লোক দেখানো মর্যাদা প্রতিযোগিতা পরিহার করা জরুরি

1

মোঃ আসিফ ইকবাল

মানুষ স্বভাবজাতভাবেই মর্যাদাকে গুরুত্ব দেয়,মর্যাদাকে ভালোবাসে। নিজের আত্নসম্মানবোধটা সকল মানুষের মাঝে কমবেশি বিরাজমান থাকে। আর এ মর্যাদার লড়াইয়েই মুলত আমাদের সামগ্রিক ভাবনা।আমরা সবসময় নিজেকে অন্যের থেকে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন করে তুলতে ভালোবাসি বা পছন্দ করি। আর এ মর্যাদাবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলত৷ আমরা নিজেকে একটি অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ করে তুলি। নিজেদেরকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বা নামী দামী মানুষে পরিণত করার একটা ব্যস্ত প্রতিযোগিতায় নিজেকে সপে দিই। আমরা মুলত আত্নজয়ের আনন্দ ভুলে গিয়ে নিজেদেরকে অন্যের দৃষ্টিতে সফল,সুখী ও সার্থক মানুষে পরিণত করার একটা অভ্যাসে বিন্যস্ত করি। আর এই লোক দেখানো মর্যাদার জন্য আমাদেরকে নানাধরণের চলচাতুরি বা মিথ্যার আশ্রয় নিতেও আমরারক কার্পন্যবোধ করিনা। মর্যাদা কখনো কেনা পাওয়া যায়না। সেটা আমরা প্রত্যেকে কমবেশি বুঝেও তা মানতে নারাজ। মর্যাদা বা সম্মান মানুষকে অর্জন করতে হয় এটাই আমরা অনেকে ভুলে যেতে বসি।কোন মর্যাদায় আপনাআপনি প্রতিষ্ঠা পায়না।মর্যাদাবান হওয়ার জন্য আমাদেরকে স্বীয় কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা,সততা ও বিশ্বাসের অধিকারী হতে হয়। একজন মর্যাদাবান মানুষের মুল যোগ্যতা তার সুশিক্ষা, ভদ্রতা, নিয়মানুবর্তিতা, সদালাপ, সততা ও আদর্শ জীবন বোধ। অর্থের মাপকাঠি দিয়ে যে মর্যাদা আমরা প্রতিষ্ঠার নিরন্তর সংগ্রাম করি তা ক্ষণিক সময়ের জন্যই। আর এ ক্ষণিকের মর্যাদাকেই আমরা জীবনে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যা আমাদের জন্য একটা ভুল ধারণা। অর্ধবৃত্ত দিয়ে প্রকৃত মর্যাদাবান লোক হওয়া কখনো সম্ভব না। অর্থ দিয়ে পৃথিবীর প্রায় জিনিস ক্রয় করা সম্ভব হলেও মানুষের মন জয় করা সম্ভব না। আর মর্যাদা অন্তনির্হিত থাকে মানুষের আচরণে,ব্যক্তিত্বে। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষকে কখনো অন্যের সমালোচনা বা অন্যের জীবনের হিসেবে কষে জীবনের মুল্যবান সময় নষ্ট করেনা। আতœমর্যাদাবান মানুষ নিজের উপর আত্নবিশ্বাস ও বিবেকের রায়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পৃথিবীতে আমরা বেশিরভাগ অন্যকে দেখাতে চাই আমি অনেক সুখে আছি মুলত এ ধারণাটি অনেকাংশে ভুল। কেননা আত্নউপলব্ধিই জানে আমরা কে সুখী কে দুঃখী।আমরা নিজেদের মনোজগতের চেয়েও মানুষের আত্মসমালোচনায় আমাদের মুল্যবান সময়গুলো ব্যয় করে দিই। আত্মমর্যাদা আমাদের নিজদের কর্মের মধ্যেই অন্তর্নিহিত।নিজের স্বীয় কর্মের মহতি গুণাবলী পারে আমাদের আতœমর্যাদার অধিকারী মানুষে পরিণত করতে। মানবিক হিসেবে নিজকে গড়ে তুলতে পারায় জীবনের পরম সার্থকতা। এখানে অর্জন, প্রাপ্তি বা প্রতিষ্ঠা অন্যকে দেখানোর জন্য না, আতœসন্তুষ্টিই পারে আতœমর্যাদার প্রকৃত সম্মান দিতে। মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিপুর্ণ জ্ঞানের অধিকারী ভাবা কখনো সম্ভব নয়। