শহরে মাঠ নেই পার্ক নেই-শিশুরা আসক্ত হচ্ছে ‘রঙিন দুনিয়ায়’

6

আবু মোশাররফ রাসেল

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরÑচট্টগ্রামে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আবাসনের চাপ বাড়ছেই। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে শহরে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন আর অত্যাধুনিক শপিংমল। উঁচু উঁচু ভবন আর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উল্লম্ফনের কাছে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে অলিগলির খোলা জায়গা কিংবা পাড়া মহল্লার খেলার মাঠ। শহরে বাসার কাছের যে জায়গাটিতে বিকালের আলোয় শিশুরা খেলাধুলায় মেতে উঠতো সেগুলো পরিণত হয়েছে আবাসিক ভবন, গাড়ির গ্যারেজ কিংবা দোকানপাটে। ইট-পাথরের খাঁচায় পরিণত হওয়া মহল্লাতে শিশুদের মুক্তভাবে ঘোরাফেরা কিংবা হাসিখুশি খেলাধুলার কোনো সুযোগ নেই। অথচ খেলাধুলায় মেতে উঠা শিশুদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। শিশুরা খেলতে চায়, আনন্দে মেতে উঠতে চায়-সেই চাহিদাকে পুঁজি করে এখন শহরের অভিজাত শপিংমলগুলোয় জন্ম নিয়েছে ঝলমলে আলোয় মোড়ানো ‘ইনডোর গেমস জোন।’
কর্পোরেট বাণিজ্যের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা হওয়া এই গেমস জোনগুলো বাস্তব অর্থে স্বাভাবিক খেলাধুলার কোনো জায়গা নয় বরং এক ধরনের ‘বাণিজ্যিক ফাঁদ’; যেখানে শিশুদের উচ্ছ্বলতা প্রকাশের জন্য গুণতে হয় মোটা অংকের টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে দীর্ঘদিন ধরেই খেলাধুলার জায়গার সংকট। শহরের সাধারণ পরিবারের শিশুদের মুক্তবিনোদনের জন্য কোনো খেলার মাঠ কিংবা নিরাপদ পার্ক নেই। প্রায় ৬০ লাখ বাসিন্দার এই শহরে হাতেগোনা যে কয়েকটি খেলার মাঠ ও পার্ক অবশিষ্ট ছিল সেগুলোও গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শিশুদের বিনোদন কিংবা বেড়ানোর জায়গা নিয়ে অনেকটা ‘অসহায়’ অবস্থায় পড়েছেন অভিভাবকরা। সেই সুযোগ লুফে নিচ্ছে ‘কর্পোরেট বাণিজ্য’। শিশুদের জন্য তারা তৈরি করেছে ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ড নামের ঝলমলে আলোয় দামি বিনোদনের এক ‘রঙিন দুনিয়া’। অনেক অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে শিশুদের সেখানে নিয়ে যাচ্ছেন। শিশুরা এই রঙিন জগতকেই বিনোদনের একমাত্র অনুষঙ্গ হিসেবে ধরে নিয়ে তাতে অনেকটা আসক্ত হয়ে পড়ছে। অভিভাবকদের অনেকে বলছেন, শিশুরা ইনডোর গেমস জোনে যাওয়ার জন্য রীতিমতো পীড়াপীড়িও করে। এতে ইনডোর পার্কগুলোর উত্থান ঘটছে দ্রুত। তবে এ বিনোদন সবার জন্য নয়; খরচের কারণে এটি হয়ে উঠেছে মূলত উচ্চবিত্ত ও স্বচ্ছল পরিবারের শিশুদের ‘অধিকার’।
শহরের এই নতুন বাস্তবতাকে ‘উদ্বেগজনক’ বলছেন সমাজবিজ্ঞানী ও শিশু গবেষকরা। তারা বলছেন, প্রতিনিয়ত টাকার বিনিময়ে আনন্দ পাওয়া শিশুকে ‘ভোগবাদী মানসিকতা’য় অভ্যস্ত করছে।
নগরীতে খেলাধুলার জায়গার অভাব এবং কর্পোরেট বিনোদনের উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনও। তিনি বলেছেন, তাঁর স্বপ্ন হলো এই শহরকে শিশুদের জন্য বিনোদনবান্ধব, নাগরিক সেবাবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য তিনি নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে খেলার মাঠ তৈরি করবেন।
নগর পরিকল্পনাবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সত্যিকার অর্থে কোনোকালেই প্রয়োজন অনুযায়ী খেলার মাঠ ও শিশুপার্ক ছিল না। তবে ২০ বছর আগেও শহরের পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে অনেক খোলা জায়গা ছিল, আশপাশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠও ছিল। বিভিন্ন এলাকার শিশু-কিশোররা সেই খালি জায়গা কিংবা স্কুলের মাঠে খেলাধুলায় মেতে থাকতো। ক্রমান্বয়ে সেই সুযোগ সংকুচিত হতে হতে কয়েকটি সরকারি সেবাসংস্থার অধীন বা পরিচালনায় হাতেগোনা কিছু পার্কই ছিল শিশু-কিশোর কিংবা তরুণদের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। বহদ্দারহাটের স্বাধীনতা কমপ্লেক্স, পাঁচলাইশের জাতিসংঘ পার্ক, ষোলশহর দুই নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যান, কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক (এখন নেই), আগ্রাবাদের জাম্বুরি মাঠ ও শিশুপার্ক, সিআরবি এলাকা, আউটার স্টেডিয়াম এবং ফয়’স লেক-মোটামুটি এগুলোই নগরীর বিনোদন কেন্দ্র। এগুলোর কোনোটিও আবার সাধারণ পরিবারের শিশুদের যাতায়াতের উপযোগী নয়। এর মধ্যে ফয়’স লেক-একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় থাকায় উচ্চমূল্যের কারণে সেখানে উচ্চবিত্ত ছাড়া অন্যদের প্রবেশের সুযোগ নেই। ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয় কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক। নন্দনকানন এলাকার ডিসি হিল কিছুটা বিনোদনের স্পট ছিল, তবে সেটিও নিরাপত্তার অজুহাতে সাধারণের জন্য বন্ধ কয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। নগরীতে ‘সবার জন্য উন্মুক্ত’ স্থান বলতে বিপ্লব উদ্যান, জাম্বুরি পার্ক, সিআরবি, লালদীঘি পার্ক আর আউটার স্টেডিয়ামই ভরসা। এরই মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরির্তনের প্রেক্ষাপটে বন্ধ হয়ে যায় শিশুদের বিনোদনের দুটি পার্কÑস্বাধীনতা কমপ্লেক্স ও আগ্রাবাদ শিশুপার্ক। এই অবস্থায় নগরীর শিশুদের বেড়ানোর কোনো স্থান সত্যিকার অর্থে ‘নেই’ হয়ে গেছে, শিশুদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এই ঘাটতির সুযোগ নিয়েছে কর্পোরেট ব্যবসা। নগরীর অভিজাত মলে তৈরি করা হয়েছে ‘প্লে-জোন’। সেখানে শিশুরা ট্রাম্পোলিনে লাফ দিতে পারে, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি রাইডে মহাকাশ ভ্রমণ করতে পারে কিংবা বাম্পার কারে ধাক্কাধাক্কি খেলতে পারে। তবে এ বিনোদনের দরজা খোলে কেবল টাকার বিনিময়ে। ইনডোর শিশু পার্কগুলো মূলত আমদানিকৃত প্রযুক্তিনির্ভর। নামের দিক থেকে এগুলো অনেকটা আন্তর্জাতিক এমিউজমেন্ট পার্কের অনুকরণ। চট্টগ্রাম শহরে বর্তমানে তিন নামের ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ড প্রতিদিন জমজমাট-বু বু ওয়ার্ল্ড, বাবুল্যান্ড এবং কিডস ল্যান্ড।
ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডগুলোতে শিশুদের আনন্দের জন্য উচ্চমূল্য দিতে হয় অভিভাবকদের। সেখানে প্রবেশের জন্য শিশু এবং তার অভিভাবক সবার জন্য আলাদাভাবে টিকেট নিতে হয়। সেই টিকেটের হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু রাইডসে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খেলাধুলা করার সুযোগ পায় শিশু। হিসাবটি এ রকম-সেখানে ২০/৩০টি রাইডস থাকলে তার মধ্যে ১০টিতে প্রবেশ টিকেটের হিসেবে খেলার সুযোগ থাকে, বাকিগুলোতে যেতে হলে সেখানে আবারও টিকেট নিতে হয়; তাও অনেক উচ্চমূল্যে। টিকেট ছাড়াও শিশুর জন্য আলাদাভাবে মোজা কিনে নিতে হয়, মোজা ছাড়া রাইডসে চড়ার সুযোগ নেই।
