নিজস্ব প্রতিবেদক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগরীর বিভিন্ন থানায় হামলা ও লুটতরাজ চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় কয়েকটি থানায় আগুন দেয়ার পাশাপাশি অস্ত্রাগার থেকে লুট হয় পুলিশের ব্যবহৃত পাঁচ শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। কয়েক দফা আহবান জানানোর পরেও লুণ্ঠিত অস্ত্রগুলো থানায় জমা পড়েনি। কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হলেও দুই শতাধিক অস্ত্রের এখনও হদিস মিলেনি। লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ।
সিএমপি সূত্র জানায়, ঘটনার দিন গত ৫ আগস্ট থানার পাশাপাশি হামলার ঘটনা ঘটেছিল পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক বক্সসহ পুলিশের ২৯টি স্থাপনায়। একই সঙ্গে থানা কম্পাউন্ডে থাকা বিভিন্ন ধরনের ৪৫টি যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে থানাগুলো। আক্রমণ চলাকালে বিভিন্ন থানা থেকে পাঁচশ’টি অস্ত্র এবং ১২ হাজারের মতো গোলাবারুদ লুট হয়। এখনও উদ্ধার হয়নি দুইশ’ ২০টির মতো অস্ত্র। অস্ত্র-গুলি এবং যানবাহন ছাড়াও থানা ভবনের অবকাঠামো পুড়ে অন্তত ২১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে থানাগুলোর কার্যক্রম শুরু হলেও আসবাবপত্রসহ সংকটের পাশাপাশি রয়েছে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংকট। বিপর্যয় কাটিয়ে পুরোদমে স্বাভাবিক অবস্থায় সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, সিএমপির থানা এবং পুলিশ ফাঁড়িগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। আসবাবপত্র ও যানবাহনসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলমান আছে। থানাগুলো ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি পাঁচশ’টি অস্ত্র ও ১২ হাজারের বেশি গুলি লুট হয়। এখনও দুই শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের হদিস মিলেনি। অবশ্য এরইমধ্যে র্যাবের অভিযানে থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া ৪০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এবং তিন শতাধিক রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করে সিএমপিতে জমা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের লুটকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ কারো কাছে থাকলে আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিকটস্থ থানায় জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। অন্যথায় কারও কাছে এ ধরনের অস্ত্র পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন থানা বা ইউনিট অথবা ডিউটিস্থল থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের লুট হওয়া কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। লুণ্ঠিত অবশিষ্ট অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে লুট হওয়া তিন হাজার তিনশ’ চারটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর জানান, চট্টগ্রামসহ সারাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের তিন হাজার তিনশ’ চারটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দুই লাখ ৫০ হাজার নয়শ’ ৭৪ রাউন্ড গুলি, ২১ হাজার তিনশ’ ৯৫ টিয়ারশেল এবং এক হাজার নয়শ’ ৩৯ টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র কারও হেফাজতে থাকলে তা আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নিকটস্থ থানায় জমা দিতে হবে। এরপরও সব অস্ত্র উদ্ধার না হলে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানে কারও কাছে পুলিশের অস্ত্র পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আাইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।