এম. সাইফুল্লাহ চৌধুরী, লোহাগাড়া
লোহাগাড়ায় কীটনাশকমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন কৃষকরা। পরিবেশ দূষণমুক্ত রেখে এবং ক্ষতিকর পোকা ও রোগ-বালাইমুক্ত উৎপাদিত এসব সবজির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে নিরাপদ সবজি চাষেও উদ্বুদ্ধ করছে কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত শাকসবজি ও ফলমূলে ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার ও খনিজ পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে তা ক্যান্সার, হৃদরোগে ও ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের ঝুঁকি করায়। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি ও ফলমূল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশবান্ধব কৃষি কেবলমাত্র পরিবেশ সংরক্ষণ নয়, বরং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করে। এ ধরনের কৃষি পদ্ধতির প্রসার কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, যা কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিক সাফল্য ও সমাজের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য সরবরাহ করবে। উন্নত বীজ, সঠিক পরিচর্যা ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের মাটিতেই নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যেতে পারে। তাই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চুনতি ইউনিয়নে কাইছার খান ছিদ্দিকী ৪০ শতক, পদুয়া ইউনিয়নে মো. জিয়াবুল ৮০ শতক, জাফর আলম ৪০ শতক, মো. জাবেদ ৮০ শতক, মো. মোরশেদ ৪০ শতক, মো. মিনহাজ ৪০ শতক, কামরুল হাসান আজমীরি ১০০ শতক ও কাঞ্চন ৪০ শতক জমিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করেছেন। উৎপাদিত সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, বরবটি, শশা, তিত করলা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শিম, ঝিঙা, লাল শাক, মরিচ, বরবটি ও ঢেরসসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি।
চুনতি শাহ ছাহেব গেট সংলগ্ন এলাকায় বিষমুক্ত সবজি ক্ষেতে সরেজমিন দেখা যায়, বিস্তৃত জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির বিষমুক্ত সবজি চাষ করা হয়েছে। অনেক সবজি গাছে ফলন হয়েছে। আবার অনেক সবজি গাছ এখনও ছোট। ক্ষেতের ভেতরে ইয়েলো স্টিকি ফাঁদে ক্ষতিকর পোকামাকড় আটকা পড়া অবস্থায় দেখা গেছে। কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে উৎপাদিত এসব সবজি নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারজাতও করেন বলেও জানা গেছে।
বিষযুক্ত সবজি চাষীরা জানান, ক্ষেতে পোকা দমনে ব্যবহার করছেন হলুদ, নীল পাত্র, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, ইয়েলো স্টিকি ফাঁদ ইত্যাদি। ফাঁদের কোনোটিতে মবিলসহ পানি দিয়ে রাখা হয়। যেখানে পড়ে মারা যায় পোকা। ফেরোমন ফাঁদে পোকার নিঃসৃত গন্ধকে কৃত্রিমভাবে বোতলে রাখা হয়, যাকে বলে লিউর। এ গন্ধে আকর্ষিত হয়ে পুরুষ পোকা এসে ফাঁদে থাকা পানিতে পড়ে মারা যায়। পুরুষ পোকার মৃত্যুর মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি রোধ করা হয়। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষকদের আগ্রহী করতে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ ধরনের ফাঁদের সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা।
সবজি চাষী কাইছার খান ছিদ্দিকী জানান, আগে আমরাও কীটনাশক দিয়ে সবজি উৎপাদন করতাম। ওইসব সবজি পরিবারের সবাই মিলে খেতাম। পরে জানতে পারি ওই সবজির মাধ্যমে আমরাও বিষ খাচ্ছি। তাই এখন বিষমুক্ত সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করতে আমরা পদ্ধপরিকর। তাই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছি। বাজারে বিষমুক্ত সবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সারের বদলে জৈবসার ও কীটনাশকের পরিবর্তে সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি অনুসরণ করছি। এ পদ্ধতিতে ফলন কিছুটা কম হলেও উৎপাদিত সবজি তুলনামূলক বেশি দামে বিক্রি হয়। তাই এ পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন চাষিরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, কীটনাশক-রাসায়নিক সার ব্যবহারে উৎপাদিত সবজি খেয়ে মানবদেহে বিভিন্ন প্রকার রোগ-বালাই সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ, প্রকৃতির উপকারী পোকা-মাকড় ধ্বংস হওয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকরা সাময়িক লাভবান হলেও সেটিতে মারাত্মকভাবে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কাজী শফিউল ইসলাম জানান, বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন একটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। এজন্য সবজি উৎপাদন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে কৃষি বিভাগ। সবজি ক্ষেতে পোকা দমনে যেসব কীটনাশক ব্যবহার হয়, তা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ কারণে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান্ধব সবজি চাষে পরামর্শ দিয়ে আসছি।