মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া
স্বামী সন্জীব সুশীল ডিপ্লোমা কৃষিবিদ। স্ত্রী শিক্ষিকা নিবেদিতা শর্মা চাকুরির পাশাপাশি সংসার সামলাচ্ছেন। স্বামীর গড়ে তোলা শখের ছাদ বাগানেও সঙ্গী স্ত্রী।
এই দম্পতির ছাদ বাগানের সফলতা দেখতে অনেকেই ছুটে আসছেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন পুরো বাগান। এটি দেখে অনেকে ছাদ বাগান শুরু করেছেন। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দবাড়ি এলাকার এই দম্পতির গড়ে তোলা ছাদ বাগানের কথাই বলা হচ্ছে এখানে।
সরেজমিনে সন্জীব সুশীলের পাকা ভবনের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, বাহারি ফলন পুরো ছাদজুড়ে। বারোমাসি ফলের পাশাপাশি রয়েছে মৌসুমী ফল ও সবজি।
সারি সারি আম গাছ- সব গাছেই ফলন এসেছে। ফলনে টইটম্বুর সন্জীব এর বাড়ির ছাদ; মনে হচ্ছে যেন এক টুকরো সবুজ উদ্যান।
কথা হয় কৃষিবিদ সন্জীব সুশীলের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রথমে শখের বশে বাগান শুরু করি। পরে চিন্তা করি পরিবারে প্রতিদিন ভাতের সঙ্গে তো সবজি প্রয়োজন। অধিকাংশ কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে সবজি ফলিয়ে বাজারজাত করছে, তাতে অতিমাত্রায় বিষ ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। বিষমুক্ত সবজির জোগান মেটাতে ও ছাদের সৌন্দর্য্যবর্ধনে মূলত আমি ছাদ বাগান শুরু করি। বাগানে নানা জাতের আমের মধ্যে রয়েছে ব্যানানা ম্যাঙ্গো, আম্রপালি হাঁড়িভাঙ্গা, সূর্য ডিম, কাটিমন, ক্ষীরসাপাত ব্ল্যাকস্টোন। এছাড়া অন্যান্য ফলের মধ্যে রয়েছে আপেলকুল, বাউকুল, থাই পেয়ারা, আমড়া, থাই আমড়া, মিষ্টি কামরাঙ্গা, আমলকি, সীডলেস, লেবু, কলম্বো লেবু, এভোকাডো ফল, থাই সফেদা। রয়েছে নানা রকম ফুল গাছ।
এই দম্পত্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৩ বছর আগে থেকে ছাদ বাগান শুরু করেন তারা। শুধু বাড়ির ছাদেই নয়, বাড়ির আশেপাশেও রয়েছে গাছ। ছাদে রয়েছে কবুতর খামার। শ’খানেক কবুতর বিচরণ করে বাড়ির আশে-পাশে। বাগানের ছায়ায় রয়েছে কিড্স কর্ণার। পড়ন্ত বিকেলে শিশুরা এখানে খেলাধুলা করে।
সন্জীব সুশীল বলেন, ফাঁকা তপ্ত ছাদকে শীতল করতে এবং পরিবেশকে সহনীয় করতেই সবুজ বাগান করা। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেশি থাকে। সেই সময় পুরো বাড়ি গরম হয়ে ওঠে। এজন্য বাগান করা। এছাড়া প্রকৃতির প্রেমে শখের বসেই তো মূলত বাগানটি শুরু। বাগানে স্ত্রী ছাড়াও বাবা, ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা সহায়তা করেন।
বাড়ির ছাদে টব এবং ড্রামে পরম যত্নে বেড়ে উঠছে গাছগুলো। চাকরি শেষে যেটুকু সময় পান তার অধিকাংশ সময় তারা এ বাগানেই সময় দেন। কোনো ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে নিজেরা জৈব সার তৈরি করে তা ব্যবহার করেন।
তারা জানান, প্লাস্টিকের ড্রাম ও টবে চারা লাগানো হয়। এতে ভবনের কোনো ধরনের ক্ষতি হচ্ছে না। তবে খালি ছাদে দীর্ঘমেয়াদি মাটি ব্যবহার করে কিংবা সহায়ক কিছু না দিয়ে ড্রাম কিংবা টব বসালে ছাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন যারা ছাদে বাগান করতে চান তাদের কাছে সতর্কতামূলক এ বার্তা দিয়েছেন সন্জীব।
তার স্ত্রী নিবেদিতা শর্মা বলেন, ‘বাগান থেকে কোনো কিছু বিক্রি করা হয় না। পরিবারের জন্য ভেজালমুক্ত ফল ও শাক-সবজির জোগান ও চাহিদা মেটানোর পর আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও দিতে পারি’।
যাদের বাড়ির ছাদ খালি রয়েছে, তাদের উদ্দেশ্যে সন্জীব সুশীল বলেন, যাদের ভবনের ছাদ খালি রয়েছে, তারা যেন এভাবে সবুজ বাগান গড়ে তোলেন। তাছাড়া দিন দিন ফসলি জমি কমে আসছে, কমছে সবুজ প্রকৃতি। বাড়ছে নগরায়ণ। প্রকৃতিতে উষ্ণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ছাদ কৃষি বাড়ির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবারে বিষমুক্ত সবজির জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। কেউ ছাদ বাগান করতে আগ্রহী হলে তিনি ও তার স্ত্রী পরামর্শ দেবেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি দপ্তরের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা ব্লক এর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লোকন বিশ্বাস বলেন, ‘যিনি ছাদ বাগান করেছেন তিনি একজন ডিপ্লোমা কৃষিবিদ, উনার বেশ অভিজ্ঞতা রয়েছে ছাদ কৃষিতে। বাগানটি একদিন গিয়ে দেখে আসব। তাছাড়া কৃষি কার্যালয় থেকে কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে অবশ্যই দেয়া হবে’।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, ছাদ বাগান হচ্ছে নিজের শখের সব ধরনের ইচ্ছেগুলো বাস্তবায়ন করা। ছাদ বাগান শরীর-মন দুটোই সতেজ রাখে। বাইরের কৃত্রিমতা থেকে নিজেকে পুষ্টি সম্মত সবজি-ফল উপহার দেয় ছাদ বাগান।
