনের অগ্রিম টিকিট যারা কেটেছেন তারা এবং যারা স্ট্যান্ডিং টিকিট পেয়েছেন তাদের ভ্রমণ কিছুটা আনন্দদায়ক হলেও বাসের যাত্রীদের ভোগান্তি ছিল বেশি। কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, কদমতলী বাস টার্মিনাল, স্টেশন রোড বিআরটিসি বাসস্টেশন রোড, গরিবুল্লাহ শাহ মাজার গেট, অলংকার মোড়, একে খান ও সিটি গেট এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল। কাউন্টারগুলোতে দেখা গেছে, যারা আগে টিকিট পাননি, তারা টিকিটের জন্য এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছেন। যাত্রীরা কাউন্টারে গিয়ে যে রুটের টিকিট চাচ্ছেন, তা মিলছে না। যেসব কাউন্টারে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে নির্দিষ্ট দামের চেয়ে ৩ থেকে ৪শ টাকা, অনেক ক্ষেত্রে ৫-৬শ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবে বিআরটিএ’র মনিটরিং টিম বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে অতিরিক্ত আদায় করা টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তবুও দুর্ভোগ মাড়িয়ে সবাই ফিরছেন গ্রামে।
একইসাথে বিআরটিএ ও সিএমপির পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী পরিবহন না করতে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চালক-মালিকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাত্রী পরিবহন করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ জানায়, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও সড়কে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করে যানজট তৈরি করে স্বাভাবিক যাত্রায় বিঘœ ঘটানো যাবে না। এ লক্ষ্যে কাউন্টার ভিত্তিক নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে। শহরে প্রবেশকারী পশুবাহী গাড়ির নির্বিঘœ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ফিটনেসবিহীন ও জরাজীর্ণ-ভাঙাচোরা গাড়ি রাস্তায় নামানো থেকে বিরত থাকতে হবে। জনসাধারণকে ভোগান্তি রোধে অস্থায়ী বা মৌসুমী বাস কাউন্টার করা যাবে না। এক সারিতে একটি কাউন্টারে একটা গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও ছাদে যাত্রী নেয়া ও যাত্রীর লাগেজ নিয়ে টানাটানি করা যাবে না। অতিরিক্ত ভাড়ার আশায় যাতে এক রুটের গাড়ি অন্য রুটে চলাচল করতে না পারে এবং শহর এলাকার গাড়ি যাতে বাইরে রিজার্ভ ভাড়ায় যেতে না পারে সে ব্যাপারে নজরদারী বাড়ানো হবে।
সরেজমিন নগরীর অলংকার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গাড়ির অপেক্ষায় শত শত বাস যাত্রী রাস্তার পাশে অপেক্ষা করছেন। একটা বাস আসলে তড়িঘড়ি করে উঠার চেষ্টা করছেন। ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার নিষ্কৃতি চাকমা প্রতিটি মোড় এবং কাউন্টার পরিদর্শন করে দেখছেন, যাতে কোনো ধরনের হয়রানি বা যাত্রী সাধারণের কষ্ট হচ্ছে কি না। দূরপাল্লার যাত্রীরা যাতে ভোগান্তি ছাড়া গমন করতে পারেন, সেজন্য ট্রাফিক সদস্যদের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
নোয়াখালীগামী যাত্রী সাইফুল হোসেন বলেন, কষ্ট হলেও বাড়ি চলে যেতে হবে। ঈদে বাড়িতে যেতে পারছি বলে মনের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ কাজ করছে।
অলংকার এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) ছামিউর রহমান খান বলেন, সকাল থেকে যানজট এড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। একটা বাসের কারণে যাতে যানজট তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। পাশাপাশি ঘরমূখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা তৎপর রয়েছি। যাত্রীদের যাতে ভোগান্তি না হয়, সেদিকে নজর রয়েছে। কোনো যাত্রী অভিযোগ দেয়ার সাথে সাথে আমাদের সদস্যরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
আন্তঃজিলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের সকল বাস নিয়মিত ছেড়ে যাচ্ছে। কিছু গাড়ি যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় খালি আসতে হচ্ছে। এরপরও আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, যাতে কোনো ধরনের যাত্রী হয়রানি না হয়।