নগরীর জামালখান, চকবাজার ও বহদ্দারহাট এলাকায় অবস্থিত ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই শিশু বিনোদন কেন্দ্রগুলো সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। সেখানে অভিভাবকরা বিভিন্ন সময়ে শিশুদের নিয়ে ভিড় করছেন। বিশেষ করে সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে খুব জমজমাট হয়ে উঠে। সেখানে শিশু ও অভিভাবকদের আগমনের কারণে সড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়।
নগরীর বহদ্দারহাটের এলিজি স্কাইপার্কে অবস্থিত প্লে-গ্রাউন্ডে সাংবাদিক পরিচয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করা হলে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি, টিকেট কেটে প্রবেশের জন্য বলা হয়। সেখানকার খরচের তথ্যটি এ রকম-
‘প্রবেশ টিকেটের মূল্য (সকল শাখার জন্য): বাচ্চাদের ৪০০ টাকা (ভ্যাট প্রযোজ্য) উচ্চতা ৪.৩ ফুট (১৩০ সেমি), শিশুদের ১৫০ টাকা (ভ্যাট প্রযোজ্য) (বয়স ৬ থেকে ১১ মাস), অভিভাবক ১৫০ টাকা (ভ্যাট প্রযোজ্য) (প্রত্যেক অভিভাবক)। প্রবেশ টিকিটের মাধ্যমে সকল রাইড ২ ঘন্টা প্লে-গ্রাউন্ডের ভেতরে বিনামূল্যে খেলার সুযোগ। শুধুমাত্র ভিআর মুভি আরকেড গেমস এবং ম্যাসেজ চেয়ার ছাড়া; ভিআর এবং ম্যাসেজ চেয়ার প্রতিটির জন্য টিকিট মূল্য ১৬০ টাকা। ২ ঘণ্টার পরে প্রত্যেক অতিরিক্ত ঘণ্টার জন্য প্রতি বাচ্চা/অভিভাবকের জন্য ১০০ টাকা (ভ্যাটসহ) করে প্রদান করতে হবে।’ নির্দেশনায় বলা হয়-‘অনুগ্রহ করে আপনাদের (বাচ্চা/অভিভাবক) নিজস্ব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পায়ের মোজা সাথে আনুন অথবা আমাদের কাউন্টার থেকে ৬০ টাকা (ভ্যাট প্রযোজ্য) করে জোড়া কিনতে পারেন।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশু সন্তানকে নিয়ে কোনো প্লে-গ্রাউন্ডে গেলে অভিভাবককে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। এই খরচ মেটানো উচ্চবিত্ত পরিবার ছাড়া অন্যদের পক্ষে সম্ভব নয়।
নগরীর জামালখান এলাকায় দুই শিশুকে নিয়ে আসা মো. রিয়াজউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শহরে শিশুদের যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। তারা খেলাধুলা করবে কোথায়? সপ্তাহে এক-দুইবার এখানে নিয়ে আসি। খরচ নিয়ে ভাবি না।’
আরেক অভিভাবক সাবিহা রহমান বলেন, ‘মেয়ের আনন্দটাই মুখ্য। খরচ কিছুটা বেশি হলেও আমি মনে করি ওর মানসিক বিকাশে উপকার হচ্ছে। বাইরে খেলার মাঠ নেই, তাই এটিই আমাদের ভরসা।’
চকবাজার এলাকায় ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডে শিশু নিয়ে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘মেয়ের জোরাজুরিতে এখানে আসতে হয়। প্রতিবার আসলে কমপক্ষে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে এই খরচ করা সম্ভব নয়, সংসারের বাজেট মেলাতে কষ্ট হয়। তাই মাসে একবারের বেশি আনা সম্ভব হয় না।’
শিশু-কিশোরদের আচরণ সম্পর্কিত গবেষক, শিক্ষাবিদ ড. শামসুদ্দীন শিশির পূর্বদেশকে বলেন, ‘শিশুদের আনন্দ ও সৃজনশীলতার বিকাশের জন্য খেলাধুলা জরুরি। কিন্তু খেলার স্থান যখন অর্থের বিনিময়ে নির্ধারিত হয়, তখন সমাজে অভিজাত ও সাধারণের মধ্যে ব্যবধান আরও স্পষ্ট হয়। খেলাধুলা তো সকল শিশুর অধিকার। কিন্তু ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডে খেলার সুযোগ পায় কেবল উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরা। অভিভাবকরা চোখের সামনে টাকা দিয়ে টিকেট কেটে শিশুদের যখন আনন্দের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তখন সেই শিশুটি অবচেতন মনে ভাবছে-টাকার বিনিময়ে বিনোদনটিই আসল। কে বেশি খরচ করতে পারছে, সেই অনুযায়ী শিশুর আনন্দ নির্ধারিত হচ্ছে। এভাবে প্রতিনিয়ত টাকার বিনিময়ে আনন্দ পাওয়া শিশুকে ‘ভোগবাদী মানসিকতা’য় অভ্যস্ত করছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞানী ড. শারমিন হক পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের শহরগুলোতে খেলার মাঠের বড়ই অভাব, নিরাপত্তারও অভাব। এ অবস্থায় শিশুদের নিয়ে বেকায়দায় আছে অভিভাবকরা। সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রের আগামী প্রজন্মের। খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিশুরা নিজেদের স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। খেলার মাঠের অভাবে শিশুরা বাণিজ্যিক ‘প্লে-জোন’-এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এটি শুধু বিনোদনের বিষয় নয়, সামাজিক বৈষম্যেরও প্রতিফলন। খেলাধুলার সংস্কৃতি বাজারমুখী হয়ে যাচ্ছে। এতে শিশুরা শিখছে-আনন্দ মানে টাকা খরচ করা। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের রাইডের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুর দৃষ্টিশক্তি ও মনোযোগে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রকৃতির সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হওয়া শিশুর সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ঘাটতি তৈরি করে। তাই শিশুদের জন্য উন্মুক্ত মাঠ, পার্ক তৈরি করা জরুরি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীতে শিশুদের খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত খালি-জায়গা, খেলার মাঠ বা পার্ক নেই-এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই। অতীতে যারা নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন তারা এটা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেননি, ফলে ধীরে ধীরে সবকিছুই সংকুচিত হয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিশুদের বিনোদনের জগতে কর্পোরেট বাণিজ্য ঢুকে পড়েছে। এটা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক বিষয়। আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে এটা বলতে পারি যে, ইনডোর স্পোর্টস বা ইনডোরে খেলাধুলা কখনোই শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক-সহায়ক নয়; সেখানে হয়তো শিশুরা কিছুটা আনন্দ পাচ্ছে কিন্তু মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য অবশ্যই প্রাকৃতিক পরিবেশ দরকার।’
মেয়র শাহাদাত হোসেন আর বলেন, ‘শহরের খেলাধুলার জায়গার অভাবটি আমি অনেক আগে থেকেই অনুভব করি, আমার নিজের তাড়না ছিল; সুযোগ পেলে শহরটিকে জনবান্ধব নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার। আল্লাহর রহমতে সেই সুযোগ পেয়েছি, গত প্রায় এক বছর দায়িত্ব পালন করেছি। আমি দায়িত্ব নিয়েই এই লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১১টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ধাপে ধাপে ৪১টি ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ তৈরি করা হবে। আমরা নগরীর বিভিন্ন স্কুলের মাঠগুলোও সংস্কার করছি। হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের মাঠ সংস্কার করা হচ্ছে, আর বেশ কয়েকটি স্কুলের মাঠ সংস্কারের কাজ চলছে। সেগুলোতে সব ধরনের শিশু-কিশোররা খেলাধুলার সুযোগ পাবে। শিশুদের প্রাকৃতিক পরিবেশে খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে পারলে, কর্পোরেট বাণিজ্য অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাবে।’