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বরং মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে পারায় শিক্ষার মুল সফলতা নিজেকে আতœজয়ী মানুষ হিসেবে দৃঢ মনোভাব সৃষ্টি করতে না পারলে আমরা কখনোই প্রকৃত সাফল্যের স্বাদ আহরণ করতে পারব না। অন্যকে নয় নিজেকে একটি গন্ডি বা বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা যাবেনা। আমাদের স্বপ্ন যেন কাউকে খুশি করাতে সীমাবদ্ধ না থাকে। আমাদের নিজেদের মনের প্রশান্তি কিংবা মানসিক স্বস্তির জন্যই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেমে পড়তে হবে। মনে রাখতে হবে স্বপ্ন কখনো ছোট বা বড় নয়। সব স্বপ্নই সমান আনন্দের মত। কেননা প্রতিটি স্বপ্ন জুড়েই মানুষ অনেক অনেক সময় অপেক্ষামান করে। অন্যকে কাছে নিজের মর্যাদা বা সম্মান প্রতিষ্ঠা করার হীন প্রতিযোগিতা আমাদেরকে যান্ত্রিক করে তোলে।আমাদের মন মানসিকতা একটা অসম বৃত্তে ঘুরতে থাকে।এই হীন প্রতিযোগিতা থেকে বের হতে না পারলে আমাদের চিন্তার বিকাশ সুবিস্তৃত হওয়া কখনো সম্ভব না। আমরা আমাদের চিন্তা, মননের জগতকে এ সমস্ত হীন প্রতিযোগিতার কারণে বাধাগ্রস্থ করে রাখি।আমাদের বিশাল ভাবনা ও মননের জগতকে আরো বেশি সুদূরপ্রসারী করে রাখতে চাই আরো বেশি সুগভীর চিন্তা ও সৃজনশীল চর্চার বিকাশ। আমরা চাইলে সহজেই অন্যকে খুশি বা আনন্দিত করার সুযোগ কম।কেননা আমরা মানুষ হিসেবে বেশিরভাগই বড়মনের পরিচয় থুব কমই দিতে পারে। আমাদের মাঝে বেশি আত্মকেন্দ্রিকতা কাজ করে।স্বার্থপরতা থেকে আমরা সহজে বের হতে পারিনা। নিজের স্বার্থ খুঁজতে খুঁজতে আমরা অনেক বেশি নিজেকে ব্যস্ত রাখি। আর এই ব্যস্ততা আমাদেরকে একসময় যান্ত্রিকময় জীবন দানে সক্ষম হয়। তাই একজন পরিপুর্ণ ও পরিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই নিজের মনকে মননশীল ও সৃজনশীল চর্চায় রুপান্তর করে।যাতে করে আমরা সমস্ত লোকদেখানো অসম প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে একটি বাস্তবিক সুন্দর, স্বাভাবিক মায়াময় জীবনের অধিকারী হতে। মনে রাখতে আমাদের সবার আগে দরকার নিজেকে মনুষ্যত্বসম্পন্ন দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। সামাজিক মর্যাদা বা মানুষের কাছে প্রশংসিত হওয়ার চেয়েও বেশি নিজের বিবেকের কাছে নিজেকে পরিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকা।আমরা কমবেশি সকলেই কিছু না কিছু আত্নঅহংকারে ভোগতে থাকি। এই আত্নঅহংকারের জায়গা থেকে আমাদেরকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসার প্রবণতা তৈরি করতে হবে। আর এইখানে সফল হলেই আমরা মানবিক মানুষে পরিণত হতে পারব। মনে রাখতে হবে কোন অহংকার কখনোই আমাদের জীবনে কল্যাণ সাধন বহে আনতে পারে।কম অহংকার বা নিরহংকারী মানুষই মনের দিকে বেশি বেশি সুখী প্রকৃতির হয়ে থাকে। লোকদেখানো কোন কাজ বা কোন অহংকার বা কোন সম্মান বা কোন মর্যাদা আমাদের ব্যক্তিজীবনকে দীর্ঘস্থায়ী আনন্দ দিতে পারেনা। এটা মুলত সীমিত সময় বা ক্ষণিকের কিছু মোহজনিত আনন্দমাত্র। যা জীবনকে একটি অসম বা হীন প্রতিযোগিতায় পরিণত করতে উৎসাহ করে।আসুন মনের সকল হীনমন্যতা দুর করে আমরা আত্নজয়ী বিবেকবান মনুষ্যসম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজের মননশীলতা আরোবেশি সুদুর প্রসারি করে নিজের ও সমাজের কল্যাণকামীতা সৃষ্টি করি।

লেখক : কবি,সